ছোট্ট একটি স্টিক। রোলার ঘুরিয়ে দিলেই সেটি বেরিয়ে আসে। পকেট বা ভ্যানিটি ব্যাগে চট করে ভরে ফেলা যায়। বাইরে থাকলেও দ্রুত মুখে, হাতে বুলিয়ে নেওয়া যায়। সূর্যের অতিবেগনি রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচাতে ব্যবহার হচ্ছে এমনই জিনিস। ক্রিম বা লোশন নয়, এটি হল সানস্ক্রিন স্টিক। অনলাইনে প্রসাধনীর বাজারে চোখ বোলালে মিলবে নানা ব্যান্ডের বিভিন্ন উপকরণের স্টিক। চর্চা এখন তা নিয়েই।
ত্বকের যত্নে প্রতি দিন যেমন মুখ পরিষ্কার করা, ময়েশ্চারাইজ়ার মাখা জরুরি, ঠিক তেমনই দরকার সানস্ক্রিন মাখা, বলেন রূপচর্চা শিল্পীরা। ত্বকের চিকিৎসক অভীক শীল আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, ‘‘নিয়মিত দাঁত মাজার মতোই জরুরি সানস্ক্রিনের ব্যবহার।’’ সে কারণে গত কয়েক বছর ধরে ক্রমশই সানস্ক্রিন নিয়ে ভাবনাচিন্তা বেড়েছে। যাঁরা আগে মুখে পাউডার বুলিয়ে দিব্যি বেরিয়ে পড়তেন, তাঁদের অনেকেই এখন বাইরে বেরোনোর আগে সানস্ক্রিন মাখেন।
সানস্ক্রিন স্টিক ব্যবহার করা খুব সহজ। ছবি:সংগৃহীত।
ক্রিম, জেল, লোশন ছিলই। ব্যবহারের সুবিধার জন্য হুইপ্ড সানস্ক্রিন, সানস্ক্রিন স্প্রে, সানস্ক্রিন পিল-সহ অনেক কিছুই বাজারে এসেছে। তারই মধ্যে আরও একটি সংযোজন সানস্ক্রিন স্টিক।
অনেকে মনে করেন, সানস্ক্রিন ত্বককে কালো হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। ত্বকের চিকিৎসকরা বলছেন, সানস্ক্রিনের কাজ শুধু এটুকুই নয়। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগনি রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই তা তৈরি। সূর্যের তাপে ত্বকে অকালবার্ধক্য দেখা দিতে পারে। ত্বক রুক্ষ হয়ে যেতে পারে, বলিরেখা পড়তে পারে। সানস্ক্রিন এই সব কিছু থেকে বাঁচার জন্য ব্যবহার করা জরুরি।
কিন্তু সানস্ক্রিন স্টিক ব্যবহারের সুবিধাই বা কী?
· ক্রিম, লোশন, জেল থাকা সত্ত্বেও সানস্ক্রিন স্টিকের প্রয়োজন কেন হল, এ প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক। এর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণই হল জিনিসটি ছোট্ট, খুব সহজে ব্যবহার করা যায়। হালকা, ব্যাগেও ভরে নেওয়া যায়।
· বাড়ির বাইরে থাকুন বা ভিতরে, আঙুলের সাহায্য ছাড়াই ডিয়োডোর্যান্টের মতোই মুখ থেকে হাত-পায়ে লাগিয়ে নেওয়া যায়। অপরিচ্ছন্ন হাতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ত্বকে সংক্রমণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সেই ভয় নেই।
আরও পড়ুন:
· ত্বকের চিকিৎসকেরা বলেন, রোদে থাকলে ২-৩ ঘণ্টা অন্তর সানস্ক্রিন মাখা প্রয়োজন। সেই সমস্যার সমাধান স্টিক। ঘেমে গেলেও মাখতে অসুবিধা হয় না। মেকআপ করা মুখেও এটি ব্যবহার করা চলে।
· বিভিন্ন মানের সানস্ক্রিন স্টিক রয়েছে। দামও আয়ত্তের মধ্যেই।
সানস্ক্রিন ক্রিম বা জেলের বিকল্প কি হতে পারে স্টিক?
এত দিন ধরে ব্যবহার করে আসা সানস্ক্রিন ক্রিম বা জেলের বিকল্প কি হতে পারে স্টিক? কতটা সুরক্ষা দিতে পারে এটি? কলকাতার একটি হাসপাতালের ত্বকের চিকিৎসক আশারানি ভোল বলছেন, ‘‘সানস্ক্রিন ব্যবহারের আগে ত্বকের ধরন, সমস্যা জানা জরুরি। আমরা রোগীর চাহিদা বুঝে নির্দিষ্ট ফর্মুলার সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে বলি। কারও ত্বক শুষ্ক, কারও তৈলাক্ত, কারও সমস্যা বলিরেখার। কেউ কত ক্ষণ রোদে থাকছেন, নিয়মিত রোদে বেরোন কি না, কম্পিউটারের সামনে কত ক্ষণ কাজ করেন, এমন অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে কোন সানস্ক্রিন কার জন্য উপযোগী। এমন ফর্মুলা বা উপকরণ কি আদৌ সানস্ক্রিন স্টিকে রয়েছে? যত ক্ষণ না তা নিয়ে বিস্তারিত পরীক্ষানিরীক্ষা হচ্ছে, বলা সম্ভব নয় সেটি কতটা কার্যকর। তবে হ্যাঁ, বাইরে ব্যবহারের জন্য এটি সুবিধাজনক। কিছুটা সুরক্ষা নিশ্চয়ই দিতে পারে।’’
সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর এবং পিএ
সানস্ক্রিনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এসপিএফ, অর্থাৎ ‘সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর’। নির্দিষ্ট সানস্ক্রিনটি ত্বককে সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির হাত থেকে কতটা রক্ষা করবে, তা-ই বোঝানো হয় এসপিএফ-এর মাধ্যমে। এ ছাড়াও ইউভিএ রশ্মির হাত থেকে ত্বককে রক্ষার জন্য থাকে পিএপ্লাস। প্লাসের সংখ্যা যত বেশি, তার অর্থ সেই সানস্ক্রিন ইউভিএ রশ্মির হাত থেকে তত ভাল সুরক্ষা দেবে। চর্মরোগ চিকিৎসক অভীক শীল বলছেন, ‘‘সানস্ক্রিন স্টিক কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করে তার উপাদান এবং ফর্মুলেশনের উপর। চিকিৎসকের নির্দেশিত সানস্ক্রিনে যে সব উপাদান রয়েছে, সেগুলি যদি স্টিকেও পাওয়া যায়, তা হলে কোনও অসুবিধা নেই।’’
বাজারে প্রতি দিন নানা রকম সানস্ক্রিন স্টিক আসছে। কোনও সংস্থার দাবি, সেই স্টিকে থাকছে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, সেরামাইড, ভিটামিন সি-এর মতো ত্বক-বান্ধব উপাদান। বিজ্ঞাপন করা হচ্ছে, এক দিকে ত্বকের যেমন সুরক্ষা দেবে সানস্ক্রিন, তেমনই ত্বকের যত্নও নেবে। এ কথা কতটা ঠিক? চিকিৎসক আশারানি বলছেন, ‘‘এতে কোনও কাজ হয় কি না সন্দেহ। কারণ, কোন উপাদান, কী ভাবে কতটা মেশানো হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। তা ছাড়া এই অ্যাসিডগুলি প্রয়োগেরও নিয়ম আছে। রোদের জন্য সব কিছু উপযুক্তও নয়।’’ অভীকও বলছেন, ‘‘হয়তো কিছুটা কাজে লাগতে পারে। তবে কতটা কার্যকর হচ্ছে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।’’ একই সঙ্গে তিনি মনে করাচ্ছেন, সানস্ক্রিনের কার্যকারিতা নির্ভর করে পরিমাণ এবং ব্যবহারবিধির উপরেও। তিনি জানাচ্ছেন, দুই আঙুলে মাজনের মতো করে সানস্ক্রিন নিয়ে মুখে, গলায়, ঘাড়ে মাখতে হবে। এমনকি, বাড়ি থেকে না বেরোলেও সানস্ক্রিন ব্যবহার জরুরি। রোদে গেলে ৩-৪ ঘণ্টা অন্তর তা মাখতে হবে।