Advertisement
E-Paper

‘পাঁচ মিনিটেই মারা যাব’! গাড়ির বাইরে বসে পরিবারের এক সদস্য মৃত্যুর অপেক্ষায়, ভিতরে ছ’জনের দেহ, উদ্ধার একটি চিঠিও

প্রবীণের তুতো ভাই সন্দীপ আগরওয়াল জানিয়েছেন, হরিয়ানার হিসার থেকে ১২ বছর আগে পঞ্চকুলায় চলে আসেন প্রবীণ। হিমাচলে লোহার ছাঁটের একটি কারখানা খোলেন। সেই কারখানা বাজেয়াপ্ত করেছিল ব্যাঙ্ক।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৫ ১২:৫৭
এই ব্যক্তিকেই গাড়ির পিছনে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল। তাঁর নাম প্রবীণ মিত্তল। ছবি: সংগৃহীত।

এই ব্যক্তিকেই গাড়ির পিছনে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল। তাঁর নাম প্রবীণ মিত্তল। ছবি: সংগৃহীত।

রাত তখন ১০টা কি সাড়ে ১০টা। সোমবার রাতে অন্য রাজ্যের একটি গাড়িকে তাঁদের এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয়েছিল স্থানীয় এক ব্যক্তির। রাতভ্রমণে বেরিয়ে গাড়িটিকে দেখতে পান তিনি। গাড়িটি দাঁড় করানো ছিল ওই ব্যক্তির গাড়ির ঠিক পিছনেই। গাড়ির বাইরে ঝুলছিল তোয়ালে। ভিতরে কী রয়েছে, তা দেখাও যাচ্ছিল না। ফলে সন্দেহ আরও দৃঢ় হয় ওই ব্যক্তির।

গাড়ির পিছনের দিকে যেতেই নজরে পড়ে এক ব্যক্তিকে। গোলাপি রঙের জামা, খয়েরি রঙের প্যান্ট পরা এক ব্যক্তি ফুটপাথে মাথা ঝুঁকিয়ে গাড়ির একটু আড়ালে বসেছিলেন। কৌতূহলবশত স্থানীয় ওই ব্যক্তি বসে থাকা লোকটিকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘কে আপনি? এখানে কেন বসে রয়েছেন? গাড়িটি কি আপনার?’’ স্থানীয় ওই ব্যক্তির এই সব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে গাড়ির আড়ালে ফুটপাথে বসে থাকা ব্যক্তিটি শুধু বলেন, ‘‘আর পাঁচ মিনিট! তার পরই মরে যাব।’’ লোকটির মুখে এ কথা শুনে আঁতকে ওঠেন স্থানীয় ওই ব্যক্তি। তাঁকে পাল্টা আবার জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘গাড়িতে কী রয়েছে, দেখান। এ ভাবে এখানে গাড়ি পার্ক করেছেন কেন?’’

স্থানীয় ওই ব্যক্তি তাঁর ভাইকে ফোন করে ডাকেন। তাঁর কথায়, ‘‘দ্বিতীয় বার আমাদের প্রশ্ন শুনে ওই ব্যক্তি বলেন, গাড়িতে তাঁর পরিবার রয়েছে। বাগেশ্বরধাম থেকে ফিরছেন। কোনও হোটেল না পেয়ে গাড়িতেই রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর কথা শুনে বলেছিলাম, এ ভাবে এখানে গাড়ি পার্ক করা যাবে না। সামনেই বাজার। ওখানে গাড়ি নিয়ে যান।’’ এ কথা শুনে লোকটি উঠে গাড়ির দরজা খুলতে যান। তাঁকে বাধা দেন স্থানীয় ওই দু’জন। এর পর তাঁরা তোয়ালে সরিয়ে জানলা দিয়ে গাড়ির ভিতরে উঁকি মারতেই আঁতকে ওঠেন। স্থানীয় ওই দু’জনের দাবি, তাঁরা দেখেন, গাড়ির ভিতরে ছ’জনের দেহ।

স্থানীয় ওই দুই ভাইয়ের কথায়, ‘‘আমরা সঙ্গে সঙ্গে লোকটাকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি, ঠিক কী হয়েছে বলুন তো? ওরা কারা? তখন ওই ব্যক্তি জানান, তাঁর নাম প্রবীণ মিত্তল। গাড়ির ভিতরে যাঁদের দেহ রয়েছে, তাঁরা পরিবারেরই সদস্য।’’ এর পরই ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘পাঁচ মিনিটেই মরে যাব আমি।’’’ চোখের সামনে ছ’টি দেহ, আরও এক জন বলছেন, ‘পাঁচ মিনিটেই মরে যাব’। এ রকম পরিস্থিতি দেখে আশপাশের লোকজনকে খবর দেন দুই ভাই। পুলিশ এবং অ্যাম্বুল্যান্সকেও খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। গাড়ির ভিতর থেকে ছ’টি দেহ উদ্ধার করে। গাড়ির বাইরে বসে থাকা ব্যক্তিটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয়। ঘটনাটি হরিয়ানার পঞ্চকুলার। সেখানে সেক্টর ২৭ থেকে একই পরিবারের সাত জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে একটি চিঠিও।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের মধ্যে রয়েছেন প্রবীণ মিত্তল, তাঁর স্ত্রী, তিন সন্তান এবং প্রবীণের বাবা-মা। আদতে উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা হলেও পঞ্চকুল্লাতে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন প্রবীণেরা। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে গিয়েছিল মিত্তল পরিবার। মিত্তলদের ভ্রমণ সংস্থার ব্যবসা ছিল। সেই ব্যবসা চালাতে গিয়ে গলা পর্যন্ত ধার হয়ে গিয়েছিল। এমনকি ব্যবসা ঠিকমতো চলেনি। মাথা গোঁজার ঠাঁইও হারাতে বসেছিল পরিবার। তাই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন সকলে। সূত্রের খবর, উদ্ধার হওয়া চিঠিতে আত্মহত্যার কারণ উল্লেখ করে গিয়েছেন প্রবীণ। শুধু তা-ই নয়, গোটা ঘটনার জন্য নিজেকেই দায়ী করেছেন তিনি। তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোককে যেন কোনও ভাবে এই ঘটনায় জড়ানো না হয়, সেটাও উল্লেখ করে গিয়েছেন প্রবীণ। এমনকি, তাঁদের মৃত্যুর পর শেষকৃত্য কে করবেন, তা-ও লিখেছেন চিঠিতে। প্রবীণ জানিয়েছেন, তাঁদের শেষকৃত্য যেন তাঁর মামাতো ভাই করেন।

তবে প্রবীণের মামাতো ভাই ইন্ডিয়া টিভি টুডে-র কাছে দাবি করেছেন, তাঁর দাদার ২০ কোটি টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল। ক্রমাগত খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলেও প্রবীণের মামাতো ভাই দাবি করেছেন। প্রবীণের তুতো ভাই সন্দীপ আগরওয়াল জানিয়েছেন, হরিয়ানার হিসারের বারওয়ালাতে থাকতেন প্রবীণ। ১২ বছর আগে পঞ্চকুলোয় চলে আসেন। হিমাচলে লোহার ছাঁটের একটি কারখানা খুলেছিলেন। ঋণের টাকা মেটাতে না পারায় সেই কারখানা বাজেয়াপ্ত করেছিল ব্যাঙ্ক। দেনার বোঝা বাড়তে থাকায় আচমকা পঞ্চকুলা থেকে পরিবারসমেত গায়েব হয়ে গিয়েছিলেন প্রবীণ। পরে জানা যায়, তিনি দেহরাদূনে রয়েছেন। তার পর সেখান থেকে পঞ্চকুলায় আবার ফিরে আসেন। একটি বাড়ি ভাড়া করে পরিবার নিয়ে থাকছিলেন তিনি। কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না প্রবীণ। সেখানে একটি ট্রাভেল এজেন্সিও খোলেন। কিন্তু সেই ব্যবসাও মার খায়। ফলে ধারের বোঝা আরও বেড়ে গিয়েছিল। তবে আত্মহত্যার নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ আছে কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

Mysterious death Haryana
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy