Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
China Pakistan Economic Corridor

চিন-পাকিস্তান গোপন আঁতাঁত! রাস্তা বানানোর আড়ালে লুকিয়ে যুদ্ধবিমানের কারখানা?

নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত রিপোর্টে অবশ্য বলা হচ্ছে, প্রকাশ্যে বাণিজ্যিক বোঝাপড়ার কথা বলা হলেও চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের পিছনে লুকিয়ে আছে যুদ্ধবিমান বানানোর গোপন বোঝাপড়া, যার অংশীদার চিন এবং পাকিস্তান। যে কারণে এই প্রকল্পে বিপুল টাকা বিনিয়োগ করছে চিন, যার পরিমাণ এই মুহূর্তে প্রায় ৬,২০০ কোটি মার্কিন ডলার।

বাড়ছে চিন-পাকিস্তান সামরিক বোঝাপড়া। ফাইল চিত্র।

বাড়ছে চিন-পাকিস্তান সামরিক বোঝাপড়া। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:০৮
Share: Save:

পোশাকি নাম চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর। অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কে উন্নতি সাধনের উদ্দেশ্যেই পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই প্রকল্প শুরু করেছে চিন। আর সেই প্রকল্পের আড়ালেই লুকিয়ে রয়েছে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান তৈরির পরিকল্পনা। ‘চাঞ্চল্যকর’ এই খবর ফাঁস করল মার্কিন সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমস। চাঞ্চল্যকর, কারণ চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর হল চিনের স্বপ্নের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের অংশ। আর এই প্রকল্পকে এত দিন পুরোপুরি বাণিজ্যিক বলে দাবি করে আসছে বেজিং।

ভারতের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের কাজ শুরু করে দিয়েছে বেজিং আর ইসলামাবাদ। এই রাস্তা ও রেলপথের একটি অংশ যাচ্ছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ভিতর দিয়ে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ বলে মেনে নেয় না ভারত। আপত্তি ছিল সেই কারণেই। অন্য দিকে চিন ও পাকিস্তানের দাবি ছিল, এই প্রকল্প পুরোপুরি বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে হচ্ছে। তাই ভারতের আপত্তির কোনও কারণ নেই।

ইউরোপ, এশিয়া আর আফ্রিকা জুড়ে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ নামে যে রাস্তা ও রেলপথ বানানোর প্রকল্প শুরু করেছে চিন, ইসলামাবাদকে তার অংশীদার করে নিতেই রাখা হয়েছে চিন- পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর। চিন থেকে এই রাস্তা ইসলামাবাদ ও পেশোয়ার হয়ে সরাসরি পৌঁছবে গ্বাদর সমুদ্রবন্দর। এই রাস্তা বানাতে পারলে নিশ্চিত ভাবেই সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে বেজিং। এর ফলে পশ্চিম চিনের সঙ্গে আরব সাগর যুক্ত হয়ে যাবে। অর্থাৎ ভারত মহাসাগরের ওপর নির্ভরতা কমবে চিনের।

আরও পড়ুন: ভারতের প্রতিবাদ কানেই তুলল না চিন-পাকিস্তান, পিওকে দিয়ে শুরু লাহৌর-কাশগড় বাস পরিষেবা

বুধবার নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত রিপোর্টে অবশ্য বলা হচ্ছে, প্রকাশ্যে বাণিজ্যিক বোঝাপড়ার কথা বলা হলেও চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের পিছনে লুকিয়ে আছে যুদ্ধবিমান বানানোর গোপন বোঝাপড়া, যার অংশীদার চিন এবং পাকিস্তান। যে কারণে এই প্রকল্পে বিপুল টাকা বিনিয়োগ করছে চিন, যার পরিমাণ এই মুহূর্তে প্রায় ৬,২০০ কোটি মার্কিন ডলার। আর শুধু যুদ্ধবিমানই নয়, বানানো হবে আরও অনেক অত্যাধুনিক সামরিক অস্ত্র এবং যন্ত্রাংশ। এমনটাই দাবি করা হয়েছে মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্টে।

সামরিক যন্ত্রাংশ বানাতে এই বছরের শুরুতেই পাক বায়ুসেনার আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন চিনা প্রতিনিধিরা। সেই বৈঠকে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের মধ্যেই একটি বিশেষ অর্থনেতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেওয়া হয়। এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলেই চিনের সহায়তায় বানানো হবে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, অত্যাধুনিক রাডার যোগাযোগ ব্যবস্থার বিভিন্ন স্টেশন এবং অন্যান্য সামরিক যুদ্ধাস্ত্র। মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্টে অবশ্য বলা হয়নি, ঠিক কী ধরনের যুদ্ধবিমান বানাতে চলেছে চিন ও পাকিস্তান। এই মুহূর্তে অত্যাধুনিক জে-২০ এবং জে-৩১ যুদ্ধবিমান বানাতে গবেষণা চালাচ্ছে চিন। যা অত্যাধুনিক মার্কিন বা রুশ যুদ্ধবিমানের সমকক্ষ। এর আগে জে এফ-১৭ নামের একটি অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের যুদ্ধবিমান বানাতে পাকিস্তানকে সাহায্য করেছে চিন। পাকিস্তান পঞ্জাবে আছে এই যুদ্ধবিমানের কারখানা। এখনও পর্যন্ত চিন বা পাকিস্তানের বায়ুসেনায় এই বিমান দেখা না গেলেও, দ্য উইক পত্রিকার দাবি, মায়ানমারে চিনা সামরিক মহড়ায় উড়তে দেখা গিয়েছে জে এফ-১৭। পাশাপাশি আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়াও এই বিমান কিনতে খুব সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

জে-১০ নামের এই বিমান বানানোর পরিকল্পনা চিনের। ফাইল চিত্র।

যুদ্ধবিমান বানানোর এই চলতি প্রকল্পকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতেই জে-২০ বা জে-৩১ বানানোর কথা ভাবছে চিন, এমনটা বলা হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস-এর রিপোর্টেও। সে ক্ষেত্রে চিনের পরিকল্পনা, পাকিস্তানকেই যুদ্ধবিমান বানানোর ঘাঁটি বানানো, যাতে পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশ গুলি থেকে সহজে বিমান বিক্রির বরাত পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: রাস্তার নামে সামরিক প্রকল্প বানাচ্ছে চিন, বিক্ষোভ পাক অধিকৃত কাশ্মীরে

শুধু যুদ্ধবিমানই নয়, পাকিস্তানের মাটিকে ব্যবহার করে অত্যাধুনিক উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সামরিক ডুবোজাহাজ তৈরির পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করে ফেলেছে চিন। সে ক্ষেত্রে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের প্রান্তিক বন্দর গ্বাদরকেই সামরিক ডুবোজাহাজের জ্বালানি ভরার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করবে বেজিং। ২০১৫ সালে পাকিস্তানকে ৮টি সামরিক ডুবোজাহাজ বিক্রি করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল বেজিং। এই চুক্তির অর্থমূল্য ছিল প্রায় ছ’শো কোটি মার্কিন ডলার।

পাকিস্তানের মাটিতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান বানানোর পরিকল্পনা চিনের। ফাইল চিত্র।​

আরও পড়ুন: ঋণের ফাঁদে ইসলামাবাদ, বন্ধুত্বের মুখোশে পাকিস্তানে লুঠ চালাচ্ছে চিন?

অসামরিকপ্রকল্পের আড়ালে চিনের এই সামরিক উচ্চাকাঙ্খার খবর ফাঁস হওয়ায় সারা দুনিয়ার সঙ্গে উদ্বিগ্ন আমেরিকাও। কারণ চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতির করিডর দু’টি দেশের মধ্যে হলেও মূল প্রকল্প ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এ জড়িয়ে আছে ইউরোপ-এশিয়া-আফ্রিকা, এই তিনটি মহাদেশ। দীর্ঘ দিন ধরেই আমেরিকার দাবি, এই রাস্তা ও রেলপথ বানানোর নামে লুকিয়ে আছে চিনের সামরিক পরিকল্পনা।চিনকে নিয়ে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে, এই বার্তা বিভিন্ন সময়ই সারা দুনিয়াকে দিয়েছে আমেরিকা। এই প্রসঙ্গে তারা তুলে ধরেছে শ্রীলঙ্কার উদাহরণ। কিছু দিন আগেই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্‌স জানিয়েছিলেন, ‘‘দেনার ফাঁদে ফেলে ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কাকে নিজেদের পুরোদস্তুর সামরিক নৌঘাঁটি বানানোর কাজে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে চিন। আর এই ফাঁদে ফেলা শুরু হয়েছিল বাণিজ্যিক বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়েই।’’

(আমেরিকা থেকে চিন, ব্রিকস থেকে সার্ক- সব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE