Advertisement
E-Paper

পায়ে পা মিলিয়ে মঞ্চে ওঠাই বিশ্বজয়

মধুসূদন মঞ্চে ‘সাম্য’র সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল এমনই কিছু চমকে ভরা। এক জনের হাত ধরে পাশাপাশি হেঁটে যাওয়া। সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত বছর এগারোর অটিস্টিক গৌরব দাসের কাছে ছিল এটা একটা পরীক্ষা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২২ ০৭:৩৩
অদম্য: মঞ্চে গানের ছন্দে তাল মেলাচ্ছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, কিশোর-কিশোরীরা। রবিবার, মধুসূদন মঞ্চে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

অদম্য: মঞ্চে গানের ছন্দে তাল মেলাচ্ছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, কিশোর-কিশোরীরা। রবিবার, মধুসূদন মঞ্চে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

গানের নির্দিষ্ট একটি লাইন শেষ হতেই প্ল্যাকার্ড হাতে অডিটোরিয়ামে ঢুকবে কচিকাচার দল। দর্শকের আসনের দু’পাশ দিয়ে লাইন করে হেঁটে গিয়ে সোজা উঠতে হবে মঞ্চে। সেখানে সকলের জন্য চিহ্নিত করে দেওয়া জায়গায় দাঁড়িয়ে গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেতে হবে।

এ তো বড় শক্ত কাজ! আমাদের ছেলেমেয়েরা কারও সাহায্য ছাড়া এটা কি আদৌ করতে পারবে? তা-ও আবার অডিটোরিয়ামের জোরালো আলো, শব্দ আর এত লোকের সামনে! চিন্তায় ছিলেন অটিস্টিক ঋত্বিক, আয়ুষির বাবা-মায়েরা।

সবটা ঠিকঠাক হতেই শূন্যে হাত ছুড়ে হাততালি দিয়ে ওঠেন দর্শকাসনে থাকা অভিভাবক। এক মা সুস্মিতা ঘোষের কথায়, ‘‘আমরা জিতে গিয়েছি। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। একটা কঠিন ম্যাচ জিতে যাওয়ার আনন্দের সমান।’’

মধুসূদন মঞ্চে ‘সাম্য’র সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল এমনই কিছু চমকে ভরা। এক জনের হাত ধরে পাশাপাশি হেঁটে যাওয়া। সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত বছর এগারোর অটিস্টিক গৌরব দাসের কাছে ছিল এটা একটা পরীক্ষা। তাই মঞ্চের রঙিন আলোয় হাঁটা শেষ করতেই হাততালিতে ভরে যায় গোটা প্রেক্ষাগৃহ।

অটিজ়ম, ডাউন সিনড্রোম-সহ বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, এমন অনেক ছেলেমেয়ের অতিরিক্ত আলো, শব্দ এবং ভিড়ে যথেষ্ট সমস্যা হয়। ডান্স মুভমেন্ট থেরাপিস্ট, চিকিৎসক অদিতি বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার খেয়াল রাখছিলেন মঞ্চের জোরালো আলো এবং শব্দের উপরে। কোনও বাচ্চার যেন সমস্যা না হয়।

অনুষ্ঠান অবশ্য শুরু হয় শিল্পীদের নানা ‘ওয়ার্ম আপ’-এর কাজ দিয়ে। যেমন, ভিড়ের মধ্যে দিয়ে একটা নির্দিষ্ট গতিতে গানের সঙ্গে হেঁটে যাওয়া। অদিতি জানান, ডান্স মুভমেন্ট থেরাপির আসল কাজ হল নিজের বিভিন্ন ব্যবহারিক কাজের উপরে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ তৈরিতে সাহায্য করা। তাঁর কথায়, ‘‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের মধ্যে অনেকেই ভিড়ের সামনে কী ভাবে এগিয়ে যাবেন, বুঝে উঠতে পারেন না। বিশেষ চাহিদাসম্পন্নেরা নির্দিষ্ট লয়-তালের মাধ্যমে নিজেকে জানতে, পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী কী ভাবে কোনও কাজ করতে হয় তার একটা ধারণা পায়। নামে নাচ থাকলেও এই থেরাপির প্রধান মাধ্যম ছন্দ (রিদ্‌ম) এবং নড়াচড়া (মুভমেন্ট)।’’

অনুষ্ঠান দেখে উচ্ছ্বসিত বছর একুশের আদিত্য গঙ্গ্যোপাধ্যায়। অটিজ়ম আছে আর্ট কলেজের ছাত্র আদিত্যের। তাঁর কথায়, ‘‘পুরো অনুষ্ঠানে বাচ্চারা খুব আনন্দ পেয়েছে দেখেই ভাল লাগছে। ওদের সঙ্গে মঞ্চে থাকতে পারলে আমার আরও ভাল লাগত। দেখে মনে হচ্ছিল, আমিও ওদের এক জন।’’

Madhusudan Mancha Programme
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy