Advertisement
E-Paper

সিআইএ-র কব্জায় আধার, দাবি উইকিলিক্সের

সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে যখন নরেন্দ্র মোদী সরকারের আধার সংক্রান্ত যাবতীয় পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, ঠিক তখনই বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করল উইকিলিক্স— চুরি গিয়েছে আধারের তথ্য। চোর আর কেউ না, মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ। ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিমবঙ্গ-সহ ছ’টি রাজ্য।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৪৫

সাধারণ মানুষের ব্যক্তিপরিসরে হস্তক্ষেপ করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে যখন নরেন্দ্র মোদী সরকারের আধার সংক্রান্ত যাবতীয় পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, ঠিক তখনই বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করল উইকিলিক্স— চুরি গিয়েছে আধারের তথ্য। চোর আর কেউ না, মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ। ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিমবঙ্গ-সহ ছ’টি রাজ্য।

সিআইএ-র ‘এক্সপ্রেসলেন’ প্রকল্পের গোপন কিছু নথিপত্র ফাঁস করে দিয়েছে উইকিলিক্স। তাতে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন জনসংযোগকারী সংস্থাগুলোর সাইটে রীতিমতো সাইবার হামলা চালিয়েছে সিআইএ।

আরও পড়ুন: চাপের মুখেই গোমাংস বিধি

সিআইএ-র একটি শাখা সংস্থা ‘অফিস অব টেকনিক্যাল সার্ভিস’ (ওটিএস)-এর বিশেষ বায়োমেট্রিক সংগ্রহ ব্যবস্থা রয়েছে। গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন জনসংযোগকারী সংস্থাগুলোকে এই সিস্টেমটি দিয়ে রেখেছে তারা। তবে সেটি চুক্তি ভিত্তিক। চুক্তিটি হল, বিনিময়ে সংস্থাগুলোকে যাবতীয় তথ্য তুলে দিতে হবে ওটিএস-এর হাতে। তবে স্বাভাবিক ভাবেই সিআইএ-র এই ‘বিনামূল্যে পরিষেবা’ ঠিক মতো কাজ দেয়নি। বা তারা আরও আগ্রাসী হতে চেয়েছিল। আর তাই সিআইএ সরাসরি যোগাযোগ করে বিভিন্ন জনসংযোগকারী সংস্থার সঙ্গে।

ওটিএস-এর এজেন্টরা হানা দেন জনসংযোগকারী অফিসগুলোতে। প্রস্তাব দেন, তাদের কাছে রয়েছে একটি বিশেষ সিস্টেম, এক্সপ্রেসলেন, যা কি না বায়োমেট্রিক সফ্‌টওয়্যার আপগ্রেড করতে দারুণ পারদর্শী। সংস্থার আধিকারিকদের সামনেই সফ্‌টওয়্যারটি কম্পিউটারে ‘ইনস্টল’ করে ‘রান’ (চালানো) করানো হয়। গোটা বিষয়টিই ঘটে তাঁদের চোখের সামনে। বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয় না। কারণ কম্পিউটারের পর্দায় তাঁরা দেখেন বায়োমেট্রিক সিস্টেমটি ‘আপগ্রেড’ হচ্ছে, যদিও পর্দার আড়ালে চুরি হয়ে যায় গোপন তথ্য।

ওটিএস-এর মূল হাতিয়ারটি হল একটি মার্কিন সংস্থা, ‘ক্রস ম্যাচ’। এরা মূলত দেশের আইন বিভাগ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হয়ে বায়োমেট্রিক সফ্‌টওয়্যার নিয়ে কাজ করে। ২০১১ সালে সংবাদ পত্রের শিরোনামে এসেছিল সংস্থাটি। খবর হয়েছিল, পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদে লাদেনকে হত্যা করার আগে এই ‘ক্রস ম্যাচ’-এর অ্যাপলিকেশন ব্যবহার করে দেখে নেওয়া হয়েছিল, ঠিক লোককে নিকেশ করা হচ্ছে কি না।

আধারের জন্যও ভারতে পাঠানো হয়েছিল ‘ক্রস ম্যাচ’। ২০১১ সালে ভারত সরকার থেকে ছাড়পত্র পায় তারা। ওই বছরই ৭ অক্টোবর ‘ক্রস ম্যাচ’ তাদের আঙুলের ছাপ নেওয়ার যন্ত্র (গার্ডিয়ান, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ক্যাপচার ডিভাইস) এবং চোখের তারা মেলানো যন্ত্র (আই স্ক্যান) ব্যবহারের অনুমতি পায়। বায়োমেট্রিক সিস্টেমটি সামলানোর জন্য আদৌ কতটা পারদর্শী ‘ক্রস ম্যাচ’, তা পরীক্ষা করে দেখে নিয়েছিল ভারতের ‘দ্য ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ (ইউআইডিএআই), গোটা দেশে আধার তৈরির দায়িত্বে রয়েছে যারা।

২০১২ সালে ‘ক্রস ম্যাচ টেকনোলজিস আইএনসি’ কিনে নেয় সানফ্রান্সিসকোর একটি সংস্থা ‘ফ্রান্সিসকো পার্টনারস’। গোটা পৃথিবীতে এদের ৫ হাজারেরও বেশি গ্রাহক। এদের আড়াই লাখেরও বেশি জিনিস ব্যবহার করা হয় অন্তত ৮০টি দেশে। সিআইএ-সহ ক্রস ম্যাচের গ্রাহক মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, নিরাপত্তা মন্ত্রক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। অর্থ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ, জটিল সব পরিকাঠামো ব্যবস্থায় এর অবাধ যাতায়াত। আর সেই ফাঁকেই বেহাত হয়ে যায় গোপন নথিপত্র।

‘ফ্রান্সিসকো পার্টনারস’-এর অংশীদার সংস্থা ছিল ইজরায়েলের ‘এনএসও গ্রুপ’। যারা আসলে ইজরায়েলি সাইবার অস্ত্র ডিলার বলেই আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত। ২০১৪ সালে ১২ কোটি ডলারে ‘এনএসও’-র অংশ কিনে নেয় ‘ফ্রান্সিসকো পার্টনারস’।

ভারতে ক্রস ম্যাচের পার্টনার ‘স্মার্ট আইডেন্টিটি ডিভাইস প্রাইভেট লিমিটেড’ (সংক্ষেপে স্মার্ট আইডি)। ২০০৮ সালে নয়ডার এই সংস্থাটি সঞ্জীব মাথুরের হাত ধরে বাণিজ্যিক ভাবে কাজ শুরু করে। এ দেশে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থায় তারাই পথিকৃত। গোটা আধার প্রোগ্রামেও নেতৃত্ব দিয়েছে এরাই।

ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ু, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ— এই ছ’টি রাজ্যে আধার নথিভূক্তিকরণের যাবতীয় দায়িত্ব সামলেছে ‘স্মার্ট আইডি’। ইতিমধ্যেই ১২ লক্ষেরও বেশি মানুষের আধার নথিভুক্ত করে ফেলেছে তারা।

WikiLeaks CIA Aadhaar Card Supreme Court সিআইএ উইকিলিক্স
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy