সেই শিশু। ছবি সনম সাবু সিদ্দিকের ফেসবুক পোস্ট থেকে।
সহিষ্ণুতার নজির গড়ল সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। সেখানে প্রবাসীদের বিয়ের জন্য যে সব নিয়মকানুন রয়েছে, তা মানেননি। কিন্তু তার পরেও এক ভারতীয় হিন্দু ও ভারতীয় মুসলিম দম্পতির কন্যাসন্তান অনন্তা অ্যাসেলিন কিরণকে শেষ পর্যন্ত জন্মের শংসাপত্র (বার্থ সার্টিফিকেট) দিল আমিরশাহি সরকার এক নজিরবিহীন পদক্ষেপে। শিশুটির ৯ মাস বয়সে। শিশুটির বাবা হিন্দু, মা মুসলিম।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিবাহ আইনে এক জন মুসলিম পুরুষ বিয়ে করতে পারেন এক জন অ-মুসলিম মহিলাকে। কিন্তু এক জন মুসলিম মহিলা কখনওই বিয়ে করতে পারেন না কোনও অ-মুসলিম পুরুষকে।
২০১৯ সালকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সরকার সহিষ্ণুতার বছর বলে চিহ্নিত করেছে। সেখানে থাকা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির নাগরিকদের সম্মান জানাতে, স্বীকৃতি দিতে। ভারতীয় দম্পতির কন্যাসন্তানের বার্থ সার্টিফিকেট তারই দৃষ্টান্ত।
প্রথম সারির দৈনিক ‘খালিজ টাইমস’ জানিয়েছে, ভারতীয় হিন্দু কিরণ বাবু ও ভারতীয় মুসলিম সনম সাবু সিদ্দিকের মধ্যে বিয়েটা হয়েছিল কেরলে। আজ থেকে ৩ বছর আগে। তার পর তাঁরা চলে আসেন শারজায়। এখনও তাঁরা সেখানেই থাকেন। তবে গত বছরের মাঝামাঝি তাঁদের কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর খুব মুশকিলে পড়ে যান কিরণ ও সনম। তাঁরা কিছুতেই তাঁদের কন্যাসন্তানের বার্থ সার্টিফিকেট পাচ্ছিলেন না হাসপাতাল থেকে।
আরও পড়ুন- বাড়িতে ঢুকে অভিযান, শ্রীলঙ্কা বিস্ফোরণের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড বাবা ও দুই ছেলে নিহত
আরও পড়ুন- ইংল্যান্ডের থেকে কোহিনুর চাওয়া যাবে না, জানাল সুপ্রিম কোর্ট
কিরণ বলেছেন, ‘‘আবু ধাবির ভিসা রয়েছে আমার। আমার ও আমার পরিবারের বিমার যাবতীয় ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। স্ত্রীকে আমি ভর্তি করিয়েছিলাম আমিরশাহির মেডিওর ২৪x৭ হাসপাতালে। কিন্তু আমার মেয়ের জন্মের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে মেয়ের বার্থ সার্টিফিকেট দেননি, আমি হিন্দু বলে।’’
এর পর কিরণ আদালতের দ্বারস্থ হন। নো-অবজেকশন সার্টিফিকেটের আর্জি জানান আদালতে। কিন্তু টানা ৪ মাস ধরে শুনানি চলার পর আমার সেই আর্জি খারিজ করে দেয় আদালত। সন্তানের জন্মের কোনও বৈধ নথিপত্র না থাকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন কিরণ ও সনম। ভাবনাচিন্তা শুরু করেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালে যাওয়ার। দ্বারস্থ হন আবু ধাবির ভারতীয় দূতাবাসে। দূতাবাস অ্যামনেস্টিতে যাওয়ার জন্য তাঁদের সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকলেও, জন্মের বৈধ প্রমাণপত্র নেই বলে আমিরশাহি প্রশাসন তাঁর কন্যাসন্তানকে অভিবাসনের ছাড়পত্র দিতে অস্বীকার করে বলে জানিয়েছেন কিরণ।
এর পর ফের আদালতে যান ওই ভারতীয় দম্পতি। এ বার তাঁদের আর্জি খারিজ হয়ে যায়নি আদালতে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিরণ ও সনমের ৯ মাসের কন্যাসন্তান অনন্তা অ্যাসেলিন কিরণের বার্থ সার্টিফিকেট দেন গত ১৪ এপ্রিল। কিরণ বলেছেন, ‘‘প্রশাসনের তরফে আমাকে বলা হয়, এই প্রথম নিয়ম ভেঙে আমার কন্যাসন্তানকে এই সার্টিফিকেট দেওয়া হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy