Advertisement
E-Paper

চিকিৎসকের অর্ধেক পদই শূন্য, ভোগান্তি

২৮৯ জনের মধ্যে আছেন ১৪৩ জন। শূন্য হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের ১৪৬টি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের পদ। হাসপাতালে নেই এক জন ওর্য়াড মাস্টারও। বাধ্য হয়ে অ্যসিস্ট্যান্ট সুপার ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকেই ওয়ার্ড মাস্টারের দায়িত্ব সামলাতে হয়। সঠিক চিকিৎসা পরিষেবার অভাবে সঙ্কটে স্থানীয় বাসিন্দারা। ফলে বাধ্য হয়ে আশঙ্কাজনক রোগীকে ৫০ কিলোমিটার দূরে তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১০
হাসপাতাল চত্বরে পড়ে পরিত্যক্ত অ্যাম্বুল্যান্স। ছবি: আরিফ ইকবাল খান।

হাসপাতাল চত্বরে পড়ে পরিত্যক্ত অ্যাম্বুল্যান্স। ছবি: আরিফ ইকবাল খান।

২৮৯ জনের মধ্যে আছেন ১৪৩ জন।

শূন্য হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের ১৪৬টি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের পদ। হাসপাতালে নেই এক জন ওর্য়াড মাস্টারও। বাধ্য হয়ে অ্যসিস্ট্যান্ট সুপার ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকেই ওয়ার্ড মাস্টারের দায়িত্ব সামলাতে হয়। সঠিক চিকিৎসা পরিষেবার অভাবে সঙ্কটে স্থানীয় বাসিন্দারা। ফলে বাধ্য হয়ে আশঙ্কাজনক রোগীকে ৫০ কিলোমিটার দূরে তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। শিল্প শহর হলদিয়ায় অবস্থিত এই হাসপাতালে নেই কোনও বার্ন ওয়ার্ডও। ফলে মেডিসিন ওয়ার্ডেই সাধারণ রোগীদের সঙ্গে আগুনে পোড়া রোগীদের রেখে চিকিৎসা করা হয়। সঙ্কটাপন্ন অগ্নিদগ্ধ রোগীকে জেলা হাসপাতালে রেফার করতে বাধ্য হন চিকিৎসকেরা।

যথার্থ পরিকাঠামো না থাকায় অন্য আশঙ্কাজনক রোগীদেরও রেফার করতে হয় জেলা হাসপাতালে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হলে কাজ হয়নি। হাসপাতাল সুপার সুমনা দাশগুপ্ত বলেন, “প্রয়োজনের তুলনায় হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মীর সংখ্যা কম। তবে হাসপাতালে যেটুকু পরিকাঠামো রয়েছে, তাই দিয়েই পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। খুব প্রয়োজন না হলে রোগীদের রেফারও করা হয় না।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতালে কর্মী সঙ্কট রয়েছে এটা ঠিক। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়েছে।”

হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে মোট ৩০০টি শয্যার অনুমোদন রয়েছে। তবে বর্তমানে হাসপাতালের চারটি ওয়ার্ডে ২০০টি বেড চালু রয়েছে। হাসপাতালে দু’জন জেনারেল সার্জেনের মধ্যে রয়েছেন এক জন। ব্লাড ব্যাঙ্কের দু’জন মেডিক্যাল অফিসারের মধ্যেও এক জন রয়েছেন। হাসপাতালে অটোপসি সার্জেনের পদও শূন্য। ফলে হাসপাতালের অন্য চিকিৎসকরাই মৃতদেহের ময়না-তদন্ত করেন। ৮১ জন নার্সিং স্টাফের পদ থাকলেও রয়েছেন ৫০ জন। সাফাই কর্মীর সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত।

হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থাকলেও সেখানে মেলেনা অর্ধেক ওষুধই। রোগীর পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, ন্যায্য মূল্যের দোকানে অনেক ওষুধই পাওয়া যায় না। ফলে বাইরে থেকে বেশি দাম দিয়ে ওষুধ কিনতে হয়। বুধবার ভবানীপুরের বাসিন্দা বৃদ্ধা প্রজাপতি আদক অম্বল ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে আসেন। চিকিৎসকের লেখা সব ওষুধ ন্যায্য মূল্যের দোকানে না মেলায় সমস্যায় পড়েন তিনি। একই ভাবে ন্যায্য মূল্যের দোকানে সব ওষুধ না পেয়ে সমস্যায় পড়েন সুতাহাটার দীপক দাস ও হলদিয়ার চিরঞ্জীবপুরের রাজীব দণ্ডপাঠও। ওই ওষুধের দোকানের এক কর্মী বলেন, “সরকারি নির্দেশ মতো ১৪২ রকমের জেনেরিক ওষুধ ও ৩৭ রকমের সার্জিক্যাল সামগ্রী রাখা হয়। এর বাইরে চিকিৎসকেরা ওষুধ লিখলে সমস্যা হয়। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা ওষুধের জেনেরিক নাম না লিখে ব্র্যান্ডেড নাম লেখেন, ফলে ওষুধ দিতে সমস্যা হয়।” হলদিয়া হাসপাতালের সুপার সুমনা দাশগুপ্ত অবশ্য জানিয়েছেন, আমরা সব সময় চিকিৎসকদের ওষুধের জেনেরিক নাম লেখার কথা বলে থাকি। তবে কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা ওষুধের ব্রান্ডেড নাম লিখে ফেলেন। রোগীরা যাতে ন্যায্যমুলের ওষুধের দোকান থেকে আরও বেশি ওষুধ কিনতে পারেন, আমরা তার সব রকম চেষ্টা করছি।”

মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হন হলদিয়ার বাড়উত্তর হিংলির বাসিন্দা প্রসূতি রাখি মাজি। এ দিন দুপুরেই তাঁকে তমলুক জেলা হাসপাতালে রেফার করা হয়। রাখিদেবী জানান, প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। কিন্তু চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখেন, আমার বাচ্চা হতে এখনও প্রায় দু’মাস সময় বাকি রয়েছে। সময়ের আগে অপরিণত শিশু জন্মালে তার পরিচর্যার পরিকাঠামো এই হাসপাতালে নেই। তাই তড়িঘড়ি আমাকে জেলা হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “আমরা গরীব মানুষ। এখন হঠাৎ করে আমাকে তমলুকে রেফার করায় খুব সমস্যায় পড়েছি।” হাসপাতালে সিটি স্ক্যানেরও ব্যবস্থা নেই। তাই কোনও রোগীর স্ক্যান করার প্রয়োজন হলে ১৫ কিলোমিটার দূরে বেসরকারি হাসপাতালে ছুটতে হয়।’’

haldia district hospital doctors
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy