Advertisement
E-Paper

হার্ট ফেলিওর এড়াতে খাদ্যতালিকা থেকে আজই বাদ দিন নুন

পৃথিবী জুড়ে হার্ট ফেলিওর রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। অথচ এই ব্যাপারে অনেকেরই ধারণা ভাসা ভাসা। হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে হার্ট ফেলিওরকে কমবেশি প্রায় সকলেই গুলিয়ে ফেলেন। হার্ট ফেলিওর হলে, কিছু নিয়ম মেনে না চললে বিপদের ঝুঁকি বাড়ে, বললেন কার্ডিওলজিস্ট পি কে হাজরা এবং পি সি মণ্ডল। শুনলেন সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়।হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে হার্ট ফেলিওরকে কমবেশি প্রায় সকলেই গুলিয়ে ফেলেন। হার্ট ফেলিওর হলে, কিছু নিয়ম মেনে না চললে বিপদের ঝুঁকি বাড়ে।

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৮ ১১:১১
বুকে ব্যথা? মেনে চলুন কিছু নিয়ম। ফাইল চিত্র।

বুকে ব্যথা? মেনে চলুন কিছু নিয়ম। ফাইল চিত্র।

হার্ট ফেলিওর মানেই হৃৎপিন্ড থেমে যাওয়া, বেশির ভাগ মানুষেরই এই ধারণা। আর এটাও তাঁরা মানেন যে, হার্ট অ্যাটাক আর হার্ট ফেলিওর ব্যাপারটা ‘এক’। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী, এই দু’টি সমস্যা সম্পুর্ণ আলাদা।

নানা কারণে হৃৎপিণ্ডের পেশি দুর্বল হয়ে গিয়ে পাম্প করার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে রক্ত চলাচল ব্যহত হয়, অক্সিজেনের ঘাটতিতে শুরু হয় বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা। এটাই হার্ট ফেলিওর। ডাক্তাররা হার্ট ফেলিওরকে ‘অসুখ’ না বলে, বলেন ‘সিনড্রোম’।

অন্য দিকে হার্ট অ্যাটাক ব্যাপারটা অন্য রকম। হৃৎপিণ্ডের রক্তবাহী ধমনিতে চর্বির প্রলেপ জমে রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে হার্টের পেশি অক্সিজেনের অভাবে ধুঁকতে শুরু করে। দ্রুত চিকিৎসা না করালে হৃৎপিণ্ডের পেশির কিছু অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত যায় তবে হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে হার্ট ফেলিওরের একটা সম্পর্ক আছে বইকি। এক দিকে যেমন কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ (অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডের রক্তবাহী ধমনিতে চর্বি জমে হার্টের রক্ত চলাচল কমে যাওয়া) বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হার্ট ফেলিওরের মতো সমস্যাও।

আরও পড়ুন : এয়ারটেলকে টেক্কা দিয়ে এ বার ডাবল ধামাকা জিও-র

বিশ্বের প্রায় আড়াই কোটি মানুষ হার্ট ফেলিওর নিয়ে দিন যাপনের গ্লানি বয়ে বেড়াচ্ছেন। এদের মধ্যে আমাদের দেশে হার্ট ফেলিওরের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ২০১০ সালে প্রকাশিত ‘ন্যাশানাল মেডিক্যাল জার্নাল অফ ইন্ডিয়া’-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অঙ্কটা ৪৬ লক্ষের। প্রতি বছর ১৮ লক্ষ মানুষ নতুন করে শিকার হচ্ছেন হার্ট ফেলিওরের। আর এই সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে উন্নতমানের চিকিৎসা করালেও, প্রায় ২০–৩০ শতাংশ রোগীকে বাঁচানো যায় না। হার্ট ফেলিওর শুধু আমাদের দেশেই নয়, সব দেশের চিকিৎসকদের মাথা ব্যথার কারণ। মানুষের গড় আয়ু যোমন বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হার্ট ফেলিওরের ঘটনাও কিন্তু মহামারীর আকার নিচ্ছে। তবে শুরুতে অত্যাধুনিক চিকিৎসার সাহায্য নিয়ে এবং দৈনিক জীবনযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন আনলে ভাল থাকা যায়।

হা্র্ট অ্যাটাক আটকাতে নুন থেকে দূরে থাকুন। ফাইল চিত্র।

হার্টের পাম্প করার ক্ষমতা কমে যায় কেন

হার্টের পেশি দুর্বল হয়ে গেলে পাম্প করার ক্ষমতা কমতে শুরু করে। অনেকগুলো কারণ এর জন্য দায়ী।

হার্ট অ্যাটাকের পর সঠিক চিকিৎসা না হলে এবং লাইফস্টাইল পালটাতে না পারলে হৃৎপিণ্ডের পেশি দুর্বল হতে শুরু করে। করোনারি আর্টারি ডিজিজ থাকলে হৃৎপিণ্ডের পেশিতে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে এই সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। হাই ব্লাড প্রেশার থাকলে হার্টকে অনেক বেশি পাম্প করতে হয়। সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ করতে গিয়েও পেশি ক্রমশ ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। হৃৎপিণ্ডের ভালভের সমস্যা থাকলেও হার্ট ফেলিওরের ঝুঁকি বাড়ে। জন্মগত ভাবে হার্টের ভালভের ত্রুটি থাকলে অথবা সংক্রমণের শিকার হলে ভালভ ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। বিভিন্ন ওষুধের (কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত) পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, মদ্যপান, সংক্রমণ সহ নানা কারণে কার্ডিওমায়োপ্যাথি নামক অসুখ হলেও হার্ট ফেলিওর হতে পারে। ভাইরাল ইনফেকশন মায়োকার্ডাইটিস হলেও হার্ট ফেলিওরের ঝুঁকি বাড়ে। এই ক্ষেত্রে লেফট সাইডেড হার্ট ফেলিওর হতে পারে। অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান ও মদ্যপানেও হার্টের পেশি কমজোরি হয়। স্লিপ অ্যাপনিয়া অর্থাৎ নাক ডাকার অসুখ থাকলেও এই সমস্যার ঝুঁকি থাকে। হৃৎপিন্ডের জন্মগত ত্রুটির কারণে হার্টের চারটি চেম্বারে রক্ত চলাচল বিঘ্নিত হলেও এই অসুখের ঝুঁকি বাড়ে। অ্যারিথমিয়া— অর্থাৎ হার্টের ছন্দ স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি হলেও হার্ট ফেলিওর হতে পারে। অ্যালার্জি, ফুসফুসে রক্তের ডেলা আটকে যাওয়া, থাইরয়েডের অসুখ, হেমোক্রোমাটোসিস ও অ্যামিলয়ডোসিস নামক অসুখের কারনেও হার্ট ফেলিওরের ঝুঁকি বাড়ে।

আরও পড়ুন : প্রচুর জল খান? তা হলে সাবধান

কী করে বুঝবেন

নিশ্বাসের কষ্ট এই অসুখের অন্যতম লক্ষণ।

হার্ট বিট বেড়ে যায়। পায়ের পাতা, গোড়ালি ও পা ফুলে যাওয়া হার্ট ফেলিওরের কারণে হতে পারে।

দিনভর ক্লান্ত লাগে, কোনও কাজ করতে ইচ্ছে করে না।

দ্রুত পায়ে হাঁটা-চলা ও এক্সারসাইজ করার ক্ষমতা ক্রমশ কমতে শুরু করে।

কাশি ও শ্বাসের সময় বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ হয়।

শরীরে জল জমে দ্রুত ওজন বাড়তে থাকে।

খিদে কমে যায় ও গা-বমি ভাব থাকে দিনভর।

এই ধরণের সমস্যা দেখা গেলে অবিলম্বে ডাক্তার দেখানো উচিত।

অতিরিক্ত নুনেই বাড়বে সমস্যা

আগেকার দিনে ঠাকুমা-দিদিমারা বলতেন, নুন খেলে নাকি গায়ের রক্ত জল হয়ে যায়। ভাষাটা একটু গোলমেলে হলেও কথাটা যথেষ্ট যুক্তি সঙ্গত। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নুনে থাকা সোডিয়াম হার্ট ফেলিওরের সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর করে তোলে। সোডিয়াম ক্লোরাইড অর্থাৎ নুন ছাড়া খাবার খাওয়া মুশকিল। কিন্তু নুনের বাড়তি সোডিয়াম হার্ট ফেলিওর বা হাই ব্লাডপ্রেশারের সমস্যাকে উত্তরোত্তর বেড়ে যায়। কেননা, নুনের সোডিয়াম রক্তবাহী ধমনিতে জলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলস্বরূপ আর্টারিতে বাড়তি চাপ পড়ে। ফলে এক দিকে ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়, অন্য দিকে হৃৎপিণ্ডের পেশি বাড়তি চাপের ফলে আরও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই অন্যান্য নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি নুন খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোশিয়েশন’-এর গাইড লাইন অনুযায়ী, যাঁদের প্রেশার ও হার্টের সমস্যা আছে তাঁরা দিনে ২.৩ গ্রামের বেশি নুন খাবেন না। নিত্য ডায়েটে থাকুক পর্যাপ্ত ফল ও সবজি। হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রেখে সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন।

heart failure নুন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy