Advertisement
E-Paper

উৎসবের আবহে কতটা আলোর খোঁজ করেন দৃষ্টিহীনরা? মনোবিদের কাছে অকপট শ্রেয়া এবং সায়ন্তন

উৎসবের আবহে ‘লোকে কী বলবে’-র বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রতি সোমবারের মতো এ দিনও উপস্থিত ছিলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে মনোবিদের সঙ্গী শ্রেয়া ঘোষ ও সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’জনেই দৃষ্টিশক্তিহীন। প্রতিকূলতাকে কাটিয়েই জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলেছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ২১:০৯
Anuttama Banerjee discuss how blind people deal with their struggles during festive season.

মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

আলোর উৎসব ঘিরে যখন দেশ জুড়ে উদ্‌যাপন তুঙ্গে, তখনও অন্ধকারে ডুবে এক দল মানুষ। তাঁরা হয়তো আলোর রোশনাই দেখতে পান না, তবুও নিজেদের মতো করে জীবনে আলোর খোঁজ করে চলেছেন। উৎসবের আবহে ‘লোকে কী বলবে’-র বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রতি সোমবারের মতো এ দিনও উপস্থিত ছিলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে মনোবিদের সঙ্গী শ্রেয়া ঘোষ ও সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’জনেই দৃষ্টিশক্তিহীন। প্রতিকূলতাকে কাটিয়েই জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলেছেন তাঁরা। আলো-অন্ধকারের সংজ্ঞাটা দু’জনের কাছেই বেশ খানিকটা আলাদা। কী ভাবে সায়ন্তন ও শ্রেয়ার জীবনে আলো ও অন্ধকার পৌঁছয়, সেই প্রসঙ্গেই এই সপ্তাহের পর্ব। নাম 'আলো অন্ধকার'। দৃষ্টি না থাকার মানে যে কেবল অন্ধকারের মধ্যে থাকা নয়, সেই সম্পর্কেই নানা কথা উঠে এল এ দিনের পর্বে।

দৃষ্টিহীনতার অভিজ্ঞতা শ্রেয়ার কাছে কেমন, তা জানতে চাইলেন মনোবিদ। ইতিহাসে পিইচডি করছেন শ্রেয়া। তিনি বললেন, ‘‘চার বছর বয়স অবধি আমার দৃষ্টি ছিল। তাই আলো-আঁধারির বোধটা আমার কাছে বেশ স্পষ্ট। তবে চোখে ক্যানসার হওয়ার কারণে দৃষ্টিশক্তি চলে যায় আমার। হঠাৎ দৃষ্টিমান থেকে দৃষ্টিহীন হয়ে পড়া, এই গোটা বিষয়টা মেনে নিতেই আমার অনেকগুলো বছর চলে গিয়েছিল। সাধারণ স্কুল থেকে বিশেষ স্কুলে ভর্তি হওয়ার বিষয়টিও আমার কাছে বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। দিদি সব বিষয় পাশ করে, আমি যেন কোনওটাতে ফেল না করি, সেই ভয়টাও কাজ করত মনের মধ্যে।’’ নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন সায়ন্তনও। পেশায় স্কুলশিক্ষক সায়ন্তন বলেন, ‘‘মাত্র দু'শতাংশ বাঁচার সম্ভাবনা ছিল আমার। জন্মের পর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল আমার জীবন সংগ্রাম। জন্মের পর যখন হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে এলাম, তখন বলা হল, মা আর বাবা ছাড়া আর কেউই আমার ঘরে ঢুকতে পারবে না। ঢুকলেই সংক্রমণ হয়ে আমার মৃত্যু হতে পারে। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে ঠিক কী সমস্যা হয়েছে আমার, তা বুঝতে পারছিলেন না। তাঁরা বলছিলেন, হয়তো মস্তিষ্কে কোনও সমস্যা আর না হয় চোখের বড় কোনও সমস্যা হতে পারে। শেষমেশ ধরা পড়ল, রেটিনায় সমস্যা রয়েছে আমার। অস্ত্রোপচার করেও লাভের লাভ কিছুই হল না। দাদার মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে গিয়ে সাইকেল চালাতে গেলাম। সাইকেল চালাতে গিয়ে তিন বছর বয়সেই তিন তলা থেকে পড়ে গিয়ে মাথা ফাটল। সেই দিনের পর বাবা আমায় বুঝিয়েছিলেন, তাঁরা পাশে থাকলেও নিজের সংগ্রামটা নিজেকেই করতে হবে।’’

চারদিকে উৎসবের আবহ। এই মরসুমে শ্রেয়া আর সায়ন্তন কি আদৌ ভাল ভাবে উদ্‌যাপন করতে পারেন? সমাজ কতটা তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসে? সোমবারের পর্বে কথা হয়েছে সে নিয়ে। শ্রেয়া বলেন, ‘‘যখন ঠাকুর দেখতে প্যান্ডেলে যাই, তখন কানে আসে— 'মণ্ডপসজ্জায় হাত দেবেন না'। কিন্তু, হাত না দিলে বুঝব কী করে। কেউ যদি আমাদের বর্ণনা করে বুঝিয়ে দেন, তাতেও বেশ খানিকটা সময় লেগে যায়। তাতেও ভিড় বেড়ে গিয়ে বাকিরা সমস্যায় পড়েন। ছোটবেলায় ঠাকুর দেখতে যেতাম বটে, তবে বড় হওয়ার পর নিজেকে আর সেই কষ্ট দিতে ভাল লাগে না। রাত জেগে, অতটা হেঁটে গিয়ে শেষমেশ তো ঠাকুর আর প্যান্ডেল... কিছুই চোখে পড়ে না। তা হলে গিয়ে কী লাভ! ছোটবেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে ঠাকুর দেখা অন্য রকম, তবে বড় হয়ে বিষয়টাকে সকলে এক রকম ভাবে দেখেন না। তাই সমস্যা হয়। সারা ক্ষণ মনের মধ্যে চলে, আমাকে দেখে লোকে কী বলবে!’’

দৃষ্টিহীন মানুষদের রাস্তায় দেখলেই এখনও অনেকেই অনেক রকম মন্তব্য করেন। কটুকথাও শুনতে হয় তাঁদের। শ্রেয়া বললেন, ‘‘আমি সিনেমার টিকিট কিনতে গেলে আমায় শুনতে হয়, আপনি কী করে সিনেমা দেখবেন? লোকের ধারণা, কেবল চোখ থাকলেই বুঝি সিনেমা দেখা যায়। তবে সিনেমার সংলাপ ও আবহসঙ্গীত শুনেও আমরাও যে সিনেমা উপলব্ধি করতে পারি, সে ধারণাই নেই অনেকের।’’

জীবনে পথ চলার ক্ষেত্রে নানা রকম সমস্যার মুখে পড়তে হয় শ্রেয়া ও সায়ন্তনকে। তবে, সব বাধা পেরিয়ে জীবনে এগিয়ে চলতে প্রস্তুত শ্রেয়া ও সায়ন্তন।

Mental Health Anuttama Banerjee Mental Health Tips Blind People festive season
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy