মানিকতলা গৌরীবাড়ির পুরনো বাঙালি পাড়ায় জনপ্রতিনিধির তরফে ইংরেজি নববর্ষের ব্যানার পড়েছিল সাতটি। এই সময়ে বেশি ব্যানার পড়ে ইংরেজিতেই। কিন্তু গৌরীবাড়ির চারটিই হিন্দিতে। দু’টি ইংরেজি আর মাত্র একটি বাংলায়!
এমনটা কেন? বার কয়েক এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টার পরে জন প্রতিনিধি বললেন, “ওটা আর বাঙালি পাড়া নেই। অবাংলাভাষীর সংখ্যা প্রচুর বেড়ে গিয়েছে। ওঁদের কাছে পৌঁছনোর দায় তো আছেই!” এর পরে স্বগতোক্তির ঢঙে বললেন, “আমি হিন্দি পড়তে পারি না। কিন্তু হিন্দিতে এমন কথা বলব যে বোঝা যাবে না। হিন্দি রাখব না বাংলা, সেই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে এ বারের মতো হিন্দিতেই ব্যানার বানিয়ে ফেলেছি। দেখা যাক, কেমন সাড়া মেলে!”
জনপ্রতিনিধি এই দ্বন্দ্ব সাময়িক ভাবে মেটাতে পারলেও পাড়ায় পাড়ায় ‘বন্ধু’র সঙ্গে ‘ইয়ার’-এর, ‘ওই’-এর সঙ্গে ‘আব্বে’-র, পাঞ্জাবির সঙ্গে কুর্তার, ঘোলের সঙ্গে লস্যির, আলপনার সঙ্গে রঙ্গোলির, গায়ে হলুদের সঙ্গে মেহেন্দির বা সঙ্গীতের, দোলের সঙ্গে হোলির, দীপাবলির সঙ্গে দিওয়ালি বা ধনতেরসের দ্বন্দ্ব মিটছে কই? ভোটের হাওয়ায় তা আরও বেড়ে গিয়েছে বলেই খবর। কোথাও অবাঙালিদের নাম করে ‘বহিরাগত’ লেখা ব্যানার পড়ছে। কোথাও আবার নিজেদের নাম-ছবি দিয়ে কেউ লিখছেন, ‘আমরাই ভূমিপুত্র’! রাজনৈতিক নেতা থেকে সমাজতত্ত্বের শিক্ষকেরা যদিও মনে করছেন, এই দ্বন্দ্ব এক দিনের নয়। বদলে যাওয়া পাড়ার চরিত্রের সঙ্গেই তা পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। শহরে নতুন তৈরি হওয়া খাবারের দোকানের নাম ইংরেজিতে বা হিন্দিতে রাখার ঝোঁকই বেশি। বেহালায় একটি মাঠের উদ্বোধনের আগে নামফলকের ভাষা ইংরেজি থেকে বদলে হিন্দিতে করা হয়েছে বদলে যাওয়া চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে।