Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Corona virus

আপনার কি করোনা হয়েছে, বুঝবেন কী উপায়ে?

ভাইরাল লোড কম হলে অনেক সময়েই শরীরে ভাইরাস থাকলেও রিপোর্ট নেগেটিভ আসে

জ্বর সর্দি-কাশি বেশ কয়েকদিন থাকলেই রক্তপরীক্ষা করাতে হবে। ছবি: শাটারস্টক

জ্বর সর্দি-কাশি বেশ কয়েকদিন থাকলেই রক্তপরীক্ষা করাতে হবে। ছবি: শাটারস্টক

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২০ ১৭:১০
Share: Save:

কোত্থাও কিচ্ছু নেই, আচমকা শুনলেন পাড়ার অত্যন্ত চেনা দাদা করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। অথচ গত পরশুই তাঁর সঙ্গে বাজারে আড্ডা হয়েছে! জ্বর-কাশি কিছুই ছিল না। গতকালই বরাহনগরে এক মুদিখানা ব্যবসায়ী কোনও চেনা উপসর্গ ছাড়াই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। তাহলে কি উপসর্গ ছাড়াই করোনা আচমকা মারাত্মক রূপ নিচ্ছে?

কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বদলে যাচ্ছে উপসর্গের ধরন। চেনাশোনা অনেকেই করোনা আক্রান্ত। ব্যাপারটাকে অনেকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অনেকে আবার আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে যাঁদের কাজের প্রয়োজনে নিয়ম করে বাইরে বেরতে হচ্ছে তাঁদের অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে ভাবছেন তাঁরা করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন কিনা।

কী কী উপসর্গ দেখা গেলে কোভিড সংক্রমণের আশঙ্কা করতে হবে?

ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ জ্যোতিষ্ক পাল জানালেন,কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে শুরুর দিকে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও গলা ব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে রোগীরা এলে কোভিড টেস্ট করে রোগ নির্ণয় করা হচ্ছিল। এর পর হাসপাতালে এমন কিছু রোগী আসতে শুরু করলেন যাঁদের সিনকোপ, অর্থাৎ সাময়িক ভাবে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ইতিহাস ছিল। এঁদের অনেকের শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে কমে যাওয়ায় ঝিমিয়ে পড়েন। রুটিন মতো এঁদের কোভিড টেস্ট করে কোভিড-১৯ ভাইরাস পাওয়া গেল।

আরও পড়ুন: যক্ষ্মার টিকায় কি জব্দ হতে পারে করোনা? কী বলছেন বিজ্ঞানী ও ডাক্তাররা?​

জ্যোতিষ্ক পাল জানালেন, ইদানিং বেশ কিছু কোভিড রোগী আসছেন নিউরোলজিক্যাল, অর্থাৎ নার্ভের সমস্যা নিয়ে। একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক স্ট্রোক নিয়ে ভর্তি হওয়ার পর দেখা গেল তাঁর স্ট্রোকের কারণ কোভিড-১৯। হার্ট ব্লক বা অ্যারিদমিয়া অর্থাৎ হৃদ্স্পন্দনের ছন্দ বিঘ্নিত হলেও কোভিড পজিটিভ হতে পারে। জ্যোতিষ্কবাবু জানালেন হার্ট অ্যাটাক, ব্রেন স্ট্রোক, সিনকোপ বা সাময়িক জ্ঞান হারানোর মতো উপসর্গ নিয়েও করোনার রোগীরা আসছেন। এছাড়া শরীরে এমন কোনও অস্বস্তি হচ্ছে যা আগে কখনও হয়নি। সেই ধরণের উপসর্গ থাকলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বললেন জ্যোতিষ্ক পাল। আসলে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণে মাইক্রোভেসেলস, অর্থাৎ শরীরের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম রক্তজালিকাতে রক্তের ডেলা আটকে যায়। ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্তের অভাবে নানান বিপত্তি দেখা যায়। ফুসফুসে হলে শ্বাসকষ্ট, হৃদপিণ্ডে হলে হার্ট অ্যাটাক ও মস্তিষ্কে হলে স্ট্রোক হয়।

শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে কমে যাওয়ায় ঝিমিয়ে পড়েন কেউ কেউ। ছবি: শাটারস্টক

মেডিসিনের চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় জানালেন,করোনা আক্রান্তদের কী ধরনের উপসর্গ দেখা যাবে তা কিছুটা নির্ভর করে ভাইরাল লোডের উপর। অর্থাৎ যার শরীরে ভাইরাল লোড কম, তিনি সাধারণত অ্যাসিম্পটোম্যাটিক থাকবেন, অর্থাৎ উল্লেখযোগ্য কোনও উপসর্গ দেখা যাবে না। মাঝারি মানের ভাইরাল লোড হলে অল্প জ্বর, গা ম্যাজ ম্যাজ করা, সামান্য গলাব্যথার মতো সমস্যা হতে পারে, আর ভাইরাল লোড বেশি হলে শরীর বেশি খারাপ হবে। সুকুমারবাবু জানালেন, যে কোনও ছোটখাট উপসর্গও অনেক সময় মারাত্মক আকার নিতে পারে। তাই কোনও অবস্থাতেই এই অতিমারি সৃষ্টিকারী ভাইরাসকে অবহেলা করা উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কোভিড টেস্ট করানো উচিত।

বেশ কিছু কোভিড রোগী আসছেন নিউরোলজিক্যাল সমস্যা নিয়ে। ছবি: শাটারস্টক

এই প্রসঙ্গে জ্যোতিষ্কবাবু জানালেন, ভাইরাল লোড কম হলে অনেক সময়েই শরীরে ভাইরাস থাকলেও রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এমনিতেই কোভিড-১৯ এর টেস্ট আরটিপিসিআর-এর ফল ৩০% - ৪০% ক্ষেত্রে নেগেটিভ আসে। চিকিৎসকের সন্দেহ হলে তিনি দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার পরীক্ষা করাতে পারেন।

আরও পড়ুন: রোজ কেন খেতেই হবে এই গরিবের ‘আপেল’?​

ম্যাসাচ্যুসেটস জেনারেল হাসপাতালের সহ-অধিকর্তা উইলিয়াম হিলম্যান এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি আর্ভিং মেডিক্যাল সেন্টারের সিনিয়র ফাউন্ডার মেডিক্যাল ডিরেক্টর ডেভিড বাছলজ ‘দ্য গার্ডিয়ান’-কে জানিয়েছেন যে অতিমারি সৃষ্টিকারী কোভিড-১৯ ভাইরাসটির চরিত্র ও সংক্রমণজনিত উপসর্গ নিয়ে আরও অনেক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা প্রয়োজন। যে অঞ্চলে ভাইরাসের প্রকোপ বেশি তাঁদের রোগ প্রতিরোধের ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: করোনা-আবহে দাঁতের চিকিৎসায় অবহেলা করছেন? কী বলছেন চিকিৎসকেরা?​

এই দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, অসুখটাকে কোনওমতেই উপেক্ষা করা উচিত নয়। আক্রান্ত এলাকার বাসিন্দাদের প্রত্যেকেই সংক্রমিত হতে পারেন। ছোটখাট কোনও রকম লক্ষণ দেখলে অবশ্যই ক্লিনিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

এক নজরে জেনে নেওয়া যাক কী কী লক্ষণ দেখলে করোনার আশঙ্কা করতে পারেন।

১. গলা ব্যথা, সর্দি

২. শুকনো কাশি

৩. জ্বর জ্বর ভাব

৪. দুর্বলতা, গা ম্যাজম্যাজ করা

৫. মাথা, গা, হাত-পা ব্যথা করা

৬. জিভের স্বাদ ও গন্ধের বোধ চলে গিয়ে খাবার খেতে অনীহা

৭. মাথা ব্যথা

৮. চোখ লাল হয়ে জল পড়া

৯. ডায়ারিয়া ও পেটে ব্যথা

১০. হাত ও পায়ের আঙুলের রং বদলে যাওয়া

১১. ত্বকে র‍্যাশ ও চুলকানি

১২. বুকে চাপ ধরা ভাব ও যন্ত্রণা

১৩. নিঃশ্বাসের কষ্ট, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে যাওয়া

১৪. আচমকা কয়েক মিনিটের জন্যে ব্ল্যাক আউট হয়ে যাওয়া

১৫. কথা বলতে অসুবিধে হওয়া।

উপরের উপসর্গের কোনও একটি দেখলেই যে আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে দৌড়াতে হবে তা নয়। লক্ষণগুলি যদি থেকেই যায়, সমস্যা বাড়তে শুরু করে তখন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বাড়িতে থাকুন, দূরত্ববিধি মেনে মাস্ক পরে কোভিড ১৯ কে দূরে রাখুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE