Advertisement
E-Paper

নিয়ম মেনে খেলে ‘অ্যান্টি’ নয় অ্যান্টিবায়োটিক

নিয়ম মেনে না খেলে শত্রু হতে পারে অ্যান্টিবায়োটিক। লিখেছেন জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সোমক দাস।নিয়ম মেনে না খেলে শত্রু হতে পারে অ্যান্টিবায়োটিক। লিখেছেন জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সোমক দাস।

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২৩

ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে শরীরে কোনও সংক্রমণ হলে তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। অ্যান্টিবায়োটিক কিছু ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে আবার কিছু ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ও বংশবিস্তারে বাঁধা তৈরি করে। অ্যান্টিবায়োটিক আবার ভাইরাসের ক্ষেত্রে মোটেই কার্যকরী নয়। নিয়ম না মেনে, বা চিকিৎসকদের পরামর্শ না নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা একেবারে অনুচিত। এমনকি চিকিৎসকদেরও এর নিয়মকানুন ভাল করে জেনে তবেই রোগীর প্রেসক্রিপশনে লিখতে হবে। এবং রোগীকে এটি খাওয়ার নিয়মকানুন ভাল করে বুঝিয়ে দিতে হবে।

অ্যান্টিবায়োটিক চলাকালীন শরীর অনেকটা সুস্থ বোধ হলে অনেকে মাঝপথে ওষুধ থামিয়ে দেন। অর্থাৎ, হয়তো চিকিৎসক মোট ১২টি ওষুধ খেতে বলেছেন, রোগী ৮টি খাওয়ার পর একটু সুস্থ বোধ করতে বাকি ৪টি ওষুধ খেলেন না। এটি মারাত্মক ভুল। সুস্থ বোধ হলেও অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স সবসময় শেষ করতে হবে। তা না-হলে পরবর্তীকালে কোনও রোগে ওই অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে তাঁর শরীরে প্রতিরোধ তৈরি হতে পারে। অর্থাৎ সেই ওষুধ আর কাজ করবে না। সাধারণ সর্দি-কাশি বা ডায়েরিয়া মূলত ভাইরাসের কারণে হয়। ফলে এই ধরনের সমস্যায় মুড়িমুড়কির মতো অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়।

প্রাচীন গ্রীসেও বিভিন্ন উদ্ভিদের নানা অংশ (যেগুলিতে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান রয়েছে) সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবহার করা হত। বিংশ শতাব্দীতে আধুনিক অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পর চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটা নতুন দিক খুলে গেল। উত্তরণ ঘটল চিকিৎসা বিজ্ঞানের।

এক সময় ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ-জনিত বিভিন্ন রোগে মানুষের মৃত্যু ছিল সাধারণ ঘটনা। অ্যান্টিবায়োটিক বের হওয়ার ফলে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচল। কিন্তু এর যথেচ্ছ ও অপরিকল্পিত ব্যবহার মানব শরীরে নানা রকমের ক্ষতিও করছে। অনেক সময় অনেক ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করছে। এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের সামনে এখন মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’ নিয়ে গোটা বিশ্বের চিকিৎসক মহল এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চিন্তিত। ২০১৬ সালে এ নিয়ে সংস্থার কর্মকর্তারা শীর্ষ স্তরের বৈঠকও করেছেন।

ছোটখাট অসুখেই চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলি।

রোগীর সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসক প্রথমে শনাক্ত করার চেষ্টা করেন কোন শ্রেণির ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে সংক্রমণ হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়াকে সঠিক চেনা যায় না, সে ক্ষেত্রে কিছু চিকিৎসক এমন কিছু অ্যান্টিবায়োটিক দেন, যেগুলি বহু রকমের ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম। এটা যেমন এক দিকে কার্যকরী হয় আবার অন্য দিকে এর থেকে অ্যান্টিবায়োটিকে প্রতিরোধ জন্মানোর আশঙ্কাও বাড়ে।

ভাল-মন্দ নির্বিশেষে শরীরের যে সব ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যাপারে স্পর্শকাতর সেগুলিকে অ্যান্টিবায়োটিক ধ্বংস করে দিতে পারে। এই ভাবে শরীরে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ফলে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরে পেট খারাপ, ডায়েরিয়া, মুখের স্বাদ কমে যাওয়া, দুর্বলতা, মেয়েদের জননাঙ্গে সংক্রমন ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসকেরাও রোগ তাড়াতাড়ি কমাতে গিয়ে না-হলেও অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দেন।

অল্প বয়সে বেশি অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার অনেক সময় স্থূলতার জন্য দায়ী হয়। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার সময় মদ্যপান করা উচিত নয়। তাতে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা কমে যায়। গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। ওষুধ বাছাইয়ের সময় খুব সচেচন থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ভাবেই ওই সময় ওষুধ খাওয়া যাবে না। কারণ, মা ও মায়ের গর্ভের ভ্রূণের উপর এর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক খেলে হয়তো রোগ কমে, কিন্তু পরে নানা রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

অ্যান্টিবায়োটিক গর্ভনিরোধক ওষুধের কার্যক্ষমতাও কমিয়ে দিতে পারে। মানুষের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হলে এবং ব্যাকটেরিয়া মারা না গেলে সেই রোগী অনেক সময় জীবাণুর বাহকে পরিণত হতে পারেন। বর্তমানে এটা খুবই দেখা যাচ্ছে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তাঁদের অনেকেরই মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষ্মা। অনিয়মিত ওষুধ খাওয়া, ডোজ সম্পূর্ণ না-করা, ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্ম দেয়।

ঠিক একই জিনিস ভুলভাবে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে হয়। তখন এতে ব্যাকটেরিয়া পুরোপুরি মরে না, দুর্বল হয়ে পড়ে। পরে সেই ব্যাকটেরিয়া বংশবৃদ্ধি করে। রোগী আগে যে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে সহজেই সেরে উঠতেন, এখন আর তা হবেন না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলির একাধিক সংস্থা এ নিয়ে মানুষকে সচেতন করে তুলছে। বিশ্বজুড়ে সেমিনার, প্রচার চলছে।

ছবি: প্রণব দেবনাথ ও নিজস্ব চিত্র

Health Tips Medicine Antibiotics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy