এক বার নয়। পর পর দু’বার। ২০১১-র পরে আবার ২০১৩ সালেও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল উবের ট্যাক্সিচালক শিবকুমার যাদবের বিরুদ্ধে। সে বারও গ্রেফতার হওয়ার পরে ছ’মাসের মাথায় জামিন পেয়ে যায় সে।
শুধু ধর্ষণ নয়, শিবকুমারের অতীতে অপরাধের শেষ নেই। শ্লীলতাহানি, বেআইনি অস্ত্র রাখা সবই করেছে সে। পুলিশ জানিয়েছে, এত সবের পরেও চরিত্রের জাল শংসাপত্র জোগাড় করে উবেরে কাজ নিয়েছিল সে। শিবকুমার নিজের গ্রামে এতই কুখ্যাত যে সেখানকার মহিলারা সন্ধের পরে এই লোকটির জন্য বাইরে বেরোতে ভয় পেতেন। তাই উত্তরপ্রদেশের মণিপুরী গ্রামের রামনগরে এখন উৎসবের হাওয়া। এখানেই বেড়ে উঠেছে শিব। গ্রামেরই কৃষক কুষান সিংহ বললেন, “ওর যৌন অপরাধের সীমা নেই। এ গ্রামে এমন কোনও মেয়ে নেই, যাকে ও উত্ত্যক্ত করেনি। অন্তত এই রকম ২৬-২৭টি ঘটনা ধরে নিন পুলিশ পর্যন্ত পৌঁছয়ইনি।” কুষানের কথায় সায় দিয়ে এক পুলিশ অফিসারও জানালেন, “মণিপুরী জেলায় আমরা ওকে ঢুকতে দিই না। মানুষ ভয় পেলেও ওর বিরুদ্ধে খুব কম সময়েই অভিযোগ জানান। সবাই ভাবেন, গ্রামের নাম খারাপ হবে!”
রামনগরের মানুষ তাই শিবকুমারের গ্রেফতারের খবরে হুল্লোড়ে মেতেছেন। কেউ হালুয়া তৈরি করে বিলোচ্ছেন। কেউ আবার মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন। শিবকুমারের নাম পুলিশের খাতায় প্রথম উঠেছিল ২০০৩ সালে। তখন তার বয়স ২১। মণিপুরীতেই একটি মেয়ের শ্লীলতাহানি করে তাকে মারধর করে সে। তার পর ২০০৯ সাল পর্যন্ত গুন্ডা আইনে বেশ কয়েক বার আটক করা হয় শিবকুমারকে। বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।
এর পর ২০১১। দিল্লির ছত্তরপুরে ট্যাক্সিতে গত সপ্তাহের মতো একই কায়দায় আর একটি মেয়েকে ধর্ষণের কথা প্রকাশ্যে এসেছে কাল। আজ আবার জানা গিয়েছে, ২০১৩-এ মণিপুরীতে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে সে। কিন্তু সেই অভিযোগের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায় সে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধে হাত পাকিয়েছে শিবকুমার। এ বছরের গোড়াতেই মণিপুরীর এলাউ অঞ্চলের এক মহিলাকে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এই এলাকা থেকে আগে নাকি আরও আট বার অভিযোগ এসেছে শিবকুমারের নামে। কিন্তু প্রমাণাভাবে নিজেকে বাঁচাতে সমর্থ হয়েছিল এই ট্যাক্সিচালক। শিবকুমারের বিরুদ্ধে গত ২৬ নভেম্বর উবেরের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন আর এক তরুণীও। শিবকুমারের ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন তিনি। তরুণীর অভিযোগ, শিবকুমার তাঁর সঙ্গে অশ্লীল ব্যবহার করে।
বাবা চেয়েছিলেন ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হোক। আর শিবকুমারের প্রাক্তন শিক্ষক মহেন্দ্র যাদব জানাচ্ছেন, দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনায় ভালই ছিল সে। কিন্তু তার পর কী ভাবে ছেলেটি অপরাধপ্রবণ হয়ে গিয়েছে, বোঝেননি কেউ। এখন ‘কীর্তিমান’ ছেলেকে নিয়ে লজ্জিত তার মা গঙ্গা শ্রী। যিনি চান না, ছেলেকে কেউ আইনি সাহায্য করুক। তাঁর কথায়, “কোনও মা ভাবতে পারে না তার ছেলে এমন পৈশাচিক কাণ্ড ঘটাবে। অনেক বার ওকে ঠিক পথে ফেরাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি আমরা। কিন্তু আর নয়। অপরাধের মাসুল ওকে দিতেই হবে।”
গ্রামের লোকেরা জানাচ্ছেন, টাকা আর দামি দামি জিনিস চেয়ে মাঝেমধ্যেই বাবা-মায়ের উপরে চাপ সৃষ্টি করত শিবকুমার। তহসিলদার সিংহ নামে এক গ্রামবাসী বললেন, “ছ’মাস আগেই গ্রামে ঢুকে পড়েছিল। গাড়ি কিনে দাও বলে বাবাকে ব্ল্যাকমেল করছিল। নিমগাছে উঠে গলায় ফাঁস দিয়ে নাটক করছিল। ঠিক ‘শোলে’-র মতো। ওর জেদের কাছে শেষে হার মানেন বাবা।”
ছ’মাস পরে গত শুক্রবার রাতে সেই গাড়িটিতেই শিবকুমারের হাতে নিগৃহীত হতে হয়েছিল দিল্লির তরুণীকে। ধর্ষণের পরে বাড়ির সামনের রাস্তায় তরুণীকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল সে। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় ভুলবশত তরুণী সেই কথা এক বন্ধুকে জানাতে গিয়ে এসএমএস পাঠিয়ে দেন শিবকুমারেরই মোবাইলে। তরুণীর হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে শিবকুমারই নিজের নম্বর থেকে ফোন করেছিলেন তরুণীর মোবাইলে।
“আই হ্যাভ বিন রেপড বাই মাই ক্যাব ড্রাইভার” তরুণীর লেখা সেই এসএমএসটা পেয়েই সতর্ক হয়ে যায় শিবকুমার। তার পরেই সে নেপালে পালানোর ছক কষে। আজ পুলিশ শিবের দুই বন্ধু, গৌরব ও কমলকেও জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে। এরা মাঝেমাঝে শিবের গাড়ি চালাত।
ফের রাজধানীতে ধর্ষণের ঘটনায় চিন্তিত আমির খান এবং সোনম কপূরের মতো বলিউড সেলিব্রিটিরা। আমির আজ নিজের ছবির প্রচারে জানিয়েছেন, “দিল্লিতে যা হল, তা দুর্ভাগ্যজনক। যখনই এই সব খবর পড়ি, অসম্ভব কষ্ট হয়।” তাঁর মতে, ধর্ষণ ঠেকাতে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থাই একমাত্র পথ। আমিরের কথায়, “এখনও ধর্ষণে সাজা পেতে যথেষ্ট সময় লেগে যায়। মহিলাদের পক্ষে যে চাপটা নেওয়া কষ্টকর।” আর সোনম জানিয়েছেন, মুম্বইয়ের মতো দিল্লিতে মেয়েরা ততটা সুরক্ষিত নন। উবের নয়, এই ঘটনায় সোনম কিন্তু দুষেছেন সরকারকেই।