Advertisement
E-Paper

ছোটদের আদর করতে গেলেও তাদের সম্মতি প্রয়োজন: যৌন নির্যাতনের প্রতিকার বিষয়ে সরব বিশিষ্টেরা

আরজি কর আন্দোলনের সময়ে তৈরি হওয়া সংগঠন ‘নাগরিক চেতনা’ যেন ‘নতুন মানুষ গড়ার ইনকিউবেটর’। তারই সূচনাপর্বে সোমবার সন্ধ্যায় আলোচনাসভা বসল জ্ঞানমঞ্চে। অপর্ণা সেন, সুমন মুখোপাধ্যায়, সুদেষ্ণা রায় এবং সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন কথক।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৫ ১৮:০২
আলোচনা সভায় অপর্ণা সেন, সুমন মুখোপাধ্যায়, সুদেষ্ণা রায় এবং সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।

আলোচনা সভায় অপর্ণা সেন, সুমন মুখোপাধ্যায়, সুদেষ্ণা রায় এবং সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

‘নতুন পুরুষ’, ‘নতুন নারী’, থুড়ি ‘নতুন মানুষ’ (লিঙ্গসীমায় আবদ্ধ নয়) গড়ার ভাবনা। কিন্তু তা শহরের চৌহদ্দিতেই আবদ্ধ থাকবে না। প্রশ্ন উঠবে। উত্তরও আসবে৷ আড্ডা থেকে আলোচনা, বাঙালির পুরনো অভ্যাসকে জাগিয়ে তোলা হবে। আর তার মাধ্যমেই নতুন মানুষ জন্ম নেবে। না, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নয়৷ রক্তমাংসের মানুষেরাই এই দায়িত্ব নিলেন। উদ্যোগ নিলেন শহরের বিশিষ্টজনেরা। সঙ্গ দিচ্ছেন সাধারণেরাও। আরজি কর আন্দোলনের সময়ে তৈরি হওয়া সংগঠন ‘নাগরিক চেতনা’ যেন ‘নতুন মানুষ গড়ার ইনকিউবেটর’। তারই সূচনাপর্বে সোমবার সন্ধ্যায় আলোচনাসভা বসল জ্ঞানমঞ্চে। অপর্ণা সেন, সুমন মুখোপাধ্যায়, সুদেষ্ণা রায় এবং সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন কথক।

আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং হত্যার পর বছর ঘুরে গিয়েছে। তাই তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, নতুন পুরুষ কী ভাবে তৈরি হবে আজকের সমাজে? কারণ এই পুরুষের হাতেই বার বার নির্যাতিত হচ্ছেন মেয়েরা। আবার পুরুষেরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্যাতিত হন। আরজি করের ঘটনার পর কর্মক্ষেত্রে যৌন নির্যাতন বিশেষ করে ভাবাচ্ছে সকলকে। যদিও পরিচালক সুদেষ্ণা রায়, যিনি বহু বছর ধরে নারীনির্যাতন নিয়ে কাজ করে আসছেন, তাঁর মতে, আরজি করের ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও বহু যুগ ধরে এমন দৃষ্টান্ত দেখা যাচ্ছে। পরিচালক-প্রযোজকের কথায়, ‘‘আমি এত দিন ধরে যে কাজ করে চলেছি, তাতে দেখেছি, বাড়িতেই সবচেয়ে বেশি সুরক্ষাহীন মেয়েরা। পুরুষেরাও। সমীক্ষা করেও দেখিয়েছি, ৯৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মহিলারা বলেছেন, তাঁরা যৌন নিগ্রহের শিকার। এবং তাঁরা ১৮ পেরোনোর আগেই এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন বেশি। ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী, বাবার বস্, বা যাঁর উপর নির্ভর করছি, তাঁরাই এগুলি ঘটাচ্ছেন। অপরাধীকে শিক্ষা না দিয়ে উল্টে মেয়েটিকেই চুপ করে থাকতে শেখানো হচ্ছে৷ সতর্ক করা হচ্ছে।’’ আর তাই সুদেষ্ণার মতে, নতুন পুরুষকে বুঝতে হবে, মহিলাদের অনুমতি গুরুত্বপূর্ণ। বুঝতে হবে, সে নিজেও হয়তো নির্যাতনের শিকার হতে পারে। সব শিখতে হবে তাকে। সুদেষ্ণার পরামর্শ, দেশে আইনকানুন আছে, পশ, পকসো, সব আছে, সে সবের সাহায্য নিন সকলে। শিশুদের আদর করার ক্ষেত্রেও যে সচেতন হওয়া জরুরি, সে বিষয়টিও মনে করিয়ে দিলেন সুদেষ্ণা। ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে বোঝালেন পরিচালক। সুদেষ্ণা তাঁর নাতিকে আদর করার আগেই নাতি নাকি বলে ওঠে, ‘‘আমি চাই না, আমায় কেউ চুম্বন করুক।’’ সুদেষ্ণা বললেন, ‘‘শিশু মানেই আদর করা যাবে, বা যে ভাবে খুশি ছোঁয়া যাবে, এই ধারণা থেকেও বেরোতে হবে। তাদের ইচ্ছেকে সম্মান দিতে হবে।’’

সোমবার সন্ধ্যায় জ্ঞানমঞ্চে আলোচনাসভা।

সোমবার সন্ধ্যায় জ্ঞানমঞ্চে আলোচনাসভা। ছবি: ফেসবুক।

সুজয়প্রসাদ নিজে স্কুলপ্রাঙ্গণে একাধিক বার হেনস্থার শিকার হয়েছেন। বার বার তাঁকে স্পর্শ করা হয়েছে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে। স্কুলের মতো জায়গায় তিনি সাহায্য পাননি। আর সেখান থেকেই তিনি বুঝতে পারেন, শিশুরা চাইলে বড় নিষ্ঠুর হতে পারে। আর তাই নতুন মানুষ গড়ার এই কাজ চালিয়ে যাওয়া জরুরি বলে মনে হয় তাঁর। নয়তো স্কুল থেকে কলেজ, অফিস থেকে শুটিং— সর্বত্রই বিপদ লুকিয়ে থাকতে পারে।

বর্ষীয়ান অভিনেত্রী অপর্ণা সেনের মতে, তাঁদের মতো খ্যাতনামীদের উপর বাড়তি দায়িত্ব বর্তায়। এর আগে একাধিক বার কটাক্ষের সম্মুখীন হয়েছেন অপর্ণা, কিন্তু তা-ও ‘বয়স্ক কণ্ঠস্বর’ তুলতে ইতস্তত করবেন না বলে জানিয়ে দিলেন তিনি। অপর্ণার কথায়, ‘‘এই ধরনের ঘটনা পৃথিবীর সব দেশেই হয়। আর এগুলি হলে প্রশাসনকেই দায়ী করতে হয়। আমরা কিছু পরিকল্পনা করেছি, পাড়ায় পাড়ায় নজরদারি বাড়ানো, ছেলেদের ক্লাবকে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ ক্লাবে পরিণত করা ইত্যাদি। আসলে একটা পিতৃতান্ত্রিক বন্দোবস্ত ভাঙতে সময় লাগে। রাতারাতি কিছু হয় না। আমার শুধু বক্তব্য, মানুষের মধ্যে দায়িত্ববোধ বাড়ানোর প্রক্রিয়াটা শুরু করে দিতে হবে। আইনি পথে যাওয়া, মিটিং মিছিল করা, সবই প্রয়োজন। সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে যেতে হবে। আমি যেহেতু সুবিধাপ্রাপ্ত অবস্থানে রয়েছি, তাই এই দায়িত্ব বর্তায় আমার উপর।’’

কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় ‘নাগরিক চেতনা’। এই সংগঠনের মধ্যে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের পরস্পরের রাজনৈতিক মতবাদ ভিন্ন হলেও একজোট হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে নেমেছেন তাঁরা।

সুমন মুখোপাধ্যায় নাট্যমাধ্যমকে ব্যবহার করে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে যেতে চাইছেন। নতুন প্রজন্মের চোখের সামনে কম্পিউটার সৃষ্ট নানাবিধ তথ্য চলে আসছে। কিন্তু উপযুক্ত জ্ঞানের অভাবে, কথোপকথনের অভাবে তাদের কাছে সেই তথ্য যাচাই করার কোনও প্রেক্ষিতই নেই। তাঁর মতে, সব কিছুকে গুলিয়ে দিচ্ছে পুঁজিবাদী, দক্ষিণপন্থী, ধর্মীয় মৌলবাদ। তরুণ প্রজন্মের মগজটাকে দখল করে নিচ্ছে এরাই। আর তাই কৌমবোধ ফিরিয়ে আনা দরকার বলে মনে করছেন পরিচালক। সেই উদ্দেশ্যেই নাগরিক নাট্যসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে জেলায় জেলায় যেতে হবে। স্কুল-কলেজে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গেও কথা বলতে হবে। আর সেই ধারণা থেকেই জ্ঞানমঞ্চে আলোচনা সভা শেষ হওয়ার পর নাট্যকর্মীরা ‘জাগরণে যায় বিভাবরী’ নাটকটি মঞ্চস্থ করলেন সুমনের নির্দেশে।

Women Harassment Child Harassment Sexual abuse
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy