‘শাস্ত্র’ থেকে শিল্প কত দূরে বা কতখানি নিকটবর্তী, তা নিয়ে কলাচর্চাকারী এবং রসিকজনের আগ্রহ থাকা স্বাভাবিক। শাস্ত্র কলাকে নিয়মের নিগড়ে বাঁধে, তাকে এক ব্যাকরণ সম্মত নিয়ত আকার দেয়। কিন্তু শিল্পীর স্বাধীনতাকে কি উপেক্ষা করে শাস্ত্র? ভরতের ‘নাট্যশাস্ত্র’ বলে আজ যা পরিচিত, তা এক দিনে বা কোনও লেখকের একক রচনা নয়, বরং তাতে এসে মিশেছে যুগ-যুগান্তের কলা-কল্পনা, অগণিত শিল্পীর সংযোজন।
আরও পড়ুন:
মণিপুরী নৃত্যগুরু বিপিন সিংহের ১০৭তম জন্মদিনে মণিপুরী নর্তনালয়, কলকাতার-র উদ্যোগে ২৩ অগস্ট কলকাতার আইসিসিআর-এর গ্রন্থাগার কক্ষে আয়োজিত হয়েছিল একটি আলোচনাসভা। ‘শাস্ত্রজ়: ইনক্লুশন, অ্যাডাপ্টেবিলিটি অ্যাণ্ড অ্যাকসেপ্টেন্স ইন দ্য মেজর ইন্ডিয়ান ট্র্যাডিশনাল ডান্স ফর্মস’ শীর্ষক এই সভার উপজীব্য ছিল ভারতীয় পম্পরাগত নৃত্যশৈলীগুলিতে শাস্ত্র কতখানি গৃহীত হয়েছে, সে বিষয়ে আলোকপাত। উল্লেখ্য, গুরু বিপিন সিংহ মণীপুরী নৃত্যকলা চর্চার সঙ্গে গভীর ভাবে অধ্যয়ন করেছিলেন বৈষ্ণব শাস্ত্রকেও। এবং সেই শাস্ত্রের প্রয়োগ ঘটিয়ে মণীপুরী নৃত্যকে এক বিশেষ স্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন।
এ দিন মার্গনাট্য চর্চাকারী পিয়াল ভট্টাচার্য তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন ‘নাট্যশাস্ত্র’-এ ভরত কী বলতে চাননি এবং সমান্তরালে এই শাস্ত্রের চর্চাকারী এবং প্রয়োগকর্তারা ঠিক কী বুঝেছেন, সে বিষয়ে। গণিত ও নৃত্যের সঙ্গে কত্থকের মতো নৃত্যকলার সম্পর্ক কী, এ নিয়ে বললেন সন্দীপ মল্লিক। এ তো গেল শাস্ত্রের তরফ থেকে নৃত্যকলাকে দেখা। এর উল্টো দিকের কথা, অর্থাৎ নাচ কখন শাস্ত্রকে খোঁজে, সে বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ভরতনাট্যম শিল্পী বন্দনা আলাসে হাজরা। মণিপুরী নৃত্যশিল্পী পৌষালি চট্টোপাধ্যায় কথা বললেন তাঁর চর্চিত নৃত্যকলার অনন্যতা ও তার প্রয়োগ নিয়ে। ভরতের ‘নাট্যশাস্ত্র’-এর বর্তমান সময়ে তাৎপর্য নিয়ে বললেন তপতী চৌধুরী। শাস্ত্রের সারবস্তুকে আধুনিক নৃত্যকলা কী ভাবে গ্রহণ করছে, এ বিষয়ে বললেন অর্পিতা ভেঙ্কটেশ।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গুরু বিপিন সিংহের কন্যা, মণিপুরী নৃত্যশিল্পী বিম্বাবতী দেবী। তাঁর কথায়, “বাণিজ্যায়নের যুগে দাঁড়িয়ে আমরা যে ভারতীয় নৃত্য-নাট্য ফর্মগুলির সর্বস্ব বিসর্জন দেব, তা হতে পারে না।” শাস্ত্র বেঁচে থাকবে দিকনির্দেশিকা হিসাবে। শাস্ত্র কোনও অচলায়তন নয়, তাতে গ্রহণ-বর্জনের খেলা চলতেই থাকবে।