ছবি: পিটিআই।
কাশ্মীরের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ফের সরব হলেন মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরা। উপত্যকায় আটক সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি ছাড়াও সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন তাঁরা। এই মর্মে মার্কিন কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস-এ একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে।
৬ ডিসেম্বর রিপাবলিকান দলের স্টিভ ওয়াটকিন্সের সঙ্গে মিলে ওই ‘বাইপার্টিসান রেজোলিউশন’টি পেশ করেন ডেমোক্র্যাট দলের প্রমীলা জয়পাল। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক প্রমীলার ওই প্রস্তাবে ভারত সরকারের কাছে আবেদন করে বলা হয়েছে, অবিলম্বে জম্মু ও কাশ্মীরে আটক সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে ইন্টারনেট-সহ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে হবে। কাশ্মীরের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করার কথাও বলা হয়েছে ওই প্রস্তাবে।
৫ অগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর থেকেই উপত্যকায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করে সেখানে নিষেধাজ্ঞার কড়াকড়ি শুরু করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কার্ফু জারি করা, তিন জন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী-সহ বহু রাজনৈতিক নেতাদের আটক করে রাখা থেকে শুরু করে সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ রাখা হয় উপত্যকার স্কুল-কলেজ-দোকানপাট-অফিস। উপত্যকায় জঙ্গি সন্ত্রাসের আশঙ্কাতেই এত কড়াকড়ি বলে দাবি করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এর পর পোস্টপেড মোবাইল ও ল্যান্ডলাইন চালু করা হলেও এখনও বন্ধ প্রায় ২০ লক্ষ প্রেপেড মোবাইল এবং ইন্টারনেট পরিষেবা।
আরও পড়ুন: গণধর্ষিতাকে ফের গণধর্ষণ করল অভিযুক্তরা!
I have fought to strengthen the special U.S.-India relationship, which is why I'm deeply concerned. Detaining people w/out charge, severely limiting communications, & blocking neutral third-parties from visiting the region is harmful to our close, critical bilateral relationship.
— Rep. Pramila Jayapal (@RepJayapal) December 8, 2019
এই আবহে গত মাসে সংসদে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। ঘটনাচক্রে, ওই দাবির কিছু দিনের মধ্যে মার্কিন কংগ্রেসে এই প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। তাতে ভারত সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে যাতে ‘জম্মু ও কাশ্মীরের ইন্টারনেট তথা যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর জারি করা বাকি নিষেধাজ্ঞাও যত দ্রুত সম্ভব তুলে নেওয়া হয়।‘ সেই সঙ্গে ওই প্রস্তাবে আবেদন করা হয়েছে, ‘যে সমস্ত রাজনৈতিক নেতাকে আটক করা হয়েছে, তাঁদের মুক্তি দিতে হবে। ওই বন্দিদের মুক্তির শর্ত হিসাবে কোনও রকম রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করা বা ভাষণ না দেওয়ার জন্য বন্ডে সই করানোও বন্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক এবং সাংবাদিকদের জম্মু ও কাশ্মীর-সহ ভারতে স্বাধীন ভাবে ঘোরাঘুরির অনুমতি দিতে হবে। ধর্মকে কেন্দ্র করে সমস্ত হিংসা, বিশেষত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিশানা করা রুখতে হবে।’
আরও পড়ুন: ‘অবিচার’-এর প্রতিবাদে ধর্নায় নিহতের স্ত্রী
ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান— মার্কিন কংগ্রেসের দুই বিরোধী দলের সদস্যরাই গত কয়েক মাসে কাশ্মীরের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অক্টোবরে ডেমোক্র্যাট দলের সদস্য ক্রিস ভ্যান হলেন অব মেরিল্যান্ড জানিয়েছিলেন, আমেরিকার একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে উপত্যকায় যেতে গিয়ে ভারত সরকারের বাধার মুখে পড়েন তিনি। এর পর কাশ্মীর প্রসঙ্গে মার্কিন কংগ্রেসে দু’বার আলোচনা হয়। ওই প্রসঙ্গে কড়া প্রতিক্রিয়া দেয় ভারত সরকার। বিদেশ মন্ত্রকে মুখপাত্র রবীশ কুমার দাবি করেন, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ জীবন রক্ষায়, সেখানকার শান্তি ও সুরক্ষা বজায় রাখতে সম্প্রতি যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের কয়েক জন সদস্য যে ভাবে এর অধিবেশনে প্রশ্ন তুলেছেন, তা সত্যিই দুঃখজনক।’’
কাশ্মীরে পাক মদতে পুষ্ট সন্ত্রাস নিয়ে বরাবরই আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরব হয়েছে ভারত সরকার। এবং ভারতের সেই আশঙ্কা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেস যে ওয়াকিবহাল, তা-ও মেনে নেওয়া হয়েছে ওই প্রস্তাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy