২০১৮ সালেই মিজ়োরামে দু’দশকের দ্বিমেরু রাজনীতির প্রথা ভেঙে দিয়েছিলেন তিনি। কংগ্রেসকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে দিয়ে দখল করেছিলেন বিরোধী দলনেতার পদ। জ়োরাম পিপলস্ মুভমেন্ট (জ়েডপিএম) নেতা লালডুহোমা এ বারের বিধানসভা ভোটে শাসক মিজ়ো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ)-কে পর্যুদস্ত করে মিজ়োরামের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন।
সোমবার সকালেই গণনার প্রবণতায় ইঙ্গিত মিলেছিল। দুপুর গড়াতেই স্পষ্ট হল, দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আইজলের কুর্সিতে বসতে চলেছেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দেহরক্ষী বাহিনীর প্রাক্তন প্রধান লালডুহোমা। ৪০ আসনের মিজ়োরাম বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জাদু সংখ্যা ২১। জ়েডপিএম জিতেছে ২৭টিতে। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী জ়োরামথাঙ্গার দল এমএনএফ ৯টি আসনে জিতেছে। এগিয়ে রয়েছে ১টিতে। বিজেপি ২ এবং কংগ্রেস ১টি বিধানসভা আসনে জয়ী হয়েছে।
আরও পড়ুন:
আশির দশকে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিলেন আইপিএস অফিসার লালডুহোমা। ১৯৮২ সালে অসম থেকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে সোজা ইন্দিরার নিরাপত্তা অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ইন্দিরা জানতে পেরেছিলেন, ১৯৭৭ সালে আইপিএস হওয়ার আগে রাজ্য প্রশাসনিক সার্ভিসের অফিসার হিসাবে মিজ়োরামের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী সি ছুংগার সহায়ক ছিলেন তিনি। লালডুহোমার রাজনৈতিক জ্ঞান দেখে ইন্দিরাই ১৯৮৪ সালে ফের তাঁকে মিজ়োরামে পাঠান। পুলিশের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে লোকসভার সাংসদ হন লালডুহোমা। দায়িত্ব পান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিরও।
রাজীব গান্ধীর জমানায় লালডেঙ্গার নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহীদের সঙ্গে ঐতিহাসিক মিজ়ো চুক্তির মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে শান্তি ফেরানোর ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। ঘটনাচক্রে, সে সময় মিজ়ো বিদ্রোহীদের অন্যতম নেতা ছিলেন জ়োরামথাঙ্গা। শান্তিচুক্তির পরে মিজ়োরামের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন লালডেঙ্গা।
আরও পড়ুন:
এর পরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালথানহাওলার সঙ্গে সংঘাতের জেরে কংগ্রেস ছেড়ে প্রথমে মিজ়ো ন্যাশনাল ইউনিয়ন গড়েন লালডুহোমা। পরে যোগ দেন আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী টি সাইলোর নেতৃত্বাধীন পিপলস কনফারেন্সে। পরের গন্তব্য ছিল লালডেঙ্গার দল এমএনএফ। লালডেঙ্গার মৃত্যুর পরে তাঁর উত্তরসূরি জোরামথাঙ্গার সঙ্গে বিরোধের জেরে লালডুহোমা তৈরি করেছিলেন জ়োরাম ন্যাশনালিস্ট পার্টি (জ়েডএনপি)। ২০০৩ এবং ২০০৮ সালে বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন:
২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটের আগে জ়েডএনপি এবং আরও কয়েকটি আঞ্চলিক দলকে নিয়ে জ়েডপিএম গড়েছিলেন তিনি। সদ্যগঠিত সেই দল জিতেছিল আটটি আসনে। এক দশক ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেসকে তিন নম্বরে ঠেলে হয়েছিল প্রধান বিরোধী শক্তি। অবশ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে ‘দল’ হিসাবে তখনও স্বীকৃতি না পাওয়ায় জেডপিএম প্রার্থীরা ‘নির্দল প্রার্থী’ হয়ে লড়েছিলেন। ওই ভোটে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের লালথানহাওলাকে সেরচিপ আসনে পরাস্ত করেন লালডুহোমা। এর পর আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘রাজনৈতিক দল’ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে জ়েডপিএম, তার সভাপতি হন লালডুহোমা।
I would like to thank all those who supported @BJP4Mizoram. Our Party will always work to ensure Mizoram scales new heights of progress. I appreciate the hardwork of our Party workers who reached out to the people of the state and highlighted our agenda of good governance.
— Narendra Modi (@narendramodi) December 4, 2023
I…
আরও পড়ুন:
নয়া দলের পদ নেওয়ায় দলত্যাগ বিরোধী আইনে বিধায়ক পদ হারালেও উপনির্বাচনে ফের সেরচিপে জয়ী হন। এ বারও সেই কেন্দ্রেই জিতেছেন তিনি। চলতি বছরের গোড়ায় মিজ়োরামের দ্বিতীয় বৃহত্তম পুরসভা লুংলেইয়ের ভোটে ১১টি আসনের সব ক’টিতেই জয়ী হয়েছেন জ়েডপিএম প্রার্থীরা। তার পরেই ভোটপণ্ডিতদের ‘নজরে’ পড়েছিল লালডুহোমার দল। কিন্তু অনেকেই সন্দিহান ছিলেন, ‘দশের গেরো’র পড়তে পারেন তিনি।
আরও পড়ুন:
গত ৪০ বছরের নির্বাচনী ইতিহাস বলছে, প্রতি দশকে মিজ়োরামে সরকার পাল্টায়। সেই ধারা মেনেই ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সরকার পাল্টে দিয়েছিলেন মিজ়োরা। ক্ষমতায় এসেছিল এমএনএফ। অর্থাৎ, ভোটের ধারা মেনে এ বারও তাদের ক্ষমতায় থাকার কথা ছিল। তা ছাড়া ইন্দিরার প্রাক্তন দেহরক্ষীর সাফল্যের পথে অন্তরায় ছিল আশির দশক থেকে চলে আসা দ্বিমেরু রাজনীতির (এমএনএফ বনাম কংগ্রেস) অঙ্কও। কিন্তু সব হিসাবই ভুল প্রমাণ করলেন তিনি।