Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বিমান ছিনতাইকারী সোয়ে ফের কলকাতায়

দিনটা ছিল ১৯৯০-এর ১০ নভেম্বর। তার পরে বহু জল বয়ে গিয়েছে গঙ্গা আর ইরাবতীর।

কলকাতায় সোয়ে মিন্ট।

কলকাতায় সোয়ে মিন্ট।

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১৫
Share: Save:

অস্ত্র নয়, হাতে ছিল ‘লাফিং বুড্ডা’-র একটি ছোট্ট মূর্তি। তাই দিয়ে বিমান ছিনতাই করে কলকাতায় নামিয়েছিলেন বর্মী ছাত্র সোয়ে মিন্ট। সঙ্গী ছিলেন রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী টিন চ। একটাই দাবি ছিল— সাংবাদিক বৈঠক করতে দিতে হবে। ঘর ভরা সাংবাদিকদের বলেছিলেন টিন আর সোয়ে, তাঁদের দেশ বর্মায় গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর ভয়ঙ্কর নির্যাতন করছে সেনা-শাসকেরা। শয়ে শয়ে মানুষ খুন হচ্ছেন। খোঁজ মিলছে না বহু মানুষের। দুনিয়াকে এ খবর জানাতেই তাঁরা বিমান ছিনতাই করে কলকাতায় এসেছেন।

দিনটা ছিল ১৯৯০-এর ১০ নভেম্বর। তার পরে বহু জল বয়ে গিয়েছে গঙ্গা আর ইরাবতীর। বারাসত আদালত বেকসুর খালাস দিয়েছে, বর্মা নাম বদলে মায়ানমার হয়েছে, চাপে পড়ে সীমিত আকারে হলেও গণতন্ত্র ফেরাতে হয়েছে সেনা বাহিনীকে। ২০১২-য় দেশে ফেরেন সোয়ে মিন্ট। তার পরে ফের কলকাতায় পা দিলেন এই বুধবার, বিমস্টেক নিয়ে একটি আলোচনা-সভায় যোগ দিতে। সে দিনের বিমান ছিনতাইতারী সোয়ে এখন একটি মিডিয়া গোষ্ঠীর প্রধান সম্পাদক, প্রধান পরিচালকও।

অচেনা লাগছে কলকাতাকে? হেসে জবাব দেন, ‘‘একেবারেই নয়। এই সব রাস্তাঘাট আমার বহু চেনা। শুধু বিমান থেকে নামার পরে একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। এখন ঠিক আছে।’’

আরও পড়ুন: ভারত সফরে গোতাবায়া, পাশে আছি, বার্তা দিয়েও শঙ্কায় দিল্লি

১৯৯১ সালে মহাকরণে জ্যোতি বসুর সঙ্গে সাক্ষাৎ সোয়ে-র। —ফাইল চিত্র।

কিন্তু পেটমোটা হাস্যমুখী এক বৃদ্ধের মূর্তি দিয়ে বিমান ছিনতাই কী ভাবে করলেন? সেটাকে কি অস্ত্র বলে ভয় দেখিয়েছিলেন?

সোয়ে মিন্টের জবাব, ‘‘একেবারেই না। তাই এয়ারওয়েজ়ের রেঙ্গুনগামী বিমানটিতে আমরা দু’জন চড়েছিলাম ব্যাঙ্কক থেকে। আকাশেই পাইলটকে জানাই— বিমানটির দখল নিচ্ছি, কিন্তু আমাদের সঙ্গে অস্ত্র-বিস্ফোরক কিচ্ছু নেই। সঙ্গের ‘লাফিং বুড্ডা’ মূর্তিটি শান্তির প্রতীক। যাত্রীদের বলি, কারও কোনও ক্ষতি হবে না। গণতন্ত্রের জন্য বর্মার মানুষের লড়াইয়ের কথা বিশ্বকে জানাতেই বিমানটিকে কলকাতায় নিয়ে যেতে চাই।’’

আর কলকাতায় নামার পরে?

‘‘সেখানে প্রশাসন সাংবাদিক বৈঠকের ব্যবস্থা করে দেয়,’’ জানাচ্ছেন ছোটখাটো চেহারার সোয়ে। মাথার সামনের দিকের চুল ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। বারাসাত আদালত তিন মাসের জন্য জেল হাজতে পাঠায়। কিন্তু দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের পাশে এগিয়ে আসায় তাঁরা জামিন পেয়ে যান। জর্জ ফার্নান্ডেজ দিল্লি নিয়ে গিয়ে নিজের বাড়িতে বেশ কিছু দিন রেখে দেন তাঁদের। সেখানে কারা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন? সোয়ে বলে যান, ‘‘প্রকাশ কারাট, লক্ষ্মী সায়গল, ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত। সনিয়া গাঁধীও দেখা করে সমর্থন জানান। পি এন হাকসারের কন্য়া নন্দিতা হাকসার আমাদের আইনজীবী হন।’’

২০০৩-এ আদালত তাঁদের মুক্তি দেয়। ইতিমধ্যে ১৯৯৮-এ দিল্লিতে একটি ইংরেজি সাময়িকী ও অনলাইন সংবাদপত্র ‘মিজিমা’ চালু করেন সোয়ে। ২০১২-য় দেশে ফিরে ‘মিজিমা’ মিডিয়া গোষ্ঠী শুরু করেন। বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের লড়াই এখনও শেষ হয়নি সেখানে। আইনসভার সিদ্ধান্তে ভিটো দেওয়ার ক্ষমতা ধরে রেখেছে সেনারা। মনে করেছি, মিডিয়াই এই লড়াইয়ে হাতিয়ার হতে পারে।’’

যে আউং সান সুকির নেতৃত্বে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেছিলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার পরেও কি তাঁর উপর ভরসা করেন? এই প্রথম একটু থমকে যান সোয়ে। বলেন, ‘‘মায়ানমারে গণতন্ত্র থিতু হতে আরও সময় লাগবে। যা কিছু হচ্ছে, সবের দায় এখন সুচির ওপর বর্তাচ্ছে। সন্দেহ নেই এতে তাঁর ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Burma Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE