ঘোড়া কেনাবেচার চেষ্টার অভিযোগ ছিলই। বিধায়কদের মুখের সামনে মন্ত্রিত্বের টোপ বা নগদ আর্থিক পুরস্কারের গুজবও পটনার আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে। এর মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝি প্রকাশ্য সভায় বিধায়কদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, “আমার কাছে অনেক মন্ত্রী-পদ খালি আছে। যাঁরা চাইবেন তাঁরা আমার দিকে আসতে পারেন।” আস্থা ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে জিতনরামের এই সরাসরি সওদার ‘ডাক’ সার্বিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। জিতনরামের সমর্থনে এগিয়ে আসা বিজেপি এই ঘটনায় রীতিমতো অস্বস্তিতে। আর ‘বিরোধী’ নীতীশ কুমার শিবির জিতনরামের কথাকে অস্ত্র করে সরব।
‘দলিত চেতনা’ মঞ্চের সভায় জিতনরামের এই প্রকাশ্য মন্তব্যে অস্বস্তি বেড়েছে তাঁর শিবিরেই। যদিও মুখ্যমন্ত্রী নিজে কিন্তু হাসছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমি তো নীতীশজিকেও ডাক দিয়েছি। তিনিও যদি চান মন্ত্রী হওয়ার জন্য আসতে পারেন। এ তো ‘খুলে আম অফার’।” জেডিইউ নেতা অনিল পাঠক বলেছেন, “বিজেপি সঙ্গে থাকার বার্তা দিয়েছে মাঁঝিজিকে। এই অভিযোগ আমরা আগেই করেছিলাম। সেটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। আমরা বলেছিলাম, মুখ্যমন্ত্রীর দিক থেকে বিধায়কদের টোপ দেওয়া হচ্ছে। এ বার সেটাও মাঁঝিজি নিজেই প্রমাণ করে দিলেন।” তাঁর কথায়, “বিহার রাজনীতিতে এমন ঘটনা আগে ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই।” এই অস্বস্তিকর পরিবেশে মাঁঝির বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে এগিয়ে এসেছেন তাঁর শিবিরে থাকা মন্ত্রী বিনোদ বিহারী। তিনি বলেন, “আমাদের মন্ত্রী-পদ খালি আছে। মুখ্যমন্ত্রী তাই বলেছেন। তিনি লুকিয়ে কিছু বলেননি। যাঁরা সমর্থন দেবেন তাঁরা তো মন্ত্রী হবেনই।” আস্থা ভোটের একদিন আগে এক জন মুখ্যমন্ত্রী এমন প্রস্তাব দেওয়ার অর্থ তো সরাসরি কেনাবেচাকে উৎসাহিত করা? এই প্রশ্নের জবাবে বিনোদ বিহারীর বক্তব্য, “কথা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এমন কথা বলেছেন। একে এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।” এবং তাঁর পাল্টা অভিযোগ, নীতীশের ঘনিষ্ঠ এক বিধায়ক তো স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে ‘জানে মারা’-র হুমকি দিয়েছেন। তা পুলিশকে জানানোও হয়েছে। তবে অস্বস্তিতে পড়া বিজেপি এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চায়নি। অস্বস্তি ধরা পড়েছে বিজেপির পরিষদীয় দলনেতা নন্দকিশোর যাদবের গলায়ও, “এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেব না।”
এ দিকে, গত কাল আরজেডির বিধানসভার নেতা আব্দুল বারি সিদ্দিকির বাড়িতে দলের সব বিধায়ককে নৈশ ভোজে ডাকা হয়। সেখানে আরজেডির ২৪ বিধায়কের মধ্যে ২১ জন উপস্থিত ছিলেন। ফলে আরজেডির বিধায়কদের ঐক্য নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। ২৪৩ বিধায়কের বিধানসভায় ১০টি পদ খালি। ফলে ২৩৩ বিধায়কের বিধানসভায় আস্থা ভোটের ‘ম্যাজিক’ সংখ্যা ১১৭। বিধায়কের মধ্যে জেডিইউয়ের ৯৯ জন বিধায়ক নীতীশের দিকে। তাঁর দিকে রয়েছেন আরজেডি, কংগ্রেস, সিপিআই এবং ১ নির্দল সব মিলিয়ে ১৩০ জনের সমর্থন। অন্য দিকে, মাঁঝির দিকে জেডিইউয়ের ১২ বিধায়ক, বিজেপির ৮৭ বিধায়ক এবং ৪ নির্দল। সেই অর্থে নীতীশের কাছে উপযুক্ত সংখ্যক বিধায়ক আছেন। বিজেপিকে নিয়ে মাঁঝির শিবিরের সংখ্যা ১০৩। অর্থাৎ আস্থা ভোটে জিততে মাঁঝির প্রয়োজন আরও ১৪ জন বিধায়কের সমর্থন। যদিও বিনোদ বিহারীর দাবি, “আমাদের পিছনে ১২০ জনের সমর্থন আছে।”
৮ জন বিধায়ককে রাজ্যসভার উপ-নির্বাচনে দলবিরোধী কাজের জন্য আগেই বহিষ্কার করেছিল জেডিইউ। স্পিকারের নির্দেশে তাঁদের বিধায়কের সব রকম সুযোগ সুবিধা কেড়ে নেওয়া হয়। পটনা হাইকোর্ট বিধায়ক পদে তাঁদের পুনর্বহালের নির্দেশ দিলেও স্পিকার তা কার্যকর করেননি। ওই বিধায়করা ফের হাইকোর্টে আবেদন করেন। আজ আদালত এক রায়ে জানিয়েছে, এই বিধায়কদের ভোটাধিকার থাকবে না। ফলে আগামী কালের আস্থা ভোটে তাঁদের কোনও মূল্য রইল না। জেডিইউ রাজ্য সভাপতি বশিষ্ঠনারায়ণ সিংহ বলেন, “কাল দলের পক্ষে ভোট দেওয়া নিয়ে হুইপ জারি হবে।” ইতিমধ্যে আরজেডিও বিধায়কদের বৈঠকে হুইপ জারি করেছে বলে আব্দুল বারি সিদ্দিকি জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy