গোয়ার শিরগাঁও মন্দিরে পদপিষ্টের ঘটনায় ইতিমধ্যেই ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৫০ জনেরও বেশি পুণ্যার্থী। কিন্তু কী কারণে ওই পদপিষ্টের পরিস্থিতি সৃষ্টি হল, তা নিয়েই এখন চর্চা শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় নানা মত, নানা কারণের কথা উঠে আসছে। যদিও আসল কারণ কী, তা খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন।
বেশ কয়েকটি সূত্রের দাবি, মন্দিরচত্বরে ‘অগ্নিদিব্য’ নামে আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এটি এই মন্দিরের বহু প্রাচীন একটি রীতি। সেই রীতি মেনেই শুক্রবার রাতে মন্দিরচত্বরে কাঠ-কয়লা দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়েছিল। প্রচলিত বিশ্বাস, এই আগুনের সামনে বসে কেউ যদি কোনও মানত করেন, তা হলে তাঁর ইচ্ছা পূরণ হবে। তাই প্রতি বছর ‘অগ্নিদিব্য’ রীতিতে অংশ নেন প্রচুর ভক্ত। কেউ কেউ আবার আগুনের উপর গিয়েও হাঁটেন। মনস্কামনা পূরণ হবে, এই বিশ্বাস থেকেই ভক্তেরা ভিড় জমান মন্দিরে।
প্রতি বছরের মতো শুক্রবারেও ‘আগ্নিদিব্য’-র আয়োজন করেছিলেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, রাত যত গড়িয়েছে, ভক্তদের ভিড় ততই বেড়েছে। একটা সময় সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শোভাযাত্রার আয়োজনও করেছিলেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। শনিবার ভোর ৪টের সময় আচমকাই পুণ্যার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা ছোটাছুটি শুরু করে দেন। মন্দিরপ্রাঙ্গণ থেকে বার হতে গিয়েই আরও সমস্যা সৃষ্টি হয়। তখনই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে।
তবে যে সময় ‘অগ্নিদিব্য’ রীতি পালন হচ্ছিল, সেই সময়েই এই ঘটনা ঘটে। আর তা থেকেই সন্দেহ, তা হলে কি ওই রীতি পালনের সময়ে কোনও ঘটনা ঘটেছিল, যা পুণ্যার্থীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল? মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাবন্ত অবশ্য দাবি করেছেন, আচমকা কোনও বিদ্যুতের ঝটকা পুণ্যার্থীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল। যদিও তিনি আবার জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে এটিকে পদপিষ্টের একটি কারণ বলে মনে হলেও, নেপথ্যে অন্য কোন কারণ ছিল কি না, তা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে খতিয়ে দেখা হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে রাজ্য প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা করতে বলেছেন।
স্থানীয় প্রশাসন দাবি করেছে, এই ধর্মীয় অনুষ্ঠান যাতে নির্বিঘ্নে পালিত হয় তার জন্য মন্দিরচত্বরে এবং তার আশপাশে এক হাজার পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল। শীর্ষস্তরের পুলিশকর্তাদের তত্ত্বাবধানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিচালনা করা হচ্ছিল। যান চলাচল ব্যবস্থাকে সচল রাখতে ৩০০ ট্র্যাফিক পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল। ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালানো হচ্ছিল মন্দিরচত্বরে। কিন্তু তার পরেও কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনেকে আবার প্রশাসনিক গাফিলতিরও অভিযোগ তুলছেন।