নিহত রাজস্ব আধিকারিক বিজয়া রেড্ডি। ছবি: টুইটার থেকে
বার বার অফিসে ঘুরেও জমির নথিতে গন্ডগোল মেটাতে পারেননি। এমনকি, আদালতের নির্দেশের পরেও সুরাহা হয়নি। সেই রাগেই অফিসে ঢুকে মহিলা রাজস্ব আধিকারিককে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। নিহতের নাম বিজয়া রেড্ডি। হায়দরাবাদের কাছে তেলঙ্গানার আবদুল্লাপুরমেটের এই ঘটনায় শিউরে উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহল। আতঙ্কিত বিজয়ার সহকর্মীরা তাঁর মৃতদেহ নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন।
অভিযুক্ত সুরেশ মুদিরাজুও আগুনে গুরুতর জখম হয়েছেন। হায়দরাবাদের কাছে হায়াৎনগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। বিজয়াকে বাঁচাতে গিয়ে এক গাড়ির চালক-সহ আরও তিন জন অল্প-বিস্তর অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। তাঁদেরও চিকিৎসা চলছে। মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোমবার দুপুরের দিকে জমির নথিপত্র নিয়ে বিজয়া রেড্ডির অফিসে ঢোকেন অভিযুক্ত সুরেশ। আধ ঘণ্টা পরে দরজা খুলতেই দেখা যায়, গায়ে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে— এমন অবস্থায় ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে আসছেন বিজয়া। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান তাঁর সহকর্মীরা। কম্বল চাপা দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টাও করেন তাঁরা। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিজয়ার মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন: ‘মানুষের গোপনীয়তা বলে কিছুই রইল না’ ফোনে আড়িপাতা নিয়ে বিরক্ত সুপ্রিম কোর্ট
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, লুকিয়ে একটি কেরোসিনের বোতল নিয়েই ওই ঘরে ঢুকেছিলেন সুরেশ। রচাকোণ্ডার পুলিশ কমিশনার মহেশ ভাগবত জানিয়েছেন, অভিযুক্ত সুরেশ মুদিরাজু ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ অগ্নিদগ্ধ। তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তিনি বলেন, ‘‘স্বতস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়ায় এই কাণ্ড ঘটাননি সুরেশ মুদিরাজু। পরিকল্পনা করেই মৃতার অফিসে এসেছিলেন তিনি।’’ একই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘‘আমরা তদন্ত করে দেখছি, অন্য কারও নির্দেশে সুরেশ এই ঘটনা ঘটিয়েছে কি না। কী ভাবে অফিসে ঢুকল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা এই ঘটনার তদন্ত করব, এবং ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে বিচারের আর্জি জানাব। আমরা মৃত্যুদণ্ডের আর্জি জানাব আদালতে।’’ তিনি এ দিন জানিয়েছেন, সুরেশের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলাও দায়ের করা হবে।
ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন তেলঙ্গানার মন্ত্রী সবিতা ইন্দিরা রেড্ডি। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের বোঝা উচিত, সরকারি কর্মীরা পরিষেবা দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। কোনও কর্মী-অফিসারের বিরুদ্ধে কারও কোনও অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা জানানোর নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে।’’ অন্য দিকে স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বিজয়ার অফিসের সামনে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন দফতরের কর্মীরা।
আরও পড়ুন: বাংলা-প্রেমের নামে অবাঙালি হেনস্থা, রাজ্য জুড়ে পাল্টা অসহিষ্ণুতা চর্চার চেষ্টা! উঠছে নিন্দার ঝড়
তেলঙ্গানায় জমির দলিলপত্র ও রেকর্ড ডিজিটাইজেশনের কাজ চলছে বেশ কিছু দিন ধরেই। কিন্তু সেই কর্মসূচি নিয়ে নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। উঠেছে নানা ধরনের দুর্নীতি, আমলাতন্ত্রের অভিযোগ। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। কিছু দিন আগেও মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করেছিলেন, সাধারণ মানুষের অভিযোগ খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্ত সুরেশের ঘনিষ্ঠদের সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর জমির নথিতে কিছু গন্ডগোল ছিল। ডিজিটাইজেশনের পরেও তা শোধরায়নি। এ নিয়ে বার বার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ তাঁর ঘনিষ্ঠদের। যদিও সুরেশের এই কাজকে সমর্থন করতে পারছেন না কেউই। অন্য দিকে অফিসের এত লোকজনের মধ্যেও কী ভাবে কেরোসিনের বোতল লুকিয়ে মহিলা আধিকারিকের অফিসে ঢুকে পড়লেন সুরেশ, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy