এক প্রস্ত বিতর্ক হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ সরকারের ফরমানে। তাতে বলা হয়েছিল, কাঁওয়ার যাত্রার পথের পাশে যে দোকানগুলি থাকবে, সেগুলিতে দোকানের মালিকদের নাম, প্রয়োজন বিশেষে তাঁদের ধর্মীয় পরিচয়, খাবারের লাইসেন্সের বিস্তারিত তথ্য— সবই বড় বড় করে লিখে রাখতে হবে। সেই বিতর্ক বাড়ল তেমনই একটি দোকানে চড়াও হয়ে সেখানকার এক মুসলিম কর্মীকে হিন্দুত্ববাদীদের মারধরের অভিযোগে। ওই কর্মী স্বীকার করেছেন, মালিকের নির্দেশেই তিনি নাম পাল্টে ও ধর্মীয় পরিচয় গোপন রেখে দোকানেকাজ করছিলেন।
কাঁওয়ার যাত্রার সময়ে যাত্রাপথের ধারের দোকানগুলির মালিকদের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে এই বিতর্ক নতুন নয়। কিন্তু এ বার তা নিয়ে ধরপাকড় করতে গিয়ে শালীনতার সীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে। মুজ়ফ্ফরনগরে ৫৮ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ‘পণ্ডিতজি বৈষ্ণো ধাবা’য় গত ২৮ জুন স্বামী যশবীরজি মহারাজ নামে এক স্বঘোষিত ধর্মগুরু দলবল নিয়ে চড়াও হন বলে অভিযোগ। তীর্থযাত্রীরা যাতে শুধু হিন্দুদের দোকান থেকেই খাবার কেনেন, তা নিশ্চিত করতে দোকানগুলির লোকজনের ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করছিলেন তাঁরা। সেই সময়েই তাঁদের হাতে ধরা পড়ে যান ওই দোকানের মুসলিম কর্মীটি। পরে একটি চ্যানেলকে ওই কর্মী বলেন, ‘‘আমার নাম তাজাম্মুল। শর্মাজি (ধাবার মালিক) আমায় বলেছিলেন ‘গোপাল’ নাম নিতে, যাতে ঝামেলায় না পড়ি। আমাকে উনি হাতে ‘কড়া’ (বালা) পরতে বলেছিলেন। তিনমাস পরেওছিলাম, যাতে আমায় চেনা না যায়।’’
তবু ধরা পড়ে যান তাজাম্মুল। ২৮ জুন দোকানে চড়াও হওয়া স্বামী যশবীরের অনুগামীরা তাঁর পরিচয়পত্র দেখতে চান। তাজাম্মুল বলেন, তাঁর আধার কার্ড হারিয়ে গিয়েছে। ফোনও ভেঙে গিয়েছে। অভিযোগ, এর পরেই তাজাম্মুলকে মারধর করা হয়। ভিডিয়ো ফুটেজেও তা ধরা পড়েছে। তাজাম্মুল বলেন, ‘‘ওঁরা আমার প্যান্ট নামিয়ে দেন। আমাকে মারতে থাকেন। আমি কাঁদছিলাম।’’ মুজ়ফ্ফরনগর পুলিশ এই ঘটনায় ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে।
যোগী আদিত্যনাথের সরকার দোকানের মালিকদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশের নির্দেশ দেওয়ায় বিরোধীরা সমালোচনায় সরব। তার পাল্টা যুক্তি নিয়ে উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী ব্রজেশ পাঠক থেকে সঞ্জয় নিষাদ, ও পি রাজভরের মতো রাজ্যের মন্ত্রীরা মাঠে নেমেছেন। বিরোধীদের বিরুদ্ধে তোষণের রাজনীতির অভিযোগ তুলে ব্রজেশ বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক ক্রেতার জানার অধিকার আছে, তাঁরা কার কাছ থেকে খাবার কিনছেন। যদি সেই কথাটাই লিখে রাখতে বলা হয়, তা হলে অসুবিধে কোথায়?’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)