Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের ছেলে ও ভাই আটক, দাবি ইমরান সরকারের

বাধ্যবাধকতা মেনে আজ  ইমরান সরকার দাবি করল, জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের ভাই মুফতি আব্দুল রউফ ও মাসুদের ছেলে হামাদ আজহারকে আটক করা হয়েছে।

জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের ভাই মুফতি আব্দুল রউফ।

জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের ভাই মুফতি আব্দুল রউফ।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯ ০২:৫১
Share: Save:

আন্তর্জাতিক চাপ ছিলই। ইমরান খান নিজেকে যে ভাবে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে তুলে ধরেছেন, সে কথার প্রমাণ দিতেও কিছু করে দেখানোর প্রয়োজন ছিল।

সেই বাধ্যবাধকতা মেনে আজ ইমরান সরকার দাবি করল, জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের ভাই মুফতি আব্দুল রউফ ও মাসুদের ছেলে হামাদ আজহারকে আটক করা হয়েছে। আটক হয়েছে বিভিন্ন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের আরও ৪২ জন সদস্য। পাশাপাশি হাফিজ সইদের জামাত উদ দাওয়া ও ফালাহ ই ইনসানিয়ত-সহ ৭০টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেছে পাক সরকার। একে অবশ্য বিশেষ গুরুত্ব দিতে রাজি নয় নয়াদিল্লি। বিদেশ মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের যুক্তি, ২৬/১১-র মুম্বই হামলার পরেও হাফিজ সইদের মতো লস্কর-ই-তইবার চাঁইদের একাধিক বার পাক প্রশাসন নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। বস্তুত গত কালই আমেরিকায় নিযুক্ত পাক রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদ খান দাবি করেছেন, পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গিদের কোনও সংগঠিত উপস্থিতি নেই।

পুলওয়ামা ও তার পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য পুরোপুরি ভারতকে দায়ী করেছেন তিনি।

কে মুফতি আব্দুল রউফ?

• জইশ-প্রধান মাসুদ আজহারের ভাই
• ভারতীয় বিমান ছিনতাই, সংসদে হামলা, পঠানকোট হামলা, পুলওয়ামা কাণ্ড-সহ একাধিক মামলায় অভিযুক্ত
• ২০০৭ সালের ২১ এপ্রিল থেকে জইশের কমান্ডার
• রউফের বিরুদ্ধে ভারতের আদালতে চার্জশিট পেশ হয়েছে
• পাকিস্তানকে দেওয়া ডসিয়েতে নাম রয়েছে
এই জঙ্গির
• ২০০৯ সালে এক পণবন্দি কাণ্ডে দরকষাকষি করতে ডেকেছিল পাকিস্তান

পাক সরকার অবশ্য নিজেরাই স্পষ্ট করে দিয়েছে, জঙ্গিদের নিছকই ‘প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন’ বা সতর্কতামূলক হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ভারতের দাবি, মুফতি পঠানকোট থেকে পুলওয়ামার মতো একাধিক সন্ত্রাসবাদী হামলা পরিচালনা করেছিল। তার আগে ১৯৯৯-র কন্দহরে বিমান অপহরণ, ২০০১-এর সংসদে হামলাও মুফতির নির্দেশেই হয়েছিল বলে ভারতের দাবি। পুলওয়ামা নিয়ে পাকিস্তানকে দেওয়া তথ্যপ্রমাণে মুফতি ও হামাদের নাম রয়েছে।

নয়াদিল্লিতে সাউথ ব্লক সূত্রের বক্তব্য, পাকিস্তানের এই শান্তির বার্তার ফাঁদে ভারত পা দিচ্ছে না। বাস্তবে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় পাকিস্তান কী করছে, তার রূপরেখা দিতে হবে। পাকিস্তানের মাটিতে ২২টি জইশ শিবির রয়েছে। পাকিস্তানকে দেওয়া তথ্যপ্রমাণে সেই তথ্য রয়েছে। ইমরান মুখে ‘নয়া পাকিস্তান, নয়া সোচ’-এর স্লোগান দিচ্ছেন। কিন্তু জইশের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করছেন না। ভারতকে যুদ্ধবাজ হিসেবে প্রচার করে নজর ঘোরাতে চাইছেন। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ভারত পাকিস্তানের মাটিতে হানার কথা ভাবছে না। কিন্তু পাকিস্তান থেকে ফের সন্ত্রাসবাদী হামলা হলে সব রাস্তাই খোলা রয়েছে।

বিদেশ মন্ত্রক বরং চাইছে, পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে জইশের যোগাযোগ নিয়ে ইসলামাবাদের উপরে আরও কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে। ভারতের হাতিয়ার দু’টি। এক, মাসুদ আজহার অসুস্থ বলে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশির মন্তব্য। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের দাবি, এ থেকেই স্পষ্ট পাক সরকারের সঙ্গে জইশ-ই-মহম্মদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। দুই, পাকিস্তান ভারতের সামরিক ঘাঁটিতে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। এর প্রমাণ হিসেবে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া ‘আমরাম’ ক্ষেপণাস্ত্রের ভগ্নাবশেষের ছবি আমেরিকা ও অন্যান্য দেশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমেরিকা সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় পাকিস্তানকে এফ-১৬ দিয়ে সাহায্য করেছিল। দিল্লির দাবি, সেই চুক্তি ভেঙে ওই বিমান ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সরকারি সূত্রের খবর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল নিজে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের সঙ্গে কথা বলেছেন। বোল্টনকে জানানো হয়েছে, ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে পাক বায়ুসেনা এফ-১৬ থেকে ‘আমরাম’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। ভারতের সুখোই-৩০ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে তা ঠেকায়। রাজৌরিতে ‘আমরাম’-এর ভগ্নাবশেষ মিলেছে।

তবে মাসুদ আজহার যে অসুস্থ, সে কথাও মানতে নারাজ সাউথ ব্লক। সরকারি সূত্রের মতে, এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ এর আগে মোল্লা ওমর, ওসামা বিন লাদেনের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রচার করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের ভয়েই এমন খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

পাক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার খান আফ্রিদি অবশ্য দাবি করেছেন, কোনও চাপের মুখে তাঁরা জঙ্গি-বিরোধী পদক্ষেপ করছেন না। জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত মেনেই এই ব্যবস্থা। আগামী দু’সপ্তাহ এই প্রক্রিয়া চলবে। যাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, নিষিদ্ধ সংগঠনগুলির সম্পত্তিরও দখল নিয়েছে পাকিস্তান প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Masood AZhar Jaish E Mohammad Pakistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE