জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ দিনের জন্যে প্রস্তুতি শুরু। ঐ দিনই অরণ্য ষষ্ঠী। মানে বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে? ব্রতকথার বইতে লেখা, জামাই ষষ্ঠীরই ভাল নাম অরণ্য ষষ্ঠী। তাই ভয়ঙ্কর গরমের তোয়াক্কা না করে উপহার থেকে মেনু প্ল্যানিং সবই রেডি।
নীল আকাশের নীচে
সূর্যের গনগণে চোখ রাঙানিকে গুনে গুনে তিন গোল দিয়ে একাধিক হ্যাট্রিক করতে পারে এই আসমানি নীল রঙা বরফ ঠান্ডা শরবত। আর নামটাও যে বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা। বাড়িতেও তৈরি করতে পারেন চট করে। উপকরণের বাহুল্য নেই। বানাতে মোটেও বেগ পেতে হয় না। বাড়ির কনিষ্ঠতম সদস্যই চটপট তৈরি করতে পারবে নীল আকাশের নীচে নামক প্রাণ জুড়োন কুল কুল শরবত। দু’গ্লাস নীল আকাশের নীচে বানানোর জন্যে লাগবে আধ কাপ নীল বর্ণের সিরাপ। চাই দু কাপ ভ্যানিলা আইসক্রিম। সিরাপের সঙ্গে আইসক্রিম মিশিয়ে নিয়ে তার ওপর দিন মিহি বরফ কুচি। আর একটা কাজ বাকি। কনকনে ঠান্ডা সেভেন আপ ঢেলে দিলেই রেডি নীল আকাশের নীচে।
মরিচ ঝোল
এ পার ও পার দুই বাঙলাতেই প্রথম পাতে সুক্তো খাওয়ার রেওয়াজ। কৃষ্ণদাস কবিরাজের লেখায় জানা গেছে মহাপ্রভু চৈতন্যদেব হররোজই সুক্তো দিয়ে ভাত খেতেন। তখন থেকেই প্রথম পাতে সুক্তো খাওয়ার ট্রাডিশন শুরু। সেই সুক্তোর রেসিপিতে সামান্য অদল বদল এনে ভজহরি মান্নার শেফ রেঁধেছেন মরিচ ঝোল। এ কালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবুদের মতে সুস্থ নীরোগ দীর্ঘ জীবনের জন্যে প্রত্যেক দিনের মেনুতে পাঁচটা সবজি চাইই চাই। তাই বরবটি, পটল, লাউশাক, ঝিঙের মত আরও কিছু সবজি সহযোগে তৈরি মরিচ ঝোল এক দিকে শরীর ঠান্ডা রাখে, অন্য দিকে অ্যাপেটাইজারের কাজও করে।
উপকরণ
(৪ জনের জন্যে)
পটল: ৪টি
মিষ্টি কুমড়ো: ২০০ গ্রাম
রাঙালু: (মাঝারি )– ২টি
ঝিঙে: ২ টি
বরবটি: ১০০ গ্রাম
বেগুন: ১টা, মাঝারি
কচি লাউশাকের চার পাঁচটা পাতা ও ডগা
বড়ি: ৮টি
কালো জিরে বাটা: ২ চামচ
আদা বাটা: ২ চামচ
কাঁচা লঙ্কা বাটা: ১ চামচ
কাঁচা লঙ্কা চেরা: ৪ টি
ধনে পাতা কুচি: অল্প
দুধ: আধ কাপ
পাঁচ ফোড়ন: ১ চামচ
শুকনো লঙ্কা: ২ টো
নুন, চিনি, হলুদ: দরকার মতো
সর্ষের তেল: ২ বড় চামচ
প্রণালী: সব সবজি লম্বা করে সুক্তোর মত কেটে নিতে হবে। কুমড়ো, পটল, বেগুন বড়ি ভেজে তুলে রাখুন। গরম তেলে পাঁচ ফোড়ন ও শুকনো লঙ্কা দিয়ে সুগন্ধ বেরোলে সব সবজি দিয়ে নুন নিয়ে কিছু ক্ষণ চাপা দিয়ে রাখলেই সবজি আধ সেদ্ধ হয়ে যাবে। এর পর আদাবাটা, হলুদ, সামান্য চিনি দিয়ে অল্প জল দিন। ফুটে উঠলে প্রথমে বড়িভাজা ও পরে দুধে গুলে কালোজিরে ও কাঁচা লঙ্কা বাটা দিয়ে ধনে পাতা ছড়িয়ে নামিয়ে নিন। সাদা ভাতের সঙ্গে দিব্য লাগবে।
আরও পড়ুন: জামাইষ্ঠীতে ভজহরির ভরপুর আহার
মেদিনীপুরী ইলিশ
বাঙালির উৎসবে কয়েকটা ভাল খাবার চাইই চাই। চিংড়ি, মাংস, ইলিশ আর অন্যান্য মাছ ছাড়া কি জমিয়ে খাওয়া সম্ভব! ভাপা, সর্ষে তো অনেক খাওয়া হল। মেদিনীপুরের স্টাইলে ইলিশ রান্না করে সকলকে অবাক করে দিতে পারেন। কোলাঘাট বা দিঘার বড় ইলিশের স্বাদ গঙ্গা পদ্মার ইলিশের সঙ্গে অনায়াসে পাল্লা দিতে পারে। সেই ইলিশের টক ঝাল ঝালদে মন কাড়বেই এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। বিশেষ করে যারা একটু সাবেকী রান্না পছন্দ করেন, তাদের এই পদ রসনাকে সিক্ত করবেই এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়। বেগুন আর ঢ্যাঁড়সের ক্কাথে মজে যাওয়া ইলিশে কাঁচা আমের ফালি এক অন্য রকম স্বাদ এনে দিয়েছে। না খেলে বোঝা মুশকিল। ভাল ইলিশ দিয়ে এই রান্না শশুর জামাই তো বটেই, বাড়ির অন্য সদস্যদেরও পছন্দ হবেই।
উপকরণ
ইলিশ মাছ: ৫ টুকরো (রাউন্ড করে কাটা)
মাঝারি বেগুন: ১ টা (লম্বা ফালি করে কাটা)
ছোট ঢ্যাঁড়স: ১০ টা ( মুখ ফেলে গোটা রাখতে হবে)
নুন, হলুদ: দরকার মতো
পাঁচ ফোড়ন: ১/২ চামচ
সর্ষে বাটা: ২চামচ
কাঁচা লঙ্কা বাটা: ১ চামচ
লঙ্কা: গোটা ২টো
সর্ষের তেল: ৫০ গ্রাম
প্রণালী: মাছ ও সবজি ভাল করে ধুয়ে নিন। কড়াইতে তেল দিয়ে নুন হলুদ মাখানো মাছ হালকা করে ভেজে তুলে রাখুন। লঙ্কা ও পাঁচ ফোড়ন দিয়ে আমের টুকরো ও সব সবজি দিয়ে দিন। এ বার নুন হলুদ ও সর্ষে বাটা দিয়ে সামান্য জল দিয়ে মিনিট দুয়েক চাপা দিয়ে রাখতে হবে। সবজি নরম হলে মাছ দিয়ে আরও মিনিট পাঁচেক ফুটিয়ে কাঁচা তেল ছড়িয়ে নামিয়ে সাদা ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
অনুলিখন: সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি: শুভেন্দু চাকী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy