বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে থাকে ত্বকের ধরনও। ধীরে ধীরে দেখা দেয় বলিরেখা, শিথিল হয় মুখের মাংসপেশিও। কুঁচকে যায় ত্বক। বয়সোচিত এই বদলের নেপথ্যে থাকে কোলাজেন।
এটি এমন একটি প্রোটিন, যা ত্বক টানটান, সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। তবে বয়স বাড়লে কমতে থাকে কোলাজেনের উৎপাদন। তা ছাড়া সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগনি রশ্মির প্রভাব, ধোঁয়া-দূষণ-সহ নানা কারণে অনেকের অপেক্ষাকৃত কম বয়স থেকেই কোলাজেনের মাত্রা কমতে শুরু করে। তারই প্রভাব পড়ে মুখে।
ত্বক ভাল রাখতে বাজারচলতি নানা রকম ক্রিম, ময়েশ্চারাইজ়ার রয়েছে। কোলাজেনের মাত্রা বৃদ্ধিতেও প্রসাধনী কিছু কম নেই। তবে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারেও ত্বকের যত্ন নেওয়া যায়। সুবিধা হল, এতে ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে না। তাই কোলাজেনের মাত্রা কমার আগেই যদি সতর্ক হতে চান, মুখে মাখুন বিশেষ ধরনের মাস্ক। বানিয়ে নিন নিজেই।
ডিম-ভিটামিন ই, অলিভ অয়েল: প্রোটিনের অন্যতম উৎসই হল ডিম। এতে মেলে জরুরি অ্যামাইনো অ্যাসিড। ডিমের কুসুম এবং সাদা, দুই অংশেই প্রোটিন থাকে। মুখের জন্য ব্যবহার করতে পারেন ডিমের সাদা অংশটুকু। একটি পাত্রে ডিমের সাদা অংশ নিয়ে তার সঙ্গে আধ চা-চামচ অলিভ অয়েল এবং একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ভিতরে থাকা তরল মিশিয়ে নিন।
মুখ ফেসওয়াশ দিয়ে ধোয়ার পরে মিশ্রণটি ব্যবহার করুন। হাত বা ব্রাশের সাহায্যে এটি মুখে লাগিয়ে মিনিট ২ মাসাজ করে রেখে দিন। ১০-১৫ মিনিট পরে মুখে ঈষদুষ্ণ জলের ঝাপটা দিয়ে ধুয়ে নিন। শীতের দিনে ব্যবহার করলে অলিভ অয়েল এবং ভিটামিন ই ত্বকে আর্দ্রতা জোগাবে। মাসে অন্তত তিন দিন ব্যবহার করলেই ত্বক টানটান হয়ে উঠবে।
টক দই, মধু এবং তেল: টক দই এবং মধুর ব্যবহার রূপচর্চার জগতে নতুন নয়। ত্বক নরম এবং সুন্দর রাখতে মাস্কটি কার্যকর। এটি চিকিৎসা পদ্ধতি না হলেও ঘরোয়া টোটকা হিসাবে উপযোগী। একটি পাত্রে ১ টেবিল চামচ টক দইয়ের সঙ্গে আধ চা-চামচ অলিভ অয়েল বা আমন্ড অয়েল কিংবা নারকেল তেল মিশিয়ে নিন। কয়েক ফোঁটা মধু যোগ করে মাস্ক বানান। ভাল করে ফেটিয়ে নিলে মিশ্রণটি ক্রিমের মতোই হবে। ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে মুছে নিন। তার পর ক্রিমের মতো মাস্কটি মুখে মিনিট পাঁচেক মাসাজ করে ১০ মিনিট রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন।
অ্যাভোকাডো এবং অলিভ অয়েল মাস্ক: অ্যাভোকাডোর মতো ফল পুষ্টিগুণের জন্যই বিভিন্ন দেশে তার জায়গা করে নিচ্ছে। দামি হলেও প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন-খনিজের জন্য অনেকেই এটি খান। এর শাঁস মাখনের মতোই। অ্যাভোকাডোর এক চামচ শাঁস নিয়ে তার সঙ্গে ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে ক্রিমের মতো বানিয়ে নিন। ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়ার পরে মিশ্রণটি মাসাজ করুন। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন। বিশেষত শীতের দিনে রুক্ষ ত্বকের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর মাস্ক।
কখন চিকিৎসক বা পেশাদার রূপচর্চা শিল্পীর কাছে যাবেন?
ঘরোয়া মাস্ক ত্বক নরম রাখে। বলিরেখা হালকা করে। তবে ইতিমধ্যেই যাঁদের বলিরেখা খুব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই টোটকা সমস্যার পুরোপুরি সমাধান করতে পারবে না। তা ছাড়া, ত্বক অতিরিক্ত রুক্ষ হলে, হরমোনের ভারসাম্য জনিত সমস্যা থাকলেও চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বলিরেখা কমাতে ইদানীং নানা রকম চিকিৎসা-পদ্ধতির প্রয়োগ হচ্ছে।
মনে রাখা দরকার
কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ত্বক টানটান রাখতে শুধু মাস্ক যথেষ্ট নয়। নিয়ম করে ক্লিনজ়িং, টোনিং এবং ময়েশ্চারাইজ়িং জরুরি। নজর দিতে হবে পর্যাপ্ত জল খাওয়ায়। স্বাস্থ্যকর খাবার ঠিক মতো খেলেও ত্বকে তার প্রভাব পড়বে।