Advertisement
E-Paper

ওয়েনাড়ে কেন নামল ধস, নেপথ্যে কী কী কারণ? কী বলছেন বিশেষজ্ঞ?

ইসরোর ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার-এর প্রকাশিত গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের যে ৩০টি সবচেয়ে ধসপ্রবণ এলাকা রয়েছে, তার মধ্যে কেরলে রয়েছে ১০টি।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৪ ১৪:১৩
ওয়েনাড়ে ধসের ধ্বংসলীলা। ছবি: এএফপি।

ওয়েনাড়ে ধসের ধ্বংসলীলা। ছবি: এএফপি।

৩০ জুলাই। পাহাড়ের ধস নেমে এসেছিল ওয়েনাড়ের ভেলারিমালায়। সেই ধসে মেপ্পাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মুন্ডাক্কাই এবং চূড়ালমালা গ্রামের পুরোটাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। কেন এই ধস নামল ‘দ্য নিউজ় মিনিট’কে বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন রিসোর্সেস অ্যানালিসিস ডিভিশন অফ দ্য ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্থ সায়েন্সেস (এনসিইএসএস)-এর প্রাক্তন বিজ্ঞানী কে সোমন। তাঁর মতে, এই ধসের নেপথ্যে রয়েছে ভূতাত্ত্বিক কারণ এবং পাহাড়ি জমি ব্যবহারের ধরন।

সোমনের মতে, এই ধসের নেপথ্যে কাজ করেছে পাহাড়র ঢাল, মাটির ঘনত্ব, মাটি এবং পাথরের প্রকৃতি। আর তার সঙ্গে অবশ্যই ভারী বৃষ্টি। এ ছাড়াও মাটির ধরন, পাথরের গঠনও অনেক সময় ধসের অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে। ধসের আরও একটি কারণ হতে পারে মাটির নীচের অংশ ফাঁপা হয়ে যাওয়া। তবে এ ধরনের ধস সাধারণত পশ্চিমঘাটে দেখা যায় না। তা হলে? সোমনের মতে, ওয়েনাড়ের যে ধস, তার নেপথ্যে রয়েছে পাথরের ফাটল। ভেলারিমালায় যে ধস নেমে এসেছে, সেটি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, দু’টি উঁচু ভাগের মাঝের অংশ ধসে নীচে নেমে এসেছে। যেটিকে ভূগোলের পরিভাষায় ‘স্যাডল’ বলে। এই ‘স্যাডল’ মূলত দু’ভাবে হয়। ফাটল অথবা ক্ষয়কাজের কারণে। ক্ষয়কাজ মূলত চুনাপাথরের ক্ষেত্রে হয়। কিন্তু ভেলারিমালার ক্ষেত্রে পাথরের ফাটলই কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সোমনের মতে, ফাটল দিয়ে পাথরে জল ঢুকতে ঢুকতে যখন ধারণক্ষমতার চরম সীমায় পৌঁছয়, তখনই পাথরের ফাটল আরও চওড়া হয়ে আলগা হয়ে যায়। আর সেই পাথর হুড়মুড়িয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসে। ভেলারিমালায় অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টির জেরে পাথরের ফাটলের জল চরম সীমায় পৌঁছতেই আলগা হয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসে। তা ছাড়া উচ্চতাও এই ক্ষয়ক্ষতিকে আরও বাড়িয়েছে। ভেলারিমালা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ মিটার উপরে। এখানেই ধসের উৎপত্তি। অন্য দিকে, চূড়ালমালা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০০ মিটার এবং মুন্ডাক্কাই ৯০০ মিটার উঁচুতে। ফলে ভেলারিমালা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে অল্প সময়ের মধ্যে সেই ধস ১০০০ মিটার নীচে নেমে আসে। ফলে অল্প দূরত্বে এত দ্রুত গতির সঙ্গে সেই ধস নেমেছিল যে, সামনে যা পেয়েছে সব নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।

সোমনের মতে, এর আগেও ১৯৮৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মুন্ডাক্কাই এবং চূড়ালমালায় বেশ কয়েক বার ছোটখাটো ধস নেমেছিল। এই এলাকা ধসপ্রবণ হওয়া সত্ত্বেও বসতি গড়ে তুলতে অনুমতি কেন দেওয়া হয়েছিল, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। শুধু ভূতাত্ত্বিক কারণই নয়, যথেচ্ছ ভাবে গাছ কাটা, পাহাড় কেটে চাষের কাজ করা, হ্রদ এবং জলাভূমিগুলিকে ভরাট করে দেওয়াও এই ধ্বংসলীলার অন্যতম নেপথ্য কারণ বলেও মনে করা হচ্ছে।

পাহাড় থেকে ইরুভাজিনঝি নদী হয়ে ধস নীচের দিকে নেমে আসে। ১৮০০ মিটার উচ্চতা থেকে এই নদী নীচের দিকে নেমে এসেছে। সেই নদীর পথ ধরেই মুন্ডাক্কাই, চূড়ালমালা, আত্তামালা এবং নুলপুঝায় তাণ্ডব চালায় ধস। তার পর চালিয়ার নদী ধরে আরও কয়েক কিলোমিটার এগিয়ে যায়।

ইসরোর ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার-এর প্রকাশিত গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের যে ৩০টি সবচেয়ে ধসপ্রবণ এলাকা রয়েছে, তার মধ্যে কেরলে রয়েছে ১০টি। আর দেশের ধসপ্রবণ এলাকার তালিকায় ১৩ নম্বরে রয়েছে ওয়েনাড়। ২০২১ সালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, কেরলে ধসের হটস্পট হল ইদ্দুকি, এর্নাকুলাম, কোট্টায়াম, ওয়েনাড়, কোঝিকোড় এবং মলপ্পুরম জেলা। দেখা গিয়েছে, কেরলে ৫৯ শতাংশ ধস নেমেছে কৃষিক্ষেত্র এলাকায়। ২০২২ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, ১৯৫০-২০১৮ সালের মধ্যে ওয়েনাড়ে পাহাড়ি বনভূমি ৬২ শতাংশ উধাও। সেই জায়গায় ১৮০০ শতাংশ বেড়েছে চাষের কাজ। অর্থাৎ, বন কেটে চাষের কাজ করা হচ্ছে রমরমিয়ে।

Wayanad Landslide Kerala Landslide
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy