কপালের উপর লুটিয়ে পড়া চুলের গোছায় নুন-মরিচের ছোঁয়া! কানের দু’পাশের চুলের রঙেও মরিচ কম, নুনই বেশি। বয়স ৪০ পেরোয়নি। তবে এ কালে চুল দেখে কত জনেরই বা বয়স বোঝা যায়! রঙের পরত লাগিয়ে ষাট বর্ষীয়কেও যুবক লাগে, রং না করা চুলের ৩৫ বছরের যুবককে দেখায় প্রৌঢ়! অকালে পেকে যাওয়া চুল ঢাকতে রাসায়নিক মেশানো রঙের প্রলেপ দিতে অনেকেরই মনে ভয় থাকে। কিন্তু পেকে যাওয়া চুলের হারানো রং ফেরানোর প্রাকৃতিক উপায় আছে কি?
ইদানীং সমাজমাধ্যমে মাঝে সাঝেই ‘গ্রে হেয়ার রিভার্স’ হ্যাশট্যাগে পাকা চুলে কাঁচা রং ফেরানোর নানা উপায় বাতলে দেওয়া হচ্ছে। ত্বক এবং চুলের চিকিৎসকেরা যদিও তা মানতে নারাজ। তাঁরা মনে করেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চুল এক বার পেকে যাওয়ার পরে তার রং আবার পূর্বাবস্থায় ফেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়।

ছবি: শাটারস্টক।
কেন পেকে যাওয়া চুলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগের রং ফেরে না?
সাধারণত চুলে পাক ধরে মেলানোসাইট কোষ নষ্ট হওয়ার কারণে। মেলানোসাইট কোষে তৈরি হওয়া মেলানিনই চুলের গাঢ় রঙের কারণ। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অথবা জিনগত কারণে মেলানোসাইট কোষে মেলানিনের উৎপাদন কমে গেলে চুল পেকে যায়। সচরাচর মেলানোসাইট কোষ এক বার নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে তাদের প্রাকৃতিক ভাবে আবার উজ্জীবিত করা যায় না।
তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হতে পারে। এমনকি, চুল পাকতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে যদি সতর্ক হওয়া যায়, তবে চুল পেকে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে কিছুটা মন্থর করে দেওয়া সম্ভব।
ব্যাতিক্রম কোন ক্ষেত্রে? প্রাকৃতিক ভাবে পেকে যাওয়া চুল সাদা হতে পারে?
অনেক সময় মানসিক চাপের কারণেও চুল পাকতে পারে। চুল পাকতে পারে শরীরে পুষ্টির অভাব হলেও। অথবা কোনও কোনও অসুস্থতা থেকেও হঠাৎ চুল পেকে যেতে পারে। সে সব ক্ষেত্রে চুল পাকার যে কারণ, তার সমাধান হয়ে গেলে চুলে আবার পুরনো রং ফিরলেও ফিরতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগে কারণটি খুঁজে তার সমাধান করতে হবে। ২০২১ সালে ‘ইলাইফ’ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, একটি সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল, যাঁরা মানসিক চাপের সমস্যায় নিয়মিত ভোগেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সেই চাপ দূর করার পরে অনেকের চুলে আগের রং ফিরে এসেছে।

ছবি: সংগৃহীত।
চুল পাকতে শুরু করলে কী ভাবে সতর্ক হবেন?
১। প্রথমেই খেয়াল করতে হবে, কোনও অসুস্থতা বা মানসিক চাপের জন্য এমনটা হচ্ছে কি না। সেক্ষেত্রে সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
২। খাবারে যাতে ভিটামিন এ, সি, ই এবং কপারের মতো খনিজ থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে চুল দ্রুত পাকবে না।
৩। চুলে যে সমস্ত প্রসাধনী ব্যবহার করেন, তাতে ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকছে কি না, তা দেখতে হবে। থাকলে রাসায়নিকমুক্ত শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার বা তেল অথবা হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।