আসলে সব কথাই খাবারের প্লেটে ধরা থাকে! প্রতিটি রান্নার নিজস্ব গল্প আছে। বাঙালির পঞ্চব্যঞ্জন নিছক থালা সাজিয়ে ভূরিভোজের আয়োজন নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে কতশত স্মৃতি, কত না আবেগ, ভালবাসা! স্বাদের রূপবদল বাঙালি মেনে নিলেও, তার ইতিহাস ভোলেনি। শুধু সময়ের সঙ্গে সে গল্পগুলি হারিয়ে গিয়েছে। বিশ্বায়নের যুগে কলকাতা শহরে যত না মোচার ঘণ্ট পাওয়া যায়, তার চেয়ে ঢের বেশি পাওয়া যায় পাস্তা। পশ্চিমী শৈলীর নানা কিসিমের মাংস-মাছের কেতায় সাবেক বাংলার ‘ঘটি-বাটি ঘণ্ট’ হারিয়ে যাওয়ার তালিকাতেই ঢুকে পড়ছে প্রায়। বাঙালিয়ানাকে বাঁচিয়ে রাখতে তাই পুরনো গল্পগুলি ফিরে এল আবার। সুর ধরলেন সঙ্গীতশিল্পী রূপম ইসলাম। গানের কথায় পোস্ত-চিংড়ি, মোচা-শুক্তোর গল্প বললেন ‘রকস্টার’।
গানে গানে খাবারের গল্প। স্বাদ ও সুরের মেলবন্ধন নতুন নয়। বাঙালি ঘরানায় তার প্রয়োগ কম। সপ্তপদী রেস্তোরাঁর হাত ধরে প্রথম বার স্বাদ ও সুরকে মেলালেন রূপম। তাঁর কণ্ঠে ‘সপ্তপদীর গান’ নিছক কোনও বিজ্ঞাপনী চমক নয়, বরং সুরে সুরে ভোজনরসিক বাঙালির খাবারের প্রতি প্রেমই ঝরে পড়েছে। ৪ মিনিটের ভিডিয়োতে তৈরি হয়েছে ‘ফুডসিক্যাল ফিল্ম’। অর্থাৎ, স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র যেখানে খাবারই আলোচ্য বিষয়। বাঙালির অতি প্রিয় রান্নাগুলির গল্প বলেছেন রূপম। স্বাদের বর্ণনা করেছেন, গেয়েছেন, অভিনয়ও করেছেন। রূপমের কথায়, "স্বাদের সঙ্গে বাঙালির আবেগ জড়িত যা ছোটবেলার গল্প বলে, উৎসব-পার্বণের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে, ভালবাসার কথা বলে। স্বাদের সঙ্গে সুরকে মিলিয়ে সেই স্মৃতিই ফিরিয়ে এনেছি আমি যাতে রান্নাঘরের সেই চেনা গন্ধ মিলেমিশে গিয়েছে। এক বাটি সর্ষে ইলিশ ভাপাতেও কিন্তু ভালবাসা মিশে থাকে, সে কথাই তুলে ধরে হয়েছে। এই আবেগ ও কথা আমার একান্তই ব্যক্তিগত।"
বছরভর ডায়েটিং করা বাঙালিও গরম ভাতে পোস্ত পেলে আর কিছু চাইবে না। প্রথম পাতে যদি থাকে পোস্ত পেঁয়াজি বা কুড়মুড়ে চিংড়ির পপকর্ণ, তা হলে তো ভোজ জমে ক্ষীর। বাঙালির ভূরিভোজ মানে শুক্তো থাকবেই, সঙ্গে রূপমের কথায় ‘ঘটি-বাটি ঘণ্ট’, অর্থাৎ চিংড়ি বাটি চচ্চড়ি বা মোচার ঘণ্ট। সর্ষে ইলিশ, ডাব চিংড়ি হয়ে মুরগির ঘটি গরম ‘স্বাদে সুরভিতে’ মাতিয়ে দেবে নিঃসন্দেহে।
চায়ের ঠেকের তার্কিক বাঙালি এখন অভিজাত পানশালায় পরিবার-পরিজন নিয়ে দিব্যি স্বচ্ছন্দ। পানীয়, আড্ডা, সুর, ছন্দ, দেশ-বিদেশের নানা স্বাদ— সবই চাইছে তারা একসঙ্গে। সেই চাওয়াকে মাথায় রেখেই কলকাতায় তৈরি হচ্ছে নিত্যনতুন ঠিকানা। পাল্টাচ্ছে রেস্তরাঁ। খাবারে, পরিবেশে, পরিবেশনে লাগছে বিশ্বমানের ছোঁয়া। লক্ষ্য, ভোজনরসিক বাঙালির রসনা তৃপ্ত করা। ‘সপ্তপদীর গান’-এ বাঙালিকে তার সংস্কৃতির সঙ্গেই পরিচয় করানো হয়েছে। দুই বাংলার স্বাদের গল্প শোনানো হয়েছে যা সুরে-ছন্দে পুরনো দিনের কথা মনে করাবে।