দীর্ঘ প্রায় তিন দশক পরে রাজধানী দিল্লিতে সরকার গঠন করতে চলেছে বিজেপি। মুখ থুবড়ে পড়েছে পূর্বতন আপ সরকার। জিততে পারেননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল এবং উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া। কেজরী বা মণীশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সময় বলবে। তার চেয়েও জরুরি প্রশ্ন, কে বসবেন কেজরীর পদে? কে হবেন দিল্লির পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী? প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কেজরীকে হারিয়ে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে প্রবেশ সিংহ বর্মাই কি এগিয়ে? না কি বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের মাথায় রয়েছে অন্য কোনও সমীকরণ? দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সাহিব সিংহ বর্মার পুত্র প্রবেশ যদিও জানিয়ে দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। একই বক্তব্য দিল্লি বিজেপির প্রধান বীরেন্দ্র সচদেবেরও।
তবে এটা স্পষ্ট যে, যিনিই মুখ্যমন্ত্রী হোন না কেন, তাঁকে নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর ছায়াতেই থাকতে হবে। মোদীর নেতৃত্বে তৃতীয় বার ‘দিল্লিবাড়ি’র দখল নিয়েছে বিজেপি। যোগী আদিত্যনাথ ছাড়া তিন-তিন বারের প্রধানমন্ত্রী মোদীর সামনে বিজেপির নেতারা প্রায় সকলেই বামনসদৃশ। সকলকেই প্রায় অনুবীক্ষণ দিয়ে খুঁজতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী হলেও। আর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তো ভৌগোলিক ভাবেও মোদীর প্রচ্ছায়ায় বসবাসকারী।
সূত্রের খবর, সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দিল্লি বিজেপির অন্দরে পাঁচ জনের নাম ঘুরছে। বিজেপি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই দিল্লিতে বিজেপির দফতরে বৈঠকে বসেছেন বীরেন্দ্র, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষ মলহোত্র, দলের জাতীয় সহ-সভাপতি বৈজয়ন্ত পন্ডা। সেই বৈঠকে প্রাথমিক ভাবে হবু মুখ্যমন্ত্রীর নাম নিয়ে আলোচনা চলছে বলেই জানাচ্ছেন দলীয় নেতাদের একাংশ। ওই নেতাদেরই দাবি, বৈঠকে যা-ই হোক, শেষ পর্যন্ত এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী মোদীই।

দিল্লিতে কত আসনে জিতল কোন দল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দিল্লিতে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। তার পরে কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় এলেও দিল্লিতে সরকার গড়তে পারেনি। ২০১৩ সাল পর্যন্ত সেখানে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। তার পরে আপ। সেই আপ প্রধান তথা দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কেজরীওয়ালকে নয়াদিল্লি আসনে ৪,০৮৯ ভোটে হারিয়েছেন প্রবেশ। সেই কারণেই তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বলে মনে করছে দিল্লি বিজেপির একটা বড় অংশ। তবে প্রবেশের বক্তব্য, ‘‘আমি খুশি হলে খুব উত্তেজিত হই না। আবার কষ্ট পেলেও ভেঙে পড়ি না। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা সকলের কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে।’’ তার পরেই তিনি দিল্লিতে বিজেপির জয়ের কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী মোদীকেই দিয়েছেন। ৭০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৪৮টিতে জয়ী হয়েছে বিজেপি। প্রবেশের দাবি, ‘‘এই জয় প্রধানমন্ত্রী মোদীর এবং দিল্লির মানুষের।’’
আরও পড়ুন:
বিজেপির অন্দরে গুঞ্জন, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে নেই দিল্লি বিধানসভার প্রাক্তন বিরোধী নেতা বিজেন্দ্র গুপ্তও। রোহিণী কেন্দ্রে আপের প্রদীপ মিত্তলকে হারিয়েছেন তিনি। দিল্লি বিধানসভায় আবগারি দুর্নীতি নিয়ে প্রাক্তন আপ সরকারকে কোণঠাসা করে দিয়েছিলেন বিজেন্দ্র। সে কারণেই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকতে পারেন তিনি। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে রয়েছেন সতীশ উপাধ্যায়ও। নয়াদিল্লি পুরসভা (এনডিএমসি)-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা দিল্লি বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি সতীশ মালব্যনগর কেন্দ্রে হারিয়েছেন আপ নেতা সোমনাথ ভারতীকে।
তবে বিজেপির অন্য একটি সূত্র বলছে, দিল্লি জয়ের পরে বিজেপির ‘পাখির চোখ’ এখন পঞ্জাব। ২০২৭ সালে সেখানে বিধানসভা নির্বাচন। সে দিকে নজর রেখে মজিন্দ্র সিংহ সিরসাকেও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদে বেছে নিতে পারে বিজেপি। রজৌরি গার্ডেন বিধানসভা কেন্দ্রে আপের ধনবতী চাণ্ডেলাকে হারিয়েছেন তিনি। দিল্লির তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী মদনলাল খুরানার পুত্র হরিশ খুরানাও মুখ্যমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবিদার বলে দাবি বিজেপির একাংশের। মোতিনগর আসনে আপের শিবচরণ গোয়েলকে প্রায় ১১ হাজার ভোটে হারিয়েছেন তিনি। হরিশ দীর্ঘ দিন দিল্লি বিজেপির সম্পাদকও ছিলেন। দিল্লিতে দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। যা তিনি সফল ভাবেই পালন করেছেন বলে মনে করেন শীর্ষ নেতৃত্ব। হরিশ দলের প্রাক্তন মুখপাত্রও বটে। সেই অভিজ্ঞতার কারণে তিনি এগিয়ে যেতে পারেন বলে মনে করছেন দিল্লি বিজেপি নেতাদের একটা অংশ। যদিও একটি বিষয়ে সব অংশই একমত— চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মোদী। প্রবেশের নামেই কি সিলমোহর দেবেন তিনি? ‘অণু-প্রবেশ’ দেখবে দিল্লি?