Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Health

টনসিলাইটিস এবং ফ্যারেনজাইটিস নিয়ে সতর্কতা জরুরি

কারও ক্ষেত্রে সমস্যাগুলি ফিরে ফিরে আসে। তাই এই সমস্যার উৎস, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা জরুরি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২১ ০৫:৫৪
Share: Save:

গলার স্বর পরিবর্তন হলে বুঝতে হবে বেড়েছে ল্যারেনজাইটিসও। বিশ্রামে উপশম হয় ইএনটির এই সমস্যাগুলির

গলায় ব্যথা, জ্বর, খুশখুশে কাশি... টনসিলাইটিসের চেনা লক্ষণ। টনসিলাইটিস ও ফ্যারেনজাইটিস পরস্পর সম্পর্কিত। আবার কোনও কারণে গলা ভেঙে যাওয়া বা গলার স্বর পরিবর্তন ল্যারেনজাইটিসের প্রধান লক্ষণ। ইএনটির এই তিনটি সমস্যা নিয়ে প্রায়শই অনেককে ভুগতে হয়। কারও ক্ষেত্রে সমস্যাগুলি ফিরে ফিরে আসে। তাই এই তিনটি সমস্যার উৎস, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা জরুরি।

টনসিলাইটিস

মুখ হাঁ করে আয়নায় গলার যে অংশটি দেখা যায়, সেটিই হল ফ্যারিংক্স। টনসিল হল ফ্যারিংক্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। টাকরা, তালু, আলজিভ, গলার পিছন দিকের দেওয়াল...এই পুরো অংশটি ফ্যারিংক্স। ওই অংশেই একাধিক টনসিল গ্রন্থি থাকে। ফ্যারিংক্সের সংক্রমণ মানেই ফ্যারেনজাইটিস। ফ্যারেনজাইটিস আলাদা রোগ কি না, তা নিয়ে চিকিৎসকদের ভিন্ন মত রয়েছে।

ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. দীপঙ্কর দত্তের মতে, ‘‘ফ্যারেনজাইটিস এবং টনসিলাইটিস সাধারণত একসঙ্গে হয়। টনসিলাইটিস হয়েছে মানেই তার ফ্যারেনজাইটিসও হয়েছে। তবে টনসিলের সমস্যা না হয়েও, ফ্যারেনজাইটিস হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সমস্যা ক্রনিক।’’

কারণ: কনকনে ঠান্ডা কিছু খাওয়ার ফলে টনসিলাইটিস বাড়ে। যেমন, ফ্রিজ থেকে বার করা ঠান্ডা জল সরাসরি পান করলে বা আইসক্রিম খাওয়ার পরে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এসি ঘরে থেকেও টনসিলাইটিস হতে পারে। তবে পরিবেশগত ফ্যাক্টরের চেয়েও ঠান্ডা খাবার খাওয়া এ ক্ষেত্রে বেশি দায়ী।

লক্ষণ: কাশি, জ্বর (ক্ষেত্রবিশেষে তাপমাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়), গলায় প্রচণ্ড ব্যথা।

প্রকারভেদ

•গ্র্যানিউলার ফ্যারেনজাইটিস: অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, গলার পিছনের দেওয়ালের গ্র্যানিউলগুলি (গুটি গুটি লাল দানার মতো) বড় হয়ে গিয়েছে। একে বলা হয়, গ্র্যানিউলার ফ্যারেনজাইটিস।

•ফলিকিউলার টনসিলাইটিস: অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, টনসিলের মধ্যে সাদা সাদা ফলিকলগুলিতে পুঁজ জমে গিয়েছে। এটিকে বলা হয় ফলিকিউলার টনসিলাইটিস।

চিকিৎসা: বাড়াবাড়ি হলে ইএনটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণত টনসিলাইটিসের চিকিৎসা, বিশ্রাম নেওয়া। দিনে দু’বার গার্গল করতে দেওয়া হয়। জ্বর এবং গলা ব্যথার তীব্রতা বুঝে ওষুধ দেওয়া হয়।

ইএনটি বিশেষজ্ঞ অর্জুন দাশগুপ্তের মতে, ‘‘পাঁচ-ছয়, আট-বারো বছর বয়সিদের মধ্যে টনসিলাইটিস হওয়া স্বাভাবিক। এক বার হলে চিন্তার কোনও কারণ নেই। তবে বারবার হতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’’

তাঁর মতে, টনসিলাইটিসের ক্ষেত্রে খুব বাড়াবাড়ি না হলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ারও দরকার পড়ে না। রোগটি সারতে সময় লাগে, তবে সেরে যায়। ডা. দাশগুপ্তের মতে, ‘‘যাঁদের শিশুবয়সে টনসিল হয়েছে, তাঁদের একাংশের বড় বয়সে ফ্যারেনজাইটিস দেখা যায়।’’ কিন্তু সেটা টনসিলাইটিস না কি অন্য কারণে হচ্ছে, সেটা আগে দেখা প্রয়োজন।

অনেকের ক্রনিক নাক বন্ধ থাকে। তাঁরা মুখ দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করেন তখন। নাকের তিনটি কাজ— এক, শ্বাসবায়ু ফিল্টার করা, দুই, সেটিকে গরম করা এবং তিন সেটিকে একটু ভিজে রাখা। মুখ দিয়ে যাঁরা শ্বাস নেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই কাজগুলি হয় না। তাই নাকের কোনও সমস্যার জন্য এ রকম হচ্ছে কি না, সেটা আগে দেখা হয়। তা যদি না হয়, তখন সমস্যাটি ফ্যারেনজাইটিস-টনসিলাইটিসজনিত বুঝতে হবে।

ডা. দত্ত এবং ডা. দাশগুপ্ত একটি বিষয়ে সহমত। ফ্যারেনজাইটিসের আর একটি কারণ হচ্ছে, অ্যাসিড রিফ্লাক্স। পাকস্থলী থেকে অ্যাসিড রিফ্লাক্স হয়ে গলায় উঠে এসে গলার পিছনের দেওয়ালের ক্ষতি করে। এটিকে বলা হয় গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজ়অর্ডার (জিইআরডি)।

টনসিলের মধ্যে কিছু ক্রিপ্টস (গর্ত) থাকে, যার মধ্যে খাদ্যকণা ঢুকে গিয়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে টনসিলাইটিস হতে পারে। যাঁদের এই সমস্যা রয়েছে, তাঁদের খাওয়ার পরে গার্গল করার পরামর্শ দেওয়া হয়। সারা বছরই যেন তাঁরা এটা পথ্যের মতো মেনে চলেন।

পেরি-টনসিলাইটিস: টনসিলাইটিস যদি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যায়, তখন আলজিভ, টাকরা-সহ পুরো অঞ্চলটি লাল হয়ে গিয়ে পুঁজ জমে যায়। ক্ষেত্রবিশেষে অস্ত্রোপচার করে সেই পুঁজ বার করতে হয়।

ল্যারেনজাইটিস

গলা ব্যথা, কাশির সঙ্গে যদি গলার স্বর পরিবর্তিত হয়, তবে বুঝতে হবে স্বরযন্ত্র বা ভোকাল কর্ডে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এটিই মূলত ল্যারেনজাইটিস।

ক্রনিক ল্যারেনজাইটিসের ক্ষেত্রেও অ্যাসিড রিফ্লাক্স ডিজ়অর্ডার একটি কারণ। এ ক্ষেত্রে এটিকে বলা হয়, ল্যারিঙ্গো ফ্যারিনজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজ়অর্ডার। সে ক্ষেত্রে রোগীর সারা বছর কণ্ঠস্বর একটু কর্কশ থাকবে।

কারণ: যাঁরা বেশি ধূমপান করেন, খুব দূষিত অঞ্চলে কাজ করেন, ক্লোরিন নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের ল্যারেনজাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঠান্ডা থেকে শুধু নয়, চেঁচামেচি করলে গলা বসে যায়। চিকিৎসক, সাংবাদিক, সেলসের কাজ যাঁরা করেন অর্থাৎ বেশি কথা বলতে হয়, তাঁদের এটি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। সংক্রমণের জন্য রোগ না-ও হতে পারে। পেশির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলেও গলার স্বর বসে যেতে পারে। তবে সংক্রমণজনিত কারণে হলে পরামর্শ নিতে হবে।

চিকিৎসা: টনসিলাইটিসের সম্পূর্ণ বিপরীত চিকিৎসা এ ক্ষেত্রে করা হয়। অর্থাৎ গলা বসে গেলে গার্গল একেবারেই করা যাবে না। স্টিম বা ভেপার নিতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই ভেপার অব্যর্থ ওষুধের মতো কাজ করে। তবে বাড়াবাড়ি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক এবং স্টেরয়েড পর্যন্ত দেওয়া হয়।

এ ধরনের সমস্যা থাকলে সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। গলাকে বিশ্রাম দেওয়া, চেঁচিয়ে কথা না বলা সমস্যার হাত থেকে বাঁচাতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE