চিনের তিয়ানজিন শহরে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজ়েশন (এসসিও) সম্মেলন থেকে বার্তা দিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফও। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতেই তিনি সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তির প্রসঙ্গ তোলেন। জানান, সকল প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে পাকিস্তান স্বাভাবিক, সুসম্পর্ক চায়। পাকিস্তানকে ‘শান্তিপ্রিয়’ দেশ বলে দাবি করেন শাহবাজ়।
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর গত মে মাসে পাকিস্তান এবং ভারত সেনা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল। টানা চার দিন লড়াই চলার পর দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। সোমবার এসসিও সম্মেলনে পাক প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সেই প্রসঙ্গও এসেছে। তবে সরাসরি ভারতের নাম করেননি তিনি। শাহবাজ় বলেছেন, ‘‘বহুত্ববাদ, আলোচনা এবং কূটনৈতিক ক্ষমতার উপরে পাকিস্তান সবসময় ভরসা রেখে এসেছে। এককেন্দ্রিকতাকে কখনও সমর্থন করা হয়নি। তবু, এই অঞ্চলে গত কয়েক মাসে অত্যন্ত অস্বস্তিকর কিছু ঘটনা ঘটে গিয়েছে। এতে আমরা মর্মাহত। পাকিস্তান এসসিও-র সকল সদস্য রাষ্ট্র এবং প্রতিবেশীদের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতাকে সমর্থন করে। আমরা সমস্ত আন্তর্জাতিক এবং দ্বিপাক্ষিক জোটকে শ্রদ্ধা করি। আশা করি, এসসিও-র সদস্যেরাও সেই নীতি মেনে চলবে।’’
আরও পড়ুন:
সিন্ধুর জল নিয়ে কথা বলার সময়েও ভারতের নাম করেননি শাহবাজ়। তবে জল সংক্রান্ত শর্ত সকলকে মেনে চলার বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘এসসিও সদস্যদের মধ্যে যে চুক্তি রয়েছে, তার শর্ত অনুযায়ী জলের অবাধ ও ন্যায্য বণ্টন মেনে চলা হলে ভবিষ্যতে এসসিও-র কাজই আরও সহজ হবে। পাকিস্তান তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে স্বাভাবিক, স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান চাই আমরা।’’ কূটনীতির মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি বজায় রাখার জন্য পাকিস্তান চেষ্টা চালিয়ে যাবে, দাবি করেছেন তাদের প্রধানমন্ত্রী। শাহবাজ় বলেছেন, ‘‘গোটা অঞ্চলের উন্নয়ন এবং দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি নিশ্চিত করতে পাকিস্তান চেষ্টা চালিয়ে যাবে। আমরা শান্তি ভালবাসি। আমরা আলোচনা আর কূটনীতিকেই সবসময় প্রাধান্য দিয়ে থাকি।’’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে পশ্চিম এশিয়ার সমস্যার উল্লেখও ছিল। প্রতিবেশী ইরানের বিরুদ্ধে ইজ়রায়েলের আগ্রাসন এবং গাজ়ায় প্রাণহানির বিরোধিতা করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘আমাদের ভ্রাতৃসম সদস্য রাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে ইজ়রায়েলের আগ্রাসন অযৌক্তিক। আমরা এর বিরোধিতা করছি। গাজ়ায় যে দুর্ভোগ, দুর্ভিক্ষ চলছে, তা আমাদের বিচলিত করে। সেখানে অবিলম্বে রক্তপাত বন্ধের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি।’’
উল্লেখ্য, এর আগে এসসিও সম্মেলনে ভাষণ দিয়েছেন মোদীও। সেখান থেকে পহেলগাঁও হামলা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। পাক প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়েই বলেছেন, ‘‘কোনও কোনও দেশ যে ভাবে খোলাখুলি সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করছে, তা কি আমরা মেনে নিতে পারি? পহেলাগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলা তো শুধু ভারতের আত্মায় আঘাত নয়, বরং তা সেই সমস্ত দেশের প্রতি খোলামেলা চ্যালেঞ্জ, যারা মানবতায় বিশ্বাস রাখে। আমাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনও দ্বিচারিতা বরদাস্ত করা হবে না।’’ তবে মোদীও পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করেননি। এসসিও গোষ্ঠীর তরফে পরে পহেলগাঁও হামলার বিরোধিতা করে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলা এবং ২৬ জনের মৃত্যুর পরের দিনই পাকিস্তানকে দায়ী করে কঠোর বিবৃতি দিয়েছিল ভারত। স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি। সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির জল কী ভাবে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বণ্টিত হবে, চুক্তির শর্তে তা নির্ধারিত রয়েছে। পাকিস্তান প্রথম থেকে ভারতের এই অবস্থানের বিরোধিতা করেছে। সিন্ধু ও তার উপনদীগুলির জলের উপর পাকিস্তানের সিংহভাগ সাধারণ মানুষ নির্ভরশীল, বার বার তা জানিয়েছেন শাহবাজ়। চিনের সম্মেলন থেকেও সেই বার্তা দিলেন।