গুজরাতের জনসভা থেকে আবার পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘যারা সিঁদুর মুছে দিতে আসবে, তাদেরও মুছে যেতে হবে, এটা নিশ্চিত।’ ‘অপারেশন সিঁদুর’কে ভারতীয়দের ‘সংস্কার’ এবং ‘ভাবনার অভিব্যক্তি’ বলেও উল্লেখ করেছেন মোদী।
সোমবার গুজরাতের দাহোদে একটি জনসভায় গিয়েছিলেন মোদী। সেখান থেকে পহেলগাঁওয়ের ঘটনার প্রসঙ্গ তোলেন। বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদীরা যা করেছে, তার পরে কি ভারত চুপ করে থাকতে পারত? মোদী কি চুপ করে থাকতে পারত? যখন কেউ আমাদের বোনেদের সিঁদুর মুছে দিতে আসবে, তখন তাদেরও মুছে যেতে হবে, এটা নিশ্চিত। অপারেশন সিঁদুর শুধুই একটা সামরিক অভিযান নয়। এটা ভারতীয়দের সংস্কার, ভাবনার অভিব্যক্তি।’’ মোদী আরও বলেন, ‘‘যারা সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে, তারা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি, মোদীর সঙ্গে মোকাবিলা করা কতটা কঠিন।’’
আরও পড়ুন:
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং এক জন নেপালি। অভিযোগ, জঙ্গিরা বেছে বেছে একটি বিশেষ ধর্মের পুরুষদের গুলি করে খুন করেছিল। মহিলা বা শিশুদের মারা হয়নি। অনেকেই চোখের সামনে স্বামীকে মরতে দেখেছেন। এই ঘটনার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল ভারত। গত ৬ মে মধ্যরাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে ভারতীয় সেনা। তার পাল্টা হিসাবে পাকিস্তান হামলা চালায়। টানা চার দিন ধরে ভারত এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলেছে। গত ১০ মে দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। মোদী দাহোদের জনসভা থেকে বলেন, ‘‘সন্তানের সামনে তার বাবাকে গুলি করে দিচ্ছে। সে দিনের ছবি দেখলে আজও রক্ত গরম হয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা ১৪০ কোটি ভারতীয়কে চ্যালেঞ্জ করেছিল। মোদী সেটাই করেছে, যার জন্য দেশবাসী আমাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন।’’
পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘তিন বাহিনীকেই আমি পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলাম। ওরা যা করে দেখিয়েছে, তা গোটা দুনিয়া গত কয়েক দশক ধরে দেখেনি। আমরা সীমান্তের ও পারে সন্ত্রাসবাদীদের সবচেয়ে বড় ন’টি ঘাঁটি খুজে বার করেছি। ২২ তারিখ ওরা যে খেলাটা খেলেছিল, ৬ তারিখ রাতে ২২ মিনিটের মধ্যে আমরা তা মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছি। তার পর পাকিস্তানি সেনা যখন দুঃসাহস দেখাল, তখন আমাদের সেনাবাহিনী তাদের অবস্থাও খারাপ করে দিল। ভারতীয় সেনার শৌর্যকে আমি প্রণাম জানাচ্ছি।’’
পাকিস্তানকে কটাক্ষ করে মোদী আরও বলেন, ‘‘দেশভাগের পর যে দেশটার জন্ম হয়েছিল, তার একমাত্র লক্ষ্যই হল ভারতের সঙ্গে শত্রুতা করা। ভারতকে ঘেন্না করা। ভারতের ক্ষতি করা। কিন্তু ভারতের লক্ষ্য তা নয়। ভারতের লক্ষ্য দেশ থেকে দারিদ্র দূর করা। দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করে তোলা। আর দেশের সেনা মজবুত হলেই বিকশিত ভারত গড়া সম্ভব। আমরা তার জন্য অনবরত কাজ করে চলেছি।’’
কিছু দিন আগে রাজস্থানের একটি জনসভা থেকেও ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পহেলগাঁওয়ের ঘটনা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘‘আমার শরীরে এখন রক্ত নয়, সিঁদুর বইছে। এটা প্রতিশোধের খেলা নয়, এটা ন্যায়ের নতুন রূপ, যার নাম অপারেশন সিঁদুর।’’ মোদীর সেই মন্তব্যের পর কড়া বিবৃতি দিয়েছিল পাকিস্তান। এই ধরনের মন্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং উস্কানিমূলক’ বলে দাবি করেছিল তারা। গুজরাত থেকেও একই সুরে হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধানমন্ত্রী।