কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠুক, মানুষ খেপে যাক, তা কখনওই চান না পহেলগাঁও কাণ্ডে নিহত ভারতীয় নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়ালের স্ত্রী হিমাংশী! পহেলগাঁওয়য়ের ঘটনার পর দেশ জুড়ে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তার বদলে শান্তিই চান তিনি।
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর সমাজমাধ্যম তো বটেই, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল। ফাঁকা বৈসরন উপত্যকায় পড়ে রয়েছে এক ব্যক্তির রক্তাক্ত নিথর দেহ। তাঁর দেহের পাশে হাঁটু মুড়ে মাথাটা সামান্য ঝুঁকিয়ে ওই ব্যক্তির দিকে চেয়ে আছেন এক মহিলা। তিনিও ‘নিথর’। পড়ছে না চোখের পাতা। তাঁদের সামনে অদূরেই পড়ে রয়েছে একটি ব্যাগ। পরে জানা যায়, ওই ব্যক্তি এবং মহিলা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। নবদম্পতি। মধুচন্দ্রিমায় পহেলগাঁওয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ২২ এপ্রিল জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ হারান ওই ব্যক্তি, নাম বিনয় নারওয়াল। হাসিখুশি বিনয়ের দেহ বাড়ি ফিরল কফিনবন্দি হয়ে। সেই দিনের বিভীষিকা কাটিয়ে উঠতে পারেননি বিনয়ের স্ত্রী হিমাংশী। তবে তিনি এ-ও মনে করেন, ২২ এপ্রিলের ঘটনার জন্য কখনই কাশ্মীরিদের দায়ী করা উচিত নয়!
সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হিমাংশী বলেন, ‘‘আমরা চাই না মানুষ মুসলিম বা কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে খেপে যাক। আমরা শান্তি চাই, শুধু শান্তি! তবে ন্যায়বিচারও চাই।’’ গত ২৩ এপ্রিল দিল্লি বিমানবন্দরে বিনয়ের কফিনবন্দি দেহ আসে। স্বামীর কফিনবন্দি দেহের সামনে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে হিমাংশী বলতে থাকেন, ‘‘প্রার্থনা করি, তোমার আত্মা যেন শান্তি পায়...।’’ নিজেকে খানিক সামলে নিয়ে সদ্যবিধবা বলেন, ‘‘ওর মতো হাসিখুশি মানুষ খুব কম দেখেছি। যেখানে থাকত, মাতিয়ে রাখত সবাইকে। আমরা সকলে ওর জন্য গর্বিত...।’’ কথা শেষ হল না হিমাংশীর। আবার কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তাঁকে সামলানোর চেষ্টা করলেন আত্মীয়েরা।
আরও পড়ুন:
সেই দিনই বিনয়ের কফিনবন্দি দেহ ফেরে হরিয়ানায় তাঁর নিজের শহরে। সেখানেই গান স্যালুটে শেষ বিদায় জানানো হয় বিনয়কে। তখনও তাঁর কফিনবন্দি দেহ জড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে দেখা যায় হিমাংশীকে।
বিনয়কে চোখের জলে শেষ বিদায় জানাতে শ্মশানে জড়ো হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। পৌঁছেছিলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়েব সিংহ সাইনিও। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘গুলি লাগার পরও কিছু সময় বেঁচে ছিলেন বিনয়। কিন্তু কেউ তাঁকে বাঁচাতে আসেননি।’’ তিনি চান, কোনও জঙ্গি যেন প্রাণে বেঁচে না থাকে।