মাতৃদত্ত বা পিতৃদত্ত। ত্বক, চুলের স্বাস্থ্যের মূলে দায়ী সেই জিনই। রুক্মিণী মৈত্র তাঁর সৌন্দর্যের জন্য নিজেকে কৃতিত্ব দেওয়ার পক্ষপাতী নন। তাই পর্দার ‘বিনোদিনী’র সৌন্দর্যের রহস্য, গোপন টোটকা জিজ্ঞাসা করলে প্রথমেই তিনি তাঁর ঐতিহ্যকেই প্রাধান্য দেবেন। সাফ কথা, বাঙালির ঘরে জন্ম নিয়ে সৌভাগ্যবান মনে করেন নিজেকে। রুক্মিণীর মতে, ভাতে-মাছে বড় হয়ে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি নিয়ে ভাবতে হয়নি কাউকে, তাই টোটকা, পদ্ধতি ইত্যাদিতে খুব বেশি ভরসা নেই নায়িকার।
তবে পেশার কারণে রোজ যে ত্বকে ও চুলে অত্যাচার চলে, তার থেকে রক্ষা পেতে খানিক যত্ন করাও উচিত— অস্বীকার করেন না রুক্মিণী। তাই আর পাঁচজন অভিনেতা-অভিনেত্রীর মতো তিনিও নিজের যত্ন নিয়ে অল্পস্বল্প ভাবেন বইকি! কিন্তু সেখানেও মা, ঠাকুরমা, দিদিমার বাধ্য মেয়ে রুক্মিণী। ঢালাও রাসায়নিক ব্যবহারের পরিবর্তে ঘরোয়া পদ্ধতি, ঘরোয়া উপকরণে ভরসা তাঁর।
রোজের রুটিনে ত্বকচর্চা বা রূপচর্চার সময় মেলে না রুক্মিণীর। নিজস্ব চিত্র।
আমন্ড অয়েল ও নারকেল তেলই রুক্মিণীর রূপচর্চার প্রধান দুই উপকরণ। মাথার তালু থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সৌন্দর্যের দায়িত্ব রয়েছে এই দুই ঘরোয়া উপাদানের কাঁধে। শুটিংয়ের চাপে মাঝেমধ্যেই রূপচর্চা খানিক পিছনের সারিতে চলে যায়। কিন্তু যে দিন সম্ভব হয়, এই দুই তেল হালকা গরম করে নিয়ে মাথায় মাসাজ করে নেন নায়িকা। রক্ত সঞ্চালনের জন্য খুব ভাল কাজ করে।
তবে মুখের জন্য বাড়িতে পাতা দইও খুব ভরসাযোগ্য। তাই রোদে শুটিং করে বাড়ি ফিরে ট্যান দূর করতে হলে মায়ের কথা মেনে দই মেখে নেন মুখে। রুক্মিণী বলছেন, ‘‘আমার ত্বক এতই শুষ্ক যে, কোনও রকম ভারী রাসায়নিকের সংস্পর্শে এলেই সমস্যা দেখা দেয়। তাই যথাসম্ভব ঘরের জিনিসপত্র দিয়েই ত্বকচর্চা চলে। তাই মাঝে মাঝে দইয়ের সঙ্গে একটু মধু মিশিয়ে মুখে মাখি। তাতে ত্বকটা হাইড্রেটেড হয়, পাশাপাশি তৎক্ষণাৎ উজ্জ্বল হয়ে যায় ত্বক। দু’টো কাজের জন্যই দই খুব ভাল।’’
রুক্মিণীর রূপের একটি বড় অংশ, তাঁর হাত ও পায়ের নখ। বড় সুন্দর, যত্নে রাখা। তাতে কৃত্রিমতার ছাপ নেই, বরং নিজের যত্নের ছোঁয়াই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পেশার কারণে ম্যানিকিয়োর বা পেডিকিয়োর করা খানিক বাধ্যতামূলক। হ্যান্ড ক্রিমও মাখতে পছন্দ করেন তিনি। তা সত্ত্বেও নায়িকার নখের সৌন্দর্য লুকিয়ে রয়েছে সেই ঘরোয়া টোটকায়। দিনের শেষে বাড়ি ফিরে গরম জলে নুন ঢেলে তাতে হাত ও পা ডুবিয়ে রেখে দেন। এই মিশ্রণেও কিন্তু নারকেল তেল থাকা চাই-ই চাই। মন শান্ত করার জন্য এসেনশিয়াল অয়েলও যোগ করেন মাঝেমধ্যে। এসেনশিয়াল অয়েলের এই প্রথা তাঁর মায়ের থেকে পাওয়া। বাড়িতে সন্ধ্যায় ধুনো দেওয়ার পর ডিফিউজ়ারে এসেনশিয়াল অয়েল ঢেলে রাখার নিয়ম রয়েছে মৈত্র পরিবারে।
আরও পড়ুন:
মায়ের পাশাপাশি দিদিমার ঐতিহ্যকেও প্রাধান্য দেন রুক্মিণী। ভ্রু এবং নাভিতে ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে মাসাজ করার অভ্যাস রয়েছে তাঁর। রুক্মিণীর কথায়, ‘‘আমার দিদার বিশ্বাস, নাভির সঙ্গে আমাদের শরীরের অনেক স্নায়ু জড়িত। তাই রাতে ঘুমোনোর আগে মুখ-হাত-পা ধুয়ে ক্যাস্টর অয়েল বা অলিভ অয়েল নাভিতে মালিশ করে নিই। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে।’’
রোজের রুটিনে ত্বকচর্চা বা রূপচর্চার সময় মেলে না রুক্মিণীর। কিন্তু যে দিন নিজের জন্য সময় পান, তার মধ্যে খানিকটা নিজের যত্নের জন্য বরাদ্দ রাখেন। তবে রুক্মিণীর রূপের মূল রহস্য লুকিয়ে একটি মন্ত্রে, ‘যত কম, তত ভাল’।