Advertisement
০২ মে ২০২৪

মোদীর বক্তব্য ছাঁটা হয়েছে, মানল প্রসার ভারতী

নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাৎকার সরকারি প্রচারমাধ্যম দূরদর্শনে কাটছাঁট করে সম্প্রচার করার অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়ে ভোট বাজারে নতুন বিতর্ক উস্কে দিলেন প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকার। প্রসার ভারতীর বোর্ডের সদস্যদের উদ্দেশে লেখা এই চিঠিতে জহরবাবু লিখেছেন, দূরদর্শন ও বেতারের স্বাধীনতা চেয়ে দু’বছর ধরে সরকারের কাছে দরবার করে ব্যর্থ হয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৪ ০৩:১৩
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাৎকার সরকারি প্রচারমাধ্যম দূরদর্শনে কাটছাঁট করে সম্প্রচার করার অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়ে ভোট বাজারে নতুন বিতর্ক উস্কে দিলেন প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকার। প্রসার ভারতীর বোর্ডের সদস্যদের উদ্দেশে লেখা এই চিঠিতে জহরবাবু লিখেছেন, দূরদর্শন ও বেতারের স্বাধীনতা চেয়ে দু’বছর ধরে সরকারের কাছে দরবার করে ব্যর্থ হয়েছেন। তার ফলশ্রুতিতেই এই ধরনের অভিযোগের মুখে পড়ে বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে দূরদর্শনকে। বেতার-দূরদর্শনের কাজে কেন্দ্রীয় সম্প্রচার মন্ত্রক যথেচ্ছ হস্তক্ষেপ করে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে প্রিয়ঙ্কা গাঁধীকে ‘মেয়ের মতো’ বলে মন্তব্য করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী, আর সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলকে বলেছিলেন, ‘বন্ধুবর’। কিন্তু বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থীর দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই অংশটুকু ছেঁটে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে দূরদর্শনের বিরুদ্ধে। যদিও দূরদর্শনের ডিজি-র বক্তব্য, একেবারেই কারিগরি প্রয়োজন ছাড়া সাক্ষাৎকারটির কোনও অংশ বাদ দেওয়া হয়নি। অবিকৃত অবস্থাতেই তা সম্প্রচার করা হয়েছে। তবে বিজেপি নেতৃত্ব এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, প্রিয়ঙ্কার আক্রমণ ভোঁতা করে দিতেই মোদী তাঁকে ‘মেয়ের মতো’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। একই ভাবে আহমেদ পটেলের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের কথা বলে কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দূরদর্শন এই অংশটি বাদ দিয়েছে, এবং শাসক দলের অঙ্গুলিহেলনেই সেই অংশ ছেঁটে দেওয়া হয়েছে।

দূরদর্শনের ডিজি-র সাফাই উড়িয়ে প্রসার ভারতীর সিইও জহরবাবু তাঁর চিঠিতে সম্প্রচার মন্ত্রককেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। তিনি বলেছেন, সরকারি প্রচার মাধ্যমগুলিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বার করে আনার লক্ষ্য নিয়েই প্রসার ভারতী গড়া হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রক সে বিষয়টি কখনওই মাথায় রাখেনি। এক জন তরুণ মন্ত্রী পেয়েও তাঁকে বিষয়টির গুরুত্ব বোঝাতে পারেননি মন্ত্রকের কর্মীরা।

জহরবাবু বলেছেন, ২৬ এপ্রিল গাঁধীনগরে মোদীর সাক্ষাৎকারটি রেকর্ডিংয়ের পরে তা সম্প্রচারে দেরি হওয়ায় প্রশ্ন ওঠে। তিনি কোঁজ নিলে দূরদর্শনের বার্তা বিভাগ জানায়, সাক্ষাৎকারটি শীঘ্রই প্রচার করা হবে। জহরবাবু তাঁদের বলেন, বিষয়টি তাড়াতাড়ি সম্প্রচার করলে দূরদর্শনের টিআরপি বাড়বে। ভারসাম্য রাখতে অন্য পক্ষের গুরুত্বর্পূণ কারও সাক্ষাৎকার নেওয়ার পরামর্শও দেন। কিন্তু বার্তা বিভাগ পরে তাঁকে জানায়, সরকার পক্ষের কারও সাক্ষাৎকার তারা জোগাড় করে উঠতে পারেনি। এর পরে গত রবিবার দূরদর্শনে মোদীর একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করা হয়। কিন্তু মোদীর কিছু বক্তব্য কাটছাঁটের অভিযোগ ওঠে। বিজেপি নেতৃত্ব সেই কাটছাঁট হওয়া অংশ সংবাদ মাধ্যমকে দেখিয়েও দেন।

জহরবাবু চিঠিতে মন্তব্য করেছেন, সরকার পক্ষের কোনও কোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সম্পর্কে কিছু কথা বলা হয়েছিল বলেই দূরদর্শনের বার্তা বিভাগ তা সম্প্রচারের সাহস দেখায়নি। তাঁর মত অনুযায়ী, বেতার-দূরদর্শনে সাংবাদিক নিয়োগ থেকে শুরু করে গোটা বিষয়টিতে কেন্দ্রীয় সম্প্রচার মন্ত্রক এমন ভাবে হস্তক্ষেপ করে যে স্বায়ত্তশাসনের উদ্দেশ্য কখনওই পূরণ হওয়ার নয়। অর্থাৎ চাকরি বাঁচাতেই দূরদর্শনের কর্মীরা মোদীর বক্তব্য কাটছাঁট করেছেন। জহরবাবুর এই চিঠি নিঃসন্দেহে বিজেপির হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দেবে।

মোদীর মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রিয়ঙ্কা তাচ্ছিল্য করে তা উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। প্রিয়ঙ্কা বলেন, “আমি রাজীব গাঁধীর মেয়ে। জীবনে যদি সব থেকে কাউকে ভালোবেসে থাকি, তিনি হলেন আমার বাবা।” মোদীর বন্ধুত্বের দাবি আজ সপাটে খারিজ করে দেন সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলও। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পটেল বলেন, “ডাহা মিথ্যা কথা বলছেন মোদী। ভোটের মধ্যে এ সব বলে ভোটারদের ধন্দে ফেলতে চাইছেন।” তাঁর কথায়, “বিজেপিতেই যখন মোদীর কোনও বন্ধু নেই, তখন উনি আমার বন্ধু হবেন কী ভাবে?” যদিও আহমেদ পটেল স্বীকার করেন, অতীতে এক বার তাঁর বাড়িতে এসেছিলেন মোদী। তবে, তাঁর কথায়, সেটা অন্তত বিশ, ত্রিশ বছর আগের ঘটনা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

modi prasar bharati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE