Advertisement
E-Paper

ঝলসানো দেহই প্রতিবাদের মাপকাঠি?

নিরাপত্তা নিয়ে প্রথম ভাবতে শুরু করি রুমমেটের কারণে। ও একদিন এসে জানাল, রাতে বাড়ি ফেরার সময় দু’জন অশালীন আচরণ করেছে, ওর ওড়না ধরেও টান মেরেছে।

সৃষ্টি দাস

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:২২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

আমার বেড়ে ওঠা যাদবপুর এলাকায়। এখন ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করছি। দেড় বছর হতে চলল, হায়দরাবাদের উপ্পল অঞ্চলে থাকি। আরও তিন জন মেয়ের সাথে পিজিতে (পেয়িং গেস্ট) থাকি। রাস্তা চিনতে অসুবিধা হত প্রথমে। কিন্তু, এখানকার লোকজন সত্যিই অনেক উপকার করেছেন। ইউনিভার্সিটি বন্ধ থাকলে বন্ধুদের সাথে প্রচুর ঘুরতেও গিয়েছি। এমনও হয়েছে, বেশ রাতেই পিজিতে ফিরেছি, কখনও নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হয়নি।

নিরাপত্তা নিয়ে প্রথম ভাবতে শুরু করি রুমমেটের কারণে। ও একদিন এসে জানাল, রাতে বাড়ি ফেরার সময় দু’জন অশালীন আচরণ করেছে, ওর ওড়না ধরেও টান মেরেছে। ও নিজেকে বাঁচাতে ওড়না ফেলে প্রাণপণে দৌড়য়। যে বাড়িতে থাকি, তার গেটে নিরাপত্তারক্ষী থাকায় ছেলে দুটো আর এগোতে পারেনি পিছু নিয়েও। রাস্তায় লোক ছিল না এমন নয়, কিন্তু কেউই সাহায্য করেননি। এটা জেনেই ভয়টা বেড়ে গেল বেশি।

গণধর্ষণ করে পুড়িয়ে মারার ঘটনাটা যেখানে ঘটেছে, সেই শামসাবাদের কাছেই দাদার বাড়ি। ঘটনাটার কথা জেনে শিউরে উঠেছি আর ও-এ মনে হয়েছে, ওই তরুণীর জায়গায় যদি থাকতাম? বা আমার কাছের কেউ? এই ঘটনার পর মায়ের ফোন বেড়ে গিয়েছে। দিন কয়েক পরে আমার কলকাতায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু স্রেফ রাতের ফ্লাইট বলে মা যেতে বারণ করল। যেহেতু আমি পিজিতে থাকি, বিভিন্ন মেয়েরা বিভিন্ন সময় কাজে বেরোন, আমাদের গেটটা সব সময় ভেজিয়ে রাখা হয়, কখনও বন্ধ থাকে না। জানি না, আমরা আদতে নিরাপদ কি না। কোনও দিন যদি ওই চিকিৎসকের পরিস্থিতিতে পড়তে হয়?

আরও পড়ুন: কিশোরী ধর্ষণে ধৃত প্রাক্তন পুলিশ

এই ঘটনার পর শামসাবাদের কাছে বহু মানুষ প্রতিবাদ করেছেন, মোমবাতি মিছিল বেরোয় শহরে, দেশ জুড়ে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর একত্রিত হয়েছে। কিন্তু আমার বন্ধুকে য়খন হেনস্থা করা হচ্ছিল, সেই রাতে, তখন এক জনও এগিয়ে আসেননি প্রতিবাদ করতে। আমাদের প্রতিবাদ কি এতটা সীমাবদ্ধ? একটি মেয়ে যত ক্ষণ শেষ নিঃশ্বাসটুকু থাকবে, তত ক্ষণ একা সবটুকু দিয়ে লড়ে যাবে, কেউ বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসবে না?

প্রতিবাদ করার জন্য এক জনের ঝলসানো দেহই মাপকাঠি?

আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার আদ্যন্ত ব্যর্থ দেশের মহিলাদের সুরক্ষার বিষয়ে। দৈনন্দিন জীবনে অভিযোগকারিণীকেই অপমানিত হতে হয়, সে থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েই হোক বা প্রতিবাদ করতে গিয়েই হোক। পোশাক, আচরণ নিয়ে তো অনেক প্রশ্ন করা হয়।

আসল প্রশ্নগুলো কবে করব?

Crime Rape Women
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy