দীর্ঘ টানাপড়েনের পর ভারত এবং পাকিস্তান অবশেষে সংঘর্ষ থামাতে রাজি হয়েছে। শনিবার বিকেল ৫টা থেকে চালু হয়েছে সংঘর্ষবিরতি। ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী জানান, ১২ মে, সোমবার দুই দেশ আবার আলোচনায় বসবে। আপাতত সংঘর্ষ থামলেও বিরোধের নিষ্পত্তি হয়নি। পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে যে পদক্ষেপগুলি ভারত করেছিল, তা এখনও বহাল আছে। ফলে সংঘাতের আবহ আবার তৈরি হতে পারে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স চারটি সরকারি সূত্র উল্লেখ করে জানিয়েছে, এখনও সিন্ধু চুক্তি স্থগিতই আছে। যদিও ভারত বা পাকিস্তান কোনও সরকারের তরফে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও মন্তব্য করা হয়নি, পাকিস্তানের জল মন্ত্রকের সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, ‘‘সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে এখনও দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হয়নি। যুদ্ধবিরতির আলোচনার অংশ ছিল না এই চুক্তি।’’ ভারত সরকারের সূত্র ওই সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে, সিন্ধু চুক্তি নিয়ে ভারতের অবস্থানে কোনও পরিবর্তন হয়নি।
আরও পড়ুন:
পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর ভারত সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের পাশাপাশি, পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল করে দিয়েছিল। বন্ধ করা হয়েছিল অটারী সীমান্ত। দুই দেশের দূতাবাসে কর্মীসংখ্যাও কমিয়ে দেওয়া হয়। পাল্টা পাকিস্তান বন্ধ করে দেয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্য। বন্ধ করা হয় আকাশসীমা। সংঘর্ষবিরতির পর এই পারস্পরিক সহযোগিতার ‘কাঁটা’গুলি কী ভাবে কতটা সরানো যায়, সে দিকে নজর রয়েছে সব মহলের। ইতিমধ্যে পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা খুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। তবে ভারত কোনও ঘোষণা করেনি। ভারতের একাধিক বিমানবন্দর এখনও বন্ধ আছে। সংঘর্ষবিরতির পর মঙ্গলবার ভারত এবং পাকিস্তান যে আলোচনায় বসতে চলেছে, সেই টেবিলে উঠতে পারে এই প্রসঙ্গগুলি। মনে করা হচ্ছে, দুই দেশ পারস্পরিক বিরোধগুলি সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করবে ওই বৈঠকে।
১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির জলের বণ্টন কী ভাবে হবে, তা এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী স্থির করা হয়ে থাকে। পশ্চিমবাহিনী তিনটি নদী— সিন্ধু ও তার দুই উপনদী চন্দ্রভাগা এবং বিতস্তার জল যায় পাকিস্তানে। যার উপর দেশটির কৃষিকাজের ৮০ শতাংশ নির্ভরশীল। সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করার পর পাকিস্তানের ওই তিন নদীর জল বাঁধ দিয়ে ভারত বন্ধ করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। পাকিস্তানের মন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, সিন্ধুর জল বন্ধ হলে তা যুদ্ধ হিসাবে দেখা হবে। তার পরেই ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে প্রত্যাঘাত করে ভারত। রবিবার ভারতীয় বায়ুসেনা জানিয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি হলেও ‘অপারেশন সিঁদুর’ এখনও সমাপ্ত হয়নি। কারণ, এটি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের অভিযান।