Advertisement
E-Paper

‘আমি স্তম্ভিত!’ হামলা নিয়ে মুখ খুললেন রেখা, আপের হাত দেখছে বিজেপি, কী ঘটেছিল? কী বললেন প্রত্যক্ষদর্শীরা

সকালের হামলা নিয়ে সন্ধ্যায় মুখ খুললেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত। জানিয়েছেন, তিনি সুস্থ আছেন। তবে ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি স্তম্ভিত। বিজেপির তরফে আপের দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৫ ২২:৩১
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত। —ফাইল চিত্র।

হামলার ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত। বুধবার সকালে তাঁর বাসভবনে ঢুকে এক যুবক তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। রেখাকে থাপ্পড়ও মারা হয়। জখম মুখ্যমন্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে চোট তেমন গুরুতর ছিল না। সন্ধ্যায় রেখা নিজেই জানালেন, তিনি ভাল আছেন। তবে গোটা ঘটনায় তিনি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন। খুব শীঘ্র কাজে ফিরবেন বলেও জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লি বিজেপির তরফে এই ঘটনায় আম আদমি পার্টির দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। এমনকি, গুজরাতের এক আপ বিধায়কের সঙ্গে হামলাকারী যুবকের ছবিও পোস্ট করেছে বিজেপি। আপের তরফে সেই দাবি অস্বীকার করা হয়েছে।

সন্ধ্যায় সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে রেখা বলেন, ‘‘এই হামলা শুধু আমার উপর নয়, বরং দিল্লির মানুষের সেবা ও কল্যাণের বিরুদ্ধে এটা একটা কাপুরুষোচিত প্রয়াস। স্বাভাবিক ভাবেই এমন হামলার পর আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। এখন ভাল আছি। আমার সকল শুভাকাঙ্ক্ষীকে অনুরোধ, কষ্ট করে এখানে এসে আমার সঙ্গে দেখা করতে হবে না। শীঘ্রই আমি কাজে ফিরব।’’ হামলার পর দ্বিগুণ উদ্যমে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন রেখা। তাঁর কথায়, ‘‘এই ধরনের হামলা আমার মনোবল ভাঙতে পারবে না। এখন আমি আরও উদ্যমে মানুষের জন্য কাজ করব। মানুষের কথা শুনব আগে যেমন শুনছিলাম। আপনাদের বিশ্বাস ও সমর্থন আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।’’

রেখা কোনও দলের নাম না করলেও বিজেপির তরফে আপকে দায়ী করা হয়েছে। অভিযুক্তের নাম রাজেশভাই খিমজিভাই সাকারিয়া। ৪১ বছরের ওই যুবক রাজকোটের বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করেছে দিল্লি পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সাকারিয়ার সঙ্গে গুজরাতের আপ বিধায়ক গোপাল ইটালিয়ার ছবি পোস্ট করেছেন বিজেপি বিধায়ক হরিশ খুরানা। লিখেছেন, ‘‘যা সন্দেহ করা হয়েছিল, তা-ই ঘটল। অরবিন্দ কেজরীওয়ালের খাস লোক গোপাল ইটালিয়ার এই ছবি অনেক কথা বলছে। রেখাজির উপর হামলার সঙ্গে আপ জড়িত।’’ কেজরীওয়ালের কাছে জবাবদিহিও দাবি করেছেন তিনি। ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি বলে দাবি করেছে আপ। গুজরাত আপের মুখপাত্র কর্ণ বরোট বলেন, ‘‘এই ছবিটি ভুয়ো। আপের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার জন্য এআই ব্যবহার করে এই ছবি তৈরি করা হয়েছে।’’

কী বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা

সকালে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে ‘জনশুনানি’ (পাবলিক হিয়ারিং) হয়। সেখানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের অভাব-অভিযোগের কথা শোনেন রেখা। বুধবারও তেমনই জনশুনানি চলছিল। শৈলেন্দ্র কুমার নামের এক জন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘নিকাশি ব্যবস্থা সংক্রান্ত একটি অভিযোগ নিয়ে আমি উত্তমনগর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। পৌঁছেই গোলমাল শুনতে পাই। শুনলাম, মুখ্যমন্ত্রীকে থাপ্পড় মারা হয়েছে। এটা ঠিক নয়।’’ অঞ্জলি নামের আরও এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে থাপ্পড় মারা খুব গুরুতর বিষয়। লোকটা কথা বলছিল, আচমকা থাপ্পড় মারল। পুলিশ ওকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল।’’ রেখার চুলের মুঠি ধরে টানা হয়েছিল বলেও কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে।

বিজেপির বিবৃতি

দিল্লি বিজেপির মুখপাত্র প্রবীণ শঙ্কর কপূর বলেন, ‘‘এক যুবক মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি কিছু কাগজ দেন। এর পর বচসা হয় এবং যুবক আক্রমণের চেষ্টা করেন। এটা মরিয়া হয়ে ওঠা কোনও দলের কাজ হতে পারে। পরে আপ বিধায়কের সঙ্গে হামলাকারীর ছবি প্রকাশ করে ঘটনার নেপথ্যে আপের যোগ আছে বলে দাবি করে বিজেপি। প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ রমেশ বিদুরির দাবি, রেখার জনসংযোগ ব্যর্থ করার চক্রান্ত এই হামলা। তদন্ত হলে এর সঙ্গে কংগ্রেস, আপ বা সিপিআইয়ের যোগ পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি।

আপের বিবৃতি

দিল্লির বিরোধী দলনেত্রী আপের অতিশী বলেন, ‘‘রেখা গুপ্তের উপর এই হামলা নিন্দাজনক। গণতন্ত্রে ভিন্নমত পোষণের এবং প্রতিবাদের জায়গা আছে। কিন্তু হিংসার কোনও জায়গা নেই। আশা করছি, দিল্লি পুলিশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করবে। আশা রাখছি, মুখ্যমন্ত্রী সুরক্ষিত।’’

কী বলল কংগ্রেস

দিল্লির কংগ্রেস মুখপাত্র দেবেন্দ্র যাদব বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। রেখাজি সমগ্র দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। এই ধরনের ঘটনার জন্য কোনও নিন্দাই যথেষ্ট নয়। মহিলাদের নিরাপত্তার কী অবস্থা, এই ঘটনা তা প্রকট করে দিল। যদি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীই নিরাপদ না হন, তবে সাধারণ মানুষ কী ভাবে সুরক্ষিত বোধ করবেন?’’

কী বললেন ধৃতের মা

অভিযুক্ত যুবক রাজকোটে রিকশা চালান। রাজকোট পুলিশ তাঁর বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে তাঁর মা আছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর পুত্র পশুপ্রেমী। দিল্লির কুকুরদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর থেকে তিনি হতাশ ছিলেন। সেই কারণেই যুবক দিল্লি গিয়েছিলেন বলে মায়ের দাবি। তবে এর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর উপর হামলার কোনও যোগ আছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। পুত্র মানসিক ভাবে অসুস্থ বলেও দাবি করেছেন তাঁর মা। জানিয়েছেন, তাঁকেও মারধর করতেন যুবক। যে কারণে বেশ কিছু দিন তাঁকে বাড়িছাড়া হয়ে থাকতে হয়েছিল। এই দাবিগুলি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

কী বলল পুলিশ

ধৃতের বিরুদ্ধে আগেও পুলিশের খাতায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই আধিকারিকদের উল্লেখ করে জানিয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনে ভয়ানক অস্ত্র দিয়ে আঘাত, শান্তি বিঘ্নিত করার জন্য ইচ্ছাকৃত অপমান প্রভৃতি অভিযোগের জন্য সংশ্লিষ্ট ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছিল। বেআইনি মদ নিজের কাছে রাখার অভিযোগও উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। বুধবারের ঘটনার পর দিল্লির সিভিল লাইন্‌স থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে রাজকোট থেকে ট্রেনে দিল্লিতে এসেছিলেন তিনি। থাকছিলেন সিভিল লাইন্‌সের গুজরাতি ভবনে। এই প্রথম তিনি দিল্লিতে এসেছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

আর কী জানা গেল

সরকারি বাসভবনে ঢুকে হামলা চালানোর আগে শালিমার বাগে রেখার পুরনো বাড়িতে রেকি করেছিলেন অভিযুক্ত। মুখ্যমন্ত্রীর পুরনো বাড়ির সামনে অভিযুক্তকে দেখা যাচ্ছে, তিন মিনিট আট সেকেন্ডের এমনই একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে এসেছে। সেটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম। ফুটেজে দেখা গিয়েছে, একটি রিকশা নামছেন যুবক। তার পর কাউকে ফোন করছিলেন। কথা হয়ে যাওয়ার পর ফোনে কিছু একটা দেখছিলেন। পুলিশের সন্দেহ, ওই এলাকার ভিডিয়োও করেন যুবক। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে থাকা এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতেও দেখা যায় তাঁকে। অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দিল্লি পুলিশ।

Rekha Gupta Delhi CM Delhi Police Gujarat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy