Advertisement
E-Paper

দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে বিহার-রেল তরজা

নেপথ্যে কে বা কারা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দুর্ঘটনার কারণ নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। অথচ দুর্ঘটনার একটু পরেই দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়ে গেল রেল ও বিহারের রাজ্য প্রশাসনের মধ্যে! রেলের দাবি, এটা মাওবাদী হামলা। আর বিহার সরকারের বক্তব্য, রেলের প্রযুক্তিগত বা রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটিই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। দিল্লিতে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাও কিন্তু নাশকতার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৪ ০২:৫৪

নেপথ্যে কে বা কারা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দুর্ঘটনার কারণ নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। অথচ দুর্ঘটনার একটু পরেই দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়ে গেল রেল ও বিহারের রাজ্য প্রশাসনের মধ্যে! রেলের দাবি, এটা মাওবাদী হামলা। আর বিহার সরকারের বক্তব্য, রেলের প্রযুক্তিগত বা রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটিই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। দিল্লিতে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাও কিন্তু নাশকতার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়নি।

গত কাল রাত দু’টো নাগাদ লাইনচ্যুত হয় নয়াদিল্লি-ডিব্রুগড় রাজধানী এক্সপ্রেস। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সংবাদমাধ্যমের সামনে ওই দুর্ঘটনার দায় মাওবাদীদের দিকে ঠেলে দেন রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া। তিনি বলেন, “এটা নাশকতা। প্রাথমিক তদন্তে দুর্ঘটনার পিছনে মাওবাদীদের হাত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওই এলাকায় মাওবাদীরা দু’দিনের বন্ধ ডেকেছিল। তা ছাড়া, ওই এলাকায় প্রায় একই সময়ে মাওবাদী হামলায় একটি মালগাড়িও লাইনচ্যুত হয়েছে।” রেলমন্ত্রী সকাল-সকাল এই মন্তব্য করায় দুর্ঘটনার গোটা দায়টিই এসে পড়ে বিহার সরকারের ঘাড়ে। কারণ রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রাজ্য প্রশাসনের। এমনকী, রেলকে এলাকার মাওবাদী বা জঙ্গি গোষ্ঠীর গতিবিধি সম্পর্কে অবহিত করার দায়িত্বও তাদের।

অভিযোগের আঙুল বিহার প্রশাসনের দিকে উঠতেই দুর্ঘটনার দায়িত্ব রেলের উপর চাপিয়ে দেন সাধারণ জেলাশাসক কুন্দন কুমার। শুরু হয় দোষারোপের পালা। কুন্দন বলেন, “সম্ভবত রেলের প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণেই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে।” জবাবে জেলার প্রশাসনিক কর্তার দাবি উড়িয়ে ছপরার বিজেপি সাংসদ রাজীবপ্রতাপ রুডির বক্তব্য, “কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা তো অবশ্যই ঘটেছে। বহু জায়গায় ফিশপ্লেট খোলা পাওয়া গিয়েছে।” রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান অরুণেন্দ্র কুমারও দিল্লি থেকেই জানান, “লাইনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে মাওবাদীরা।”

যদিও ওই তত্ত্ব মানতে রাজি হননি জেলার পুলিশ সুপার সুধীর কুমার। বিস্ফোরণের তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়ে তাঁর বক্তব্য “মাওবাদী হামলার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সম্ভবত প্রযুক্তি বা রক্ষণাবেক্ষণ ত্রুটির কারণেই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে।” জেলা পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, মাওবাদীরা মালগাড়ি লাইনচ্যুত করার জন্য বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। বিস্ফোরক ব্যবহার করায় সেখানে যে গর্ত হয়েছে, রাজধানীর দুর্ঘটনাস্থলে তেমন কোনও গর্ত মেলেনি। জেলা পুলিশের তথ্যের ভিত্তিতে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁজিও জানিয়ে দেন, “দুর্ঘটনার পিছনে মাওবাদী হামলার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রেলের গাফিলতির কারণেই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা

হচ্ছে।” প্রাথমিক ভাবে রাজ্য প্রশাসনের বক্তব্য, গরমে লাইন বেঁকে গিয়েই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। লাইন মেরামতির দায়িত্ব বর্তায় রেলের। তাই রাজ্য প্রশাসন প্রথম থেকেই গোটা ঘটনাটির পিছনে রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রযুক্তিগত ত্রুটির দিকে আঙুল তুলেছে। এই চাপানউতোরের মাঝে রেল এবং রাজ্য, দু’পক্ষের ফরেন্সিক গোয়েন্দাই দুর্ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ দিন নিজেই বিষয়টি তোলেন মোদী। পরে রবিশঙ্কর প্রসাদ জানান, আগামিকাল রেলমন্ত্রী দিল্লি ফিরলে আলোচনা করে কেন্দ্রীয় সরকার এই নিয়ে বিবৃতি দেবে। তবে নাশকতার বিষয়টি তাঁরা উড়িয়ে দেননি।

রেল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপের খেলা অবশ্য নতুন নয়। ইউপিএ আমলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১০ সালে দু’টি বড় রেল দুর্ঘটনা ঘটেছিল। প্রথমটি পশ্চিম মেদিনীপুরে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়া। দ্বিতীয়টি সাঁইথিয়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা বনাঞ্চল এক্সপ্রেসকে পিছনে থেকে এসে ধাক্কা মারে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস। তখন রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বাম সরকার। মমতা অভিযোগ করেছিলেন, নাশকতার কারণে দু’টি ঘটনা ঘটেছে। পাল্টা জবাবে তৎকালীন বাম নেতৃত্ব দুর্ঘটনার পিছনে রেলের গাফিলতিকেই দায়ী করেছিলেন।

পূর্বসূরিদের পথেই যেন সদানন্দ গৌড়া এ দিন রাজ্যের ঘাড়ে দোষ চাপালেন।

অনেকেই বলছেন, জেডিইউ তথা নীতীশ কুমারের সঙ্গে বিজেপির যে টানাপড়েন চলছে, এই চাপানউতোর তাতে নতুন মাত্রা যুক্ত করল। গৌড়া-রুডির মন্তব্য এবং তার পরপরই বিহারের প্রশাসনিক কর্তাদের পাল্টা জবাব সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ অবশ্য পরে কিছুটা রাশ টানার চেষ্টা করেছেন।

তবে ডিব্রুগড়-রাজধানীর আগে কোন ট্রেন গিয়েছে, ধন্দ রয়েছে তা নিয়ে। জেলাশাসক কুন্দন কুমার জানিয়েছেন, “ওই ট্রেনটির মাত্র ১৫ মিনিট আগে ওই লাইন দিয়ে একটি এক্সপ্রেস ট্রেন গিয়েছিল।” রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, ওই কম সময়ের মধ্যে মাওবাদীদের পক্ষে ওই বড় মাপের নাশকতা ঘটানো সম্ভব নয়। অন্য দিকে রেল কর্তাদের দাবি, রাজধানীর আগে ওই লাইন দিয়ে যায় গোন্ডা-আসানসোল এক্সপ্রেস। তার পর ৬৬ মিনিট পরে রাজধানী যায়।

যে কোনও ধরনের নাশকতা ঘটানোর জন্য ওই সময় যথেষ্ট বলেই দাবি রেল কর্তাদের।

rajdhani express derailed modi bihar investigation continues
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy