মেয়ের উপার্জনে বসে বসে খাচ্ছেন, জীবন কাটাচ্ছেন! আত্মীয়স্বজন থেকে প্রতিবেশীদের এ হেন কথা সহ্য করতে পারেননি হরিয়ানার দীপক যাদব। চেয়েছিলেন তাঁর মেয়ে বন্ধ করে দিক তাঁর টেনিস অ্যাকাডেমি। কিন্তু তাতে রাজি ছিলেন না রাধিকা যাদব। পুলিশ জানিয়েছে, সেই রাগেই নিজের বাড়িতে মেয়ে রাধিকাকে পর পর গুলি করে খুন করেন দীপক!
হরিয়ানার টেনিস খেলোয়াড় রাধিকার খুনের নেপথ্যে কারণ নিয়ে নানা জল্পনা চলছিল। হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টা পর সেই কারণ কিছুটা স্পষ্ট করল পুলিশ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে রান্নাঘরে কাজ করছিলেন রাধিকা। সেই সময়েই পিছন থেকে পর পর পাঁচ বার গুলি চালান দীপক। তার মধ্যে তিনটি লাগে রাধিকার গায়ে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। বাজেয়াপ্ত করা হয় তাঁর দু’টি বন্দুকও। প্রাথমিক জেরায়, রাধিকাকে খুন করার কথা স্বীকার করে নেন দীপক। পুলিশ সূত্রে খবর, তিনি তদন্তকারীদের জানান, তাঁর মেয়ে কথা শুনতেন না। সব সময় রিল বানাতেন সমাজমাধ্যমে। রাধিকাকে বার বার বারণ করেও লাভ হয়নি। তাই রাগের বশে তাঁকে গুলি করেন।
তবে পরে পুলিশি তদন্তে উঠে আসে খুনের নেপথ্যে অন্য এক কারণও। পুলিশ জানিয়েছে, দিনকয়েক আগে খেলার সময় কাঁধে চোট পান রাজ্যস্তরের টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা। এই চোট তাঁকে ভোগাচ্ছিল। কোর্টেও ভাল ফল করতে পারছিলেন না। ঠিক করেন শিশুদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি টেনিস অ্যাকাডেমি খুলবেন। সেই পরিকল্পনামতো নিজের এলাকাতেই একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করেন রাধিকা।
রাধিকার উদ্যোগ ভাল ভাবে নেননি দীপক। তিনি চেয়েছিলেন এই অ্যাকাডেমি বন্ধ করে দিন রাধিকা, যা নিয়ে দু’জনের মধ্যে প্রায়ই কথা কাটাকাটি হত। পুলিশ জানিয়েছে, রাধিকার উপার্জনে সংসার চলত। এই নিয়ে নানা সময়ে প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন কিংবা বন্ধুবান্ধবের কাছে কথা শুনতে হত দীপককে। সেই কারণে দীপক চাইতেন না তাঁর মেয়ে অ্যাকাডেমি চালান। অ্যাকাডেমি বন্ধ করতেও বলেন। কিন্তু বাবার প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না রাধিকা।
আরও পড়ুন:
সূত্রের খবর, দীপক পুলিশকে বলেছেন, ‘‘আমি যখন দুধ কিনতে ওয়াজ়িরাবাদ গ্রামে যেতাম, তখন লোকেরা আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করতেন। বলতেন, আমি আমার মেয়ের টাকায় বেঁচে আছি। এই সব কথায় খুব কষ্ট পেতাম। কেউ কেউ আবার আমার মেয়ের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন। তাই আমি আমার মেয়েকে টেনিস অ্যাকাডেমি বন্ধ করে দিতে বলেছিলাম। কিন্তু ও রাজি ছিল না।’’
বৃহস্পতিবারও এই নিয়ে বাবা-মেয়ের মধ্যে ঝামেলা হয়। দীপক জানিয়েছেন, তিনি খুব কষ্ট এবং চাপে ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাধিকাকে অ্যাকাডেমি বন্ধ করার কথা বলি। ও না শোনায় তর্কাতর্কি শুরু হয়। রাগের মাথায় আমি আমার লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক দিয়ে গুলি করি।’’ যদিও দীপকের স্ত্রী মঞ্জু যাদব এই ব্যাপারে লিখিত বিবৃতি দিতে অস্বীকার করেছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। দীপকের ভাই কুলদীপ যাদব থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।