প্রতিশ্রুতি থেকে গেল খাতায়-কলমেই।
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম চলতি বছরে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এলেও এখনই রেলের যাত্রী-ভাড়া কমার সম্ভাবনা খারিজ করে দিলেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। উল্টে ঘনিষ্ঠ শিবিরে যা ইঙ্গিত দিলেন, তাতে আগামী বাজেটে ফের এক প্রস্ত ভাড়া বাড়তে চলেছে রেলে।
অথচ, প্রতিশ্রুতি ছিল, তেলের (ডিজেলের) দাম বাড়লে যাত্রী-ভাড়া বাড়বে। আর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে এলে সেই অনুপাতে ভাড়াও কমবে। সেই সূত্র মেনে ছ’মাস আগে তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাড়া বাড়িয়েছিল রেল। কিন্তু এখন যখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম অনেকটা নেমে এসেছে, তখন কিন্তু যাত্রী-ভাড়ায় কোনও ছাড় দিতে নারাজ রেল মন্ত্রক। উল্টে রেলকর্তাদের যুক্তি, এই সুযোগে যতটা সম্ভব ক্ষতি মিটিয়ে নেওয়া উচিত রেলের। এ বিষয়ে মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, গত দেড়-দু’বছরে টিকিটের দাম বাড়লেও এখনও যাত্রী-ভাড়ায় ভর্তুকি দিতে হয় রেলকে। ফলে এখন যখন তেলের দাম কমেছে তখন ভাড়া একই রেখে নিজেদের আর্থিক ভিত যতটা সম্ভব মজবুত করে নেওয়া উচিত রেলের। এক রেলকর্তার বক্তব্য, “বিশ্ব বাজারে এখন তেলের দাম কমলেও দু’দিন বাদে যে আকাশ ছোঁবে না তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তখন তো লাফ দিয়ে ভাড়া বাড়ানো সম্ভব হবে না। উল্টে ভর্তুকি দিতে হবে রেলকে। তাই ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই এখন যাত্রী-ভাড়া একই রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
শেষ বার রেলে ভাড়া বেড়েছিল গত জুন মাসে। সে সময়ে রেলের সব শ্রেণিতে ১৪.২ শতাংশ হারে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় রেল। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম পড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। নিয়ম মতো প্রতি ছ’মাস অন্তর রেলের ভাড়া সমীক্ষা করার কথা মন্ত্রকের। সে হিসাবে চলতি ডিসেম্বর মাসে ফের সমীক্ষা হওয়ার কথা। সূত্র মানলে বর্তমান বাজারদর মেনে যাত্রী-ভাড়া কম হওয়া উচিত। কিন্তু তা যে হবে না কার্যত স্পষ্ট করে দিয়ে আজ রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু জানিয়েছেন, আপাতত ভাড়া কমানোর কথা ভাবছে না রেল। উল্টে ঘনিষ্ঠ শিবিরে তাঁর ইঙ্গিত, যাত্রী-ভাড়ায় যে বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি দিয়ে আসা হচ্ছে তা ভবিষ্যতে আরও কমানো হবে। সেই লক্ষ্যেই প্রথম পদক্ষেপ করা হবে আসন্ন বাজেটে। তাই আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের রেল বাজেটে এক প্রস্ত ভাড়া বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন রেলকর্তারা।
রেলের জমিকেও বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করে রাজস্ব ঘরে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে মন্ত্রক। মন্ত্রকের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, বিজ্ঞাপন এবং রেলের জমিকে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা পেতে পারে রেল। প্রাথমিক ভাবে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে আজ একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন সুরেশ প্রভু। ট্রেনের কামরা, ওয়াগন, স্টেশন, বেডিং এমনকী প্রয়োজনে বাসন-কোসনে বিজ্ঞাপন দিয়ে বাড়তি টাকা ঘরে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে রেল। ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি আগামী শুক্রবারের মধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy