চিকিৎসক থেকে রূপচর্চা শিল্পীরা বার বার সানস্ক্রিন মাখার উপর জোর দেন। তবে সানস্ক্রিন নিয়ে অভিযোগ থাকে অনেকেরই। কেউ বলেন, সেটি মাখলেই মুখ কালো হয়ে যায়। কারও সমস্যা ত্বক তেলতেলে হয়ে যাচ্ছে, ঘামও বেশি হচ্ছে। বিশেষত তৈলাক্ত ত্বকের ধরন যাদের তাঁদের অনেকেরই মুখে ঘাম, তেল জমে ব্রণও হতে থাকে। তবে কি তাঁরা সানস্ক্রিন মাখবেন না? গলদ কি সানস্ক্রিন বাছাইয়ে না কি ভুল উপকরণের ব্যবহারে।
তৈলাক্ত ত্বকে ক্ষতিকর কোন উপাদান?
শুষ্ক, সাধারণ, তৈলাক্ত— ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন বেছে নেওয়া খুব জরুরি। শুষ্ক ত্বকের জন্য যা উপযোগী, তা তৈলাক্ত ত্বকের জন্য নয়। বরং অতিরিক্ত ঘাম, তেলতেলে হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিলে, বেশ কয়েকটি উপাদানের ব্যবহার এড়িয়ে চলাই ভাল।
অক্সিবেনজ়ান এবং অকটিনঅক্সেট: তৈলাক্ত, ব্রণযুক্ত ত্বকে এই রাসায়নিকগুলি ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। স্পর্শকাতর ত্বকেও এই দুই উপাদানের প্রভাবে জ্বালা, র্যাশের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অ্যালকোহল: প্রসাধনীতে অ্যালকোহল রয়েছে কি না দেখে নিন। অ্যালকোহল ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সুগন্ধ এবং এসেনশিয়াল অয়েল: সানস্ক্রিনে অনেক সময় এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার হয়। ব্রণযুক্ত বা তৈলাক্ত ত্বকের জন্য যে কোনও এসেনশিয়াল অয়েল কিন্তু উপযোগী নয়। ফলে তেলবিহীন সানস্ক্রিন বাছাই করাই ভাল। তা ছাড়া সুগন্ধের জন্য অনেক সময় রাসায়নিক ব্যবহার করা যায়, যা ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।
তেল: ইদানীং সানস্ক্রিন নারকেল তেল-সহ বিভিন্ন ধরনের তেল ব্যবহারও হচ্ছে। তৈলাক্ত ত্বকে ব্যবহার করতে হলে তেল রয়েছে এ রকম সানস্ক্রিন এড়িয়ে চলাই ভাল। গরমের দিনে আর্দ্রতা বেশি থাকলে এমনিতেই ঘাম বেশি হয়। মুখে ধুলো-ময়লা জমতে থাকে। এই ধরনের সানস্ক্রিন ব্যবহারে ত্বকের উন্মুক্ত রন্ধ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যার ফলে ফুস্কুড়ি, ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বেছে নেবেন কোনটি?
জেল: বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে, ঘাম বেশি হলে, ত্বক চটজলদি তেলতেলে হওয়ার মতো সমস্যা থাকলে বেছে নিন জেল জাতীয় সানস্ক্রিন। এতে তেলের ভাগ কম থাকে। ব্রণের সমস্যাতেও মাখা চলে।
ম্যাট: ম্যাট সানস্ক্রিনও তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভাল। এই ধরনের সানস্ক্রিনে মুখ অতিরিক্ত তেলতেলে হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। পাশাপাশি সিলিকা, নিয়াসিনামাইডের মতো উপাদান ত্বকের জন্য ভাল।
জল: ওয়াটার বেস্ড সানস্ক্রিন ত্বক সহজে শুষে নেয়। একেবারেই তেলতেলে ভাব থাকে না অথচ জেল্লা রয়ে যায়। ত্বকের প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা জোগাতেও সক্ষম এটি। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এই ধরনের সানস্ক্রিন উপযোগী।
পাউডার: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য পাউডার সানস্ক্রিনও ভাল। পাউডার ঘাম শুষে নিতে সাহায্য করে, ফলে ত্বক কালচে বা তেলতেলে হওয়ার সমস্যা থাকে না।
আর কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া দরকার?
১. মুখ থেকে ঘাম মুছলে সানস্ক্রিনও উঠে যায়। ঘামের সঙ্গে গলে যায়। জল নিরোধী বা ওয়াটার রেজ়িস্ট্যান্ট সানস্ক্রিন তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপযোগী। এতে ঘামের সঙ্গে প্রসাধনী গলে উঠে আসবে না। রোদে সুইমিং পুলে স্নান করলে বা সমুদ্রস্নান করলেও সানস্ক্রিনের বর্ম জলে ধুয়ে যায়। এই ধরনের সানস্ক্রিন জলেও কাজ করবে।
২. তেলযুক্ত, ক্রিমজাতীয় সানস্ক্রিনের বদলে বেছে নিন জ়িঙ্ক অক্সাইড, টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড, নিয়াসিনামাইডের মতো উপাদান রয়েছে এমন কিছু।। ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে এই ধরনের উপাদানযুক্ত সানস্ক্রিন।
৩. সানস্ক্রিনের জরুরি বিষয় হল এসপিএফ বা ‘সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর’। নির্দিষ্ট সানস্ক্রিনটি কত ক্ষণ ত্বককে সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করবে, তা-ই বোঝানো হয় এসপিএফের মাধ্যমে। প্রতি দিন ব্যবহারের জন্য এসপিএফ ৩০-৫০ যথেষ্ট।
কতটা মাখবেন?
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ ডার্মাটোলজি অ্যাসোসিয়েশনের মত অনুযায়ী রোদে বেরোনোর ১৫ মিনিট আগে ৩০ গ্রাম সানস্ক্রিন মাখা দরকার। বেশি ঘাম হলে বা বার বার মুখ মুছলে দু’-তিন ঘণ্টা অন্তর তা আবার মাখতে হবে।