Advertisement
E-Paper

গুলমার্গে ফ্যাশন শো নিয়ে হঠাৎ বিতর্ক কেন? কী নিয়ে আপত্তি কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমরের

গত শুক্রবার, অর্থাৎ ৭ মার্চ গুলমার্গে ওই ফ্যাশন শোয়ের আয়োজন করেছিলেন দুই ভারতীয় পোশাকশিল্পী শিভন এবং নরেশ।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৫ ১৫:০১
বাঁ দিকে, ওমর আবদুল্লাহ। ডান দিকে, বিতর্কিত ফ্যাশন শোয়ের এক মডেল।

বাঁ দিকে, ওমর আবদুল্লাহ। ডান দিকে, বিতর্কিত ফ্যাশন শোয়ের এক মডেল। ছবি: সংগৃহীত।

একটি ফ্যাশন শো ঘিরে হইচই পড়ে গিয়েছে কাশ্মীরে। গত ৭ মার্চ গুলমার্গে ওই ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার দু’দিন পরে সোমবার ওই ফ্যাশন শো নিয়ে উত্তাল হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা। শুধু তা-ই নয় কাশ্মীরের ধর্মগুরু থেকে জম্মুও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা— সকলেই ওই ফ্যাশন শো নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। বিরোধীদের চাপের মুখে মুখ্যমন্ত্রীকে বিধানসভায় এ-ও জানাতে হয়েছে যে, ওই ফ্যাশন শোয়ের আয়োজনের সঙ্গে তাঁর প্রশাসন কোনও ভাবেই যুক্ত ছিল না। কিন্তু একটি ফ্যাশন শো নিয়ে এত বিতর্কের কারণ কী?

কারণ ব্যাখ্যা করে জম্মু ও কাশ্মীরের ধর্মগুরু মিরওয়েজ় উমর ফারুক বলেছেন, ‘‘ওই ফ্যাশন শো শুধু অশালীনই নয়, কুরুচিকরএবং অত্যন্ত আপত্তিকর’’। মুখ্যমন্ত্রী ওমরও একই সুরে বলেছেন, ‘‘কাশ্মীরের মানুষ যে রেগে গিয়েছেন, তা তো স্বাভাবিক। স্থানীয় সংস্কৃতি এবং বাসিন্দাদের ভাবাবেগের কোনওরকম পরোয়া না করেই ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তা-ও আবার পবিত্র রমজান মাসে!’’ একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ওমর জানতে চেয়েছেন, কেন এবং কারা ওই ফ্যাশন শোয়ের আয়োজন করেছিলেন? তার অনুমতিই বা কে দিয়েছিল?

কাশ্মীরের ধর্মগুরুর পোস্টের সমর্থনে পাল্টা পোস্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাও।

কাশ্মীরের ধর্মগুরুর পোস্টের সমর্থনে পাল্টা পোস্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাও। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেল।

বিতর্কিত ফ্যাশন শোয়ের হোতা দুই ভারতীয় পোশাকশিল্পী শিভন এবং নরেশ। দীর্ঘ দিন ধরে একসঙ্গে কাজ করছেন ওই পোশাকশিল্পীদ্বয়। এবছর ভারতীয় ফ্যাশন দুনিয়ায় তাঁরা ১৫ বছর পূর্ণ করলেন। সেই উপলক্ষে পোশাকের নতুন সম্ভার প্রকাশ্যে এনেছিলেন তাঁরা। নতুন পোশাকের সম্ভার দেখানোর জন্য আয়োজন করেছিলেন ফ্যাশন শো। গত শুক্রবার, অর্থাৎ ৭ মার্চ গুলমার্গে তাঁদের সেই ফ্যাশন শো নিয়েই উঠেছে আপত্তি।

শিবন-নরেনের পোশাকের নতুন সম্ভারের মূল ভাবনা ছিল স্কি ওয়্যার অর্থাৎ তুষারাবৃত স্কি করার জায়গায় বেড়ানোর পোশাক। যেহেতু শীতে গুলমার্গে অনেকেই স্কি করতে আসেন, তাই পোশাক প্রদর্শনের জন্য কাশ্মীরের গুলমার্গকেই বেছে নিয়েছিলেন পোশাকশিল্পীদ্বয়। শহুরে ঝকঝকে বিলাসবহুল হোটে-রিসর্টের বদলে তুষারে মোড়া গুলমার্গের রাস্তাতে তৈরি হয়েছিল র‌্যাম্প বা মার্জার সরণী। সেখানেই ‘স্কি ওয়্যার’-এর নামে পুরুষ মডেলকে শুধুই একটি অন্তর্বাস পরে গায়ে মোটা কম্বল জড়িয়ে র‌্যাম্পে হাঁটতে দেখে চমকে যান রক্ষণশীল বলে পরিচিত কাশ্মীরিরা। পরে মহিলা মডেলদেরও দেখা যায় বিকিনি পরে গুলমার্গের বরফের উপর দিয়ে হেঁটে আসতে। সেই সব দৃশ্য সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই ‘গেল গেল’ রব ওঠে কাশ্মীরে।

শিবন এবং নরেনের ফ্যাশন শোয়ের মডেলদের ‘অর্ধনগ্ন’ বলেও কটাক্ষ করা হয়েছে।

শিবন এবং নরেনের ফ্যাশন শোয়ের মডেলদের ‘অর্ধনগ্ন’ বলেও কটাক্ষ করা হয়েছে। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেল।

মুম্বই বা দিল্লিতে তো বটেই ভারতের অন্য যে কোনও শহরে যে সমস্ত ফ্যাশন শোয়ের আয়োজন হয়, তাতে এ ধরনের খোলামেলা পোশাক পরা হয় না, তা নয়। সেই সব দৃশ্য নিয়ে কখনও হইচই হয় না। তবে গুলমার্গের ফ্যাশন শো নিয়ে বিতর্ক কেন হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন কাশ্মীরের অন্যতম প্রধান ধর্মগুরু তথা হুরিয়ত কনফারেন্সের প্রধান মিরওয়েজ়।

সমাজমাধ্যমে মিরওয়েজ় লিখেছেন, ‘‘যে উপত্যকা তার আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের জন্য খ্যাত, যে অঞ্চল তার সুফি ঐতিহ্যের জন্য গর্ব করে, সন্ত সংস্কৃতির কথা বলে, সেখানে এই ধরনের কুরুচিকর ঘটনা ঘটে কী করে! সহ্যই বা করা হয় কী করে! যারা পবিত্র রমজান মাসে ওই ধরনের আপত্তিকর ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাদের অবিলম্বে জবাবদিহি করতে হবে।’’

শিবন এবং নরেশের নকশা করা পোশাকে এক মডেল।

শিবন এবং নরেশের নকশা করা পোশাকে এক মডেল। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

গুলমার্গের ওই ফ্যাশন শোয়ের ছবি দেখে সমাজমাধ্যমেও শুরু হয় সমালোচনা। কাশ্মীরের বিশিষ্টরাও ক্ষোভ এবং বিরক্তি প্রকাশ করেন ওই ফ্যাশন শো নিয়ে। অনুষ্ঠানের ভিডিয়ো দিয়ে কেউ কেউ আবার লেখেন, ‘‘রমজান মাসে কাশ্মীরে ওই প্রায় নগ্ন ফ্যাশন শোয়ের কি কোনও প্রয়োজন ছিল?’’ ওই ফ্যাশন পোশাকশিল্পীদ্বয়ের ব্র্যান্ডের সহযোগী ছিল একটি আন্তর্জাতিক পত্রিকা। তারা ফ্যাশন শোয়ের প্রশংসা করে কয়েকটি ভিডিয়োও প্রকাশ করেছিল সমাজমাধ্যমে। এমনকি, ফ্যাশন শো পরবর্তী একটি পার্টির ভিডিয়োও প্রকাশ করেছিল তারা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বরফের রানওয়েতে মডেলরা হাতে পানীয়ের বোতল নিয়ে আনন্দ করছেন। পরে ফ্যাশন শো নিয়ে হইচই শুরু হতেই পত্রিকাটি ওই সমস্ত ভিডিয়ো এবং ছবি মুছে দেয়।

ওই ফ্যাশন শো-কে ‘কুরুচিকর’ বলে সমালোচনা করেছেন কাশ্মীরের মানুষজন।

ওই ফ্যাশন শো-কে ‘কুরুচিকর’ বলে সমালোচনা করেছেন কাশ্মীরের মানুষজন। ছবি: সংগৃহীত।

এর পরেই কাশ্মীরের মানুষের সমর্থন করে ফ্যাশন শো নিয়ে আপত্তি তোলেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর। তিনি বলেন, ‘‘কাশ্মীরের মানুষের ক্ষোভ এবং বিরক্তি যথার্থ। যে সমস্ত ছবি আমি দেখেছি, তাতে স্পষ্ট ওই অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা কাশ্মীরের স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাবাবেগ এবং সংস্কৃতির প্রতি বিন্দুমাত্র সম্মান দেখাননি। আমি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই সংক্রান্ত রিপোর্টও চেয়ে পাঠিয়েছি।’’

বিতর্কের বিপক্ষেও পোস্ট করা হয়েছে।

বিতর্কের বিপক্ষেও পোস্ট করা হয়েছে। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেল।

তবে কাশ্মীরের ফ্যাশন শোয়ের বিতর্ক নিয়ে ভারতের অন্য কিছু রাজ্যের বাসিন্দারা বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন। রাডজ় টকিং নামে এক এক্স (সাবেক টুইটার) ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘‘রমজান তো গোটা দেশেই পালন করা হচ্ছে। তা বলে কি দেশে এখন কোথাও ফ্যাশন শো হচ্ছে না? কাশ্মীর কি কোনও মুসলিম রাষ্ট্র যে সেখানে ফ্যাশন শো বরদাস্ত করা হবে না! যে সংস্থা ওই ফ্যাশন শোয়ের সহযোগী ছিল তারা মিলানের মতো ফ্যাশনের তীর্থক্ষেত্রে ফ্যাশন শোয়ের আয়োজন করে। কাশ্মীরের বরং গর্ব হওয়া উচিত ছিল, যে তারা গোটা বিশ্বের নজরে আসছে।’’

Gulmarg Omar Abdullah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy