Advertisement
E-Paper

ত্রিপুরায় অচলায়তন ভাঙার ডাক মমতার

এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরের মাঠে এসে সভা করেছেন মানিক সরকার। এ বার যেন তারই পাল্টা ছবি দেখল আগরতলা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শুধু ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে এসে সভা করলেন, তা-ই নয়, ডাক দিলেন আরও এক পরিবর্তনেরও। ১৯৯৩ সাল থেকে বামফ্রন্ট শাসন দেখছে ত্রিপুরা। তার মধ্যে ১৬ বছরই মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন মানিক।

আশিস বসু

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৮:০৩
ভিড়ে ঠাসা বিবেকানন্দ স্টেডিয়াম। মঙ্গলবার আগরতলায় লোকসভা ভোটের প্রচারে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।

ভিড়ে ঠাসা বিবেকানন্দ স্টেডিয়াম। মঙ্গলবার আগরতলায় লোকসভা ভোটের প্রচারে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।

এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরের মাঠে এসে সভা করেছেন মানিক সরকার। এ বার যেন তারই পাল্টা ছবি দেখল আগরতলা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শুধু ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে এসে সভা করলেন, তা-ই নয়, ডাক দিলেন আরও এক পরিবর্তনেরও।

১৯৯৩ সাল থেকে বামফ্রন্ট শাসন দেখছে ত্রিপুরা। তার মধ্যে ১৬ বছরই মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন মানিক। মঙ্গলবার আগরতলার সভা থেকে এই একটানা শাসনকে অচলায়তন বলে বর্ণনা করে তা ভাঙার ডাক দিলেন মমতা। তাঁর কথাতেই স্পষ্ট, ত্রিপুরার নতুন প্রজন্মই তাঁর নিশানা। সেই প্রজন্ম, যাঁরা জন্ম থেকে দেখে আসছেন রাজ্যের বাম শাসন। যাঁরা দেখে আসছেন বছরের পর বছর বিরোধী আসনে বসা গোষ্ঠী কোন্দলে দীর্ণ-জীর্ণ কংগ্রেসকে। সেই প্রজন্মের ভোটারদের কাছে মমতার আবেদন, “এই অচলায়তন ভেঙে ফেলুন। তৃণমূলের পাশে আসুন।” উদ্ধৃত করলেন রবীন্দ্রনাথকে, ‘জীর্ণ পুরাতন যাক ভেসে যাক...।’

আপাতত লোকসভা ভোট লক্ষ্য হলেও তিনি যে ত্রিপুরায় শুধু সেই প্রচারে আসেননি, তা এ দিন স্পষ্ট করে দিলেন মমতা। ইঙ্গিত দিলেন, তাঁর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ২০১৮-এর বিধানসভা ভোট। যে ভাবে ২০১১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম জমানায় দাঁড়ি টেনেছেন, সেই ভাবেই দেশের এখন একমাত্র বামশাসিত রাজ্য ত্রিপুরা থেকে হটাতে চান বামেদের। আজ আগরতলার বিবেকানন্দ স্টেডিয়ামে (আস্তাবল ময়দান) দলের সমাবেশে মমতা আওয়াজ তুললেন, ‘‘কেন্দ্রের এত বঞ্চনা, সিপিএমের দেওয়া এত যন্ত্রণা কখনও দেখেনি কেউ, তাই তো এখানে আনতে হবে পরিবর্তনের ঢেউ।” কাঠফাটা রোদ্দুরে ঠায় বসে-দাঁড়িয়ে থাকা লক্ষাধিক মানুষের কাছে মমতার দাবি, “একটা নয়, ত্রিপুরার দু’টো আসনই তৃণমূলের চাই।”

পশ্চিমবঙ্গের মতো ত্রিপুরাতেও মমতার এক এবং একমাত্র মন্ত্র, পরিবর্তন চাই। তাঁর কথায়, “বাংলা-সহ উত্তর-পূর্বের প্রতিটি রাজ্যের স্বার্থেই কেন্দ্রে নতুন সরকার গড়া জরুরি। যেখানে তৃণমূলের ভূমিকা হবে অনেক বেশি শক্তিশালী।” মুকুল রায়ের কথায়, “নির্ণায়কের ভূমিকায় থাকবে তৃণমূল।” মমতার আজকের বক্তৃতার অধিকাংশ জুড়ে ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি, অপশাসন। পাশাপাশি, রাজ্যে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের গোপন আঁতাঁতের অভিযোগও তোলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “ভোট এলেই কংগ্রেস-সিপিএম কাছাকাছি হয়ে যায়।” অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলঙ্গানা ও সীমান্ধ্র সৃষ্টি তাঁর যে পছন্দের নয়, তা স্পষ্ট করেই তিনি বলেন, “বিজেপি-কংগ্রেস সিন্ডিকেট করে রাজ্যটাকে ভাগ করে দিল। দেশটাকেও বিক্রি করে দেবে।” মমতা বলেন, “কংগ্রেস ভাবে সবাই তাদের চাকর-বাকর। বাংলার মতো উত্তর-পূর্ব ভারতও উপেক্ষিত। তাই কেন্দ্রে পরিবর্তন জরুরি।” কংগ্রেসের এই আচরণের জন্যই তাঁকে তৃণমূল গড়তে হয়েছে বলে তিনি জানান।

মানিক যে বাংলায় গিয়ে সিপিএমের সভায় অন্যতম প্রধান বক্তা হয়েছেন, সে কথা তাঁর নাম না করে উল্লেখ করেছেন মমতা। বলেছেন, “মাঝে মাঝে বাংলায় গিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন এখানকার সিপিএম নেতারা।” তাঁর প্রশ্ন, “নিজের রাজ্যে উন্নয়ন হয়নি কেন? শিল্প নেই কেন? এর উত্তর কে দেবে? আসলে এ রাজ্যের সরকারের না আছে ভিশন, না আছে মিশন, ফলে নেই কোনও অ্যাকশন।” তাঁর অভিযোগ, ত্রিপুরার স্বাস্থ্য ক্ষেত্র বেহাল, শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ কম। শাসকদলের স্বজনপোষণ, রাজ্য সরকারের দুর্নীতির কথাও উল্লেখ করেন। বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়েছি। দু’টাকা কেজি দরে চাল, দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের সাইকেল, ১ লক্ষ ২০ হাজার তরুণ-তরুণীর পুলিশে চাকরি, শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা, বন্ধ চা-বাগান কর্মীদের সুবিধা দিয়েছে তৃণমূল সরকার।” ত্রিপুরার উত্তরে ‘কমলপুর গণহত্যার’ ইতিহাসও ছুঁয়ে যান মমতা। তুলনা টানেন পশ্চিমবঙ্গের বাম জমানার ছোট আঙারিয়া, নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর, নেতাই-কাণ্ডের সঙ্গে। তাঁর হুঁশিয়ারি, “৩৪ বছরের সিপিএমের শাসনের অবসান ঘটিয়েছি, এখানেও ঘটবে। ঘটবে তৃণমূলের নেতৃত্বেই।”

এর পাশাপাশি নৃপেন চক্রবর্তীর প্রসঙ্গও তোলেন মমতা। বলেন, “যে নৃপেন চক্রবর্তী ত্রিপুরার জন্য এত কষ্ট করেছেন, তাঁর সঙ্গে এঁরা কী ব্যবহার করেছেন!” স্মৃতিমেদুর তৃণমূল নেত্রী এর পরে জানান, “রবীন্দ্রনাথের ‘হে অতীত, কথা কও, কথা কও...’এই কবিতাটি নৃপেনবাবু আমাকে শুনিয়েছিলেন। আমি তাঁকে শুনিয়েছিলাম গান, ‘তুমি কি কেবলই ছবি....’।” ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলার আত্মিক তথা সাংস্কৃতিক যোগাযোগের কথাও তাঁর বক্তৃতায় উঠে আসে। তিনি বলেন, “রবীন্দ্রনাথ যেমন বাংলার, তেমনই ত্রিপুরারও। বাংলার সঙ্গে ত্রিপুরার যোগ নিবিড় হয়ে ওঠে রবীন্দ্রনাথের হাত ধরেই।”

ত্রিপুরায় তাঁর আগমন প্রায় ১০-১১ বছর বাদে। কেন এত দিন আসেননি, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মমতা বলেন, “এত দিন ত্রিপুরায় আমাদের ভাল, শক্তিশালী সংগঠক ছিল না। তাই গত বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থীই দেয়নি। এখন হয়েছে। তাই বারবার আসব। তিন মাস অন্তর আসব।” সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার অনুরোধও করেন আজকে আস্তাবল মাঠে উপস্থিত লক্ষাধিক দলীয় কর্মী-সমর্থকের উদ্দেশে।

লোকসভা ভোটের লক্ষ্যে আজই রাজ্যের বাইরে প্রথম জনসভা করলেন মমতা। কাল যাবেন গুয়াহাটিতে। ১২ তারিখ দিল্লির রামলীলা ময়দানে অণ্ণা হজারের সঙ্গে যৌথ সভা। তার পরে সভা হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশেও। এ দিনের সভায় তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাজ্যের বাইরে সংগঠন বিস্তারের জন্য কংগ্রেস ও বিজেপিকে বাদ দিয়ে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গেই বেশি যোগাযোগ রাখছেন তিনি। সারা দেশের মানুষের কাছেই যে যাবেন, তা-ও জানিয়ে দেন তিনি।

আজকে মঞ্চে হাজির ছিলেন ত্রিপুরার বেশ কয়েকটি দলের নেতারা। ছিলেন ত্রিপুরা গ্রামীণ কংগ্রেসের সভাপতি সুবল ভৌমিক, জেডিইউ নেতা সুন্দর লাল, গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্টের আহ্বায়ক নকুল দাস, উপজাতি সম্প্রদায়ের নেতা রতিমোহন জামাতিয়া, সংখ্যালঘু নেতা ইদ্রিস মিয়াঁ-সহ আরও অনেকে। একই সঙ্গে মমতা দরজা খোলা রাখলেন বামপন্থীদের মধ্যে যাঁরা শুভবুদ্ধি সম্পন্ন, তাঁদের জন্যও। ডাক দিলেন, “তৃণমূলের মুক্ত অঙ্গনে আসুন।”

মুখপাত্র অমিত

ভোটের মুখে তৃণমূলের সর্বভারতীয় প্রধান মুখপাত্র হচ্ছেন অমিত মিত্র। মমতাকে যে হেতু রাজ্য চালাতে এবং সর্বত্র ভোট-প্রচার করতে হচ্ছে, তাই দিল্লিতে অমিতকেই মিডিয়া সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাঁর সাহায্যে থাকছেন ডেরেক ও’ব্রায়েন। আর সাংগঠনিক সমন্বয়ের দায়িত্বে মুকুল রায়।

tripura mamata banerjee trinamool
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy