ফাইল চিত্র।
ইনকাম ট্যাক্স গোলম্বর থেকে বোরিং রোড, ভোরের আলো ফোটার আগেই ঢেকে গেল পেল্লাই সাইজের হোর্ডিংয়ে—‘নীতীশ কুমার আপকো সালাম।’ কোথাও লেখা—‘হামারা দল জেডিইউ, আ পলিটিক্স উইথ ডিফারেন্স’। কোনও হোর্ডিংয়ে লেখা, ‘নীতির সঙ্গে সমঝোতা আমাদের দল করে না।’
পটনার মানুষও কি তেমনটাই ভাবছেন! নাকি অন্য কথা বলছেন?
গাড়ির চালক বিনোদ কুমারের কথাই ধরা যাক। তাঁর কথায়,নীতীশ লালুজির সঙ্গে এলেনই বা কেন, আর চলেই বা গেলেন কেন! আবার অফিসযাত্রী রোশন সিংহের নীতীশ কুমারের প্রতি আস্থা আছে। কিন্তু এ ভাবে ঘন ঘন বন্ধু পাল্টে নীতীশ কতটা কী করতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন রোশন।
রাতারাতি, মাত্র ১৫ ঘণ্টার ব্যবধানে বিহার রাজনীতির এমন ‘ডিগবাজি’-তে পটনা খানিকটা বিহ্বলই। জেডিইউয়ের এক বিধায়ক যেমন বলছিলেন, ‘‘আগে থেকে লেখা চিত্রনাট্য ছাড়া এমন হতে পারে না।’’ তাঁর কথায়: রাতে মুখ্যমন্ত্রী-নিবাসে যাওয়ার পরে তিনি বললেন, আপনারা রাতের খাবার খেয়ে নিন। এখনই বিজেপি বিধায়করা আসবেন। তাঁদের জন্য খাবার আর আসন তখন প্রস্তুত। ওই বিধায়কের প্রশ্ন,
‘‘আগে থেকে জানা না থাকলে এমন প্রস্তুতি সম্ভব!’’
সন্ধ্যায় নীতীশ পদত্যাগ করলেন, সঙ্গে সঙ্গে বড় বড় ফেস্টুন তৈরি হয়ে গেল! তা-ই বা কী করে সম্ভব! চিত্রনাট্যের সেই সম্ভাবনাকে উস্কে দিলেন বিজেপি-র প্রবীণ নেতা নন্দকিশোর যাদব। ১ অ্যানে
মার্গে ঢুকেই নীতীশ কুমারের দিকে হাত বাড়ালেন, ‘‘হাম আপকে
আশিক হ্যায়, সদিও পুরানে। চাহে আপ মানে ইয়া, না মানে।’’ অর্থাৎ পুরনো প্রেম!
কিন্তু তার চেয়েও বড় প্রশ্ন যেটা উঁকি দিচ্ছে, কেন এমন করলেন নীতীশ? আর এই প্রশ্নের উত্তর দিতেই দিনভর লড়ে গেল সদ্য শাসক এবং বিরোধী শিবির।
এমনিতে পটনার বীরচন্দ পটেল পথ-এর পরিচিত ‘রাজনীতির পথ’ হিসেবেই। ওখানেই একে-একে বিজেপি, আরজেডি, জেডিইউয়ের রাজ্য সদর দফতর। সকাল থেকেই ওখানে জটলা। কেউ বিধায়ক,
কেউ বা নিতান্তই সমর্থক। তার
মধ্যেই আরজেডি নেতারা ব্যাখ্যা দিতে শুরু করলেন। আরজেডি নেতাদের কথায়, নীতীশ আসলে সঙ্ঘ পরিবারেরই বন্ধু। ক্ষমতায় আসতে লালুজির সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিলেন। সুযোগ বুঝে আবার বিজেপির দিকে ঢলে পড়েছেন। কেউ উষ্মা প্রকাশ করছেন, নীতীশজি জনতাকে সম্মান দিলেন না!
আরজেডি দফতর থেকে কয়েক পা এগিয়ে বিজেপি দফতর। সেখানে সদ্য উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়া সুশীল কুমার মোদী। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘দুর্নীতি করার জন্য জনতা নীতীশ কুমারকে ভোট দিয়েছিল? ঠিকই করেছেন নীতীশ। দুর্নীতির সঙ্গে আপস করেননি।’’
গত রাত থেকেই বিহার জুড়ে বিক্ষোভে নেমেছে আরজেডি সমর্থকরা। কোথাও কোথাও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। সারন জেলায় আরজেডি সমর্থকরা
হেনস্থা করেছেন খোদ জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে। টানা চার
ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে রইল উত্তর বিহারের সঙ্গে একমাত্র সংযোগকারী, পটনার গাঁধী সেতু। তেজস্বী
যাদবের বিধানসভা কেন্দ্র বৈশালীর বিধুপুর বাজারে লাঠি নিয়ে
তাণ্ডব চালাল আরজেডি সমর্থকরা। একই ঘটনা সমস্তিপুরের যাদব-বলয়েও।
সব দেখেশুনে জেডিইউয়ের এক শীর্ষ নেতার সহাস্য মন্তব্য, ‘‘আসলে দুর্নীতি-টুর্নীতি বাজে কথা। যাদবদের এই লাঠিকেই ভয় পাচ্ছিলেন নীতীশ কুমার।’’ তাঁর মতে, নীতীশের গা থেকে সুশাসনের তকমাটা আস্তে আস্তে খসে পড়ছিল এই লাঠির ঘায়ে। তাই আরজেডির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা ছাড়া নীতীশের সামনে অন্য
পথ ছিল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy