Advertisement
E-Paper

মনোরোগীদের পুজোর পোশাক বাছাইয়ে কমিটি

পোশাকের রং, নকশা, মাপ সব ঠিক করছেন তাঁরাই। তাঁদের মতামত নিয়েই তৈরি হচ্ছে পুজোর পোশাক। রাজ্যের সরকারি মানসিক হাসপাতালের রোগীদের এই অধিকার তুলে দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। স্রেফ নিয়মরক্ষা নয়, পুজোর দিনগুলিতে সরকারি অর্থের যথার্থ ব্যবহার করে যাতে মনোরোগীদের মুখে হাসি ফোটানো যায়, সে জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:০৯

পোশাকের রং, নকশা, মাপ সব ঠিক করছেন তাঁরাই। তাঁদের মতামত নিয়েই তৈরি হচ্ছে পুজোর পোশাক। রাজ্যের সরকারি মানসিক হাসপাতালের রোগীদের এই অধিকার তুলে দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। স্রেফ নিয়মরক্ষা নয়, পুজোর দিনগুলিতে সরকারি অর্থের যথার্থ ব্যবহার করে যাতে মনোরোগীদের মুখে হাসি ফোটানো যায়, সে জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশের নিরিখেই এই সিদ্ধান্তকে তাৎপর্য্যপূর্ণ বলে মনে করছেন মনোবিদরা। মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন যাঁরা, অথচ বাড়ির লোকেরা ফেরত নিয়ে না যাওয়ায় এখনও যাঁদের হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে, মূলত তাঁরাই ওই সব কমিটিগুলিতে প্রতিনিধিত্ব করছেন।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতাল সুপারদের উপরে বরাবর পোশাক কেনার দায়িত্ব থাকত। তাঁরা আবার সেই দায়িত্ব দিতেন দফতরের কোনও কর্মীকে। মানসিক রোগীদের পোশাক নিয়ে যে বিশেষ ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন সেই বোধটাই কাজ করেনি কারও মনে। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছিল। গত বছর এ নিয়ে বিস্তর গোলমাল হওয়ায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করে স্বাস্থ্য দফতর। আর সেই রিপোর্টে দেখা যায়, মোটা অঙ্কের আর্থিক বরাদ্দ হলেও এই ধরনের আচরণের জন্য সরকারের উদ্যোগটাই ধাক্কা খাচ্ছে।

কী হত আগে? নতুন পোশাক কেনা হত ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে দেখা যেত সেই পোশাক পরে রোগীদের মুখে হাসি ফোটার পরিবর্তে অস্বস্তি কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে। যেমন মহিলাদের জন্য শাড়ি না কিনে শুধুই সালওয়ার কামিজ কেনা হয়েছিল গত বছর। যে মহিলারা জীবনে কোনও দিন সালওয়ার কামিজ পরেননি তাঁরা তা পরতে অস্বীকার করায় জোর করে পরানো হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, সেই সালওয়ার কামিজও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঝুলে ছোট এবং আঁটোসাঁটো। অন্তর্বাসের কোনও ব্যবস্থা ছিল না, সেই অবস্থায় ওই রকম আঁটোসাঁটো পোশাক পরে বাইরে বেরোতে বাধ্য হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন অনেকেই। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি চাই না আমরা।’’

বস্তুত, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মনোরোগীদের পুজোর পোশাক দেওয়ার নামে কার্যত প্রহসন চলেছিল গত কয়েক বছর। গত বছর পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে ওই বেখাপ্পা পোশাক পরে পুজোর দিনে বাইরে বেরোনোর প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছিলেন রোগিণীরা। ঠেকে শিখেই এ বার তাই নতুন নিয়ম হল বলে মনে করছেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।

চলতি বছরে স্থির হয়েছে, পুরুষ রোগীদের জন্য যে পাজামা-পাঞ্জাবি কিংবা শার্ট-প্যান্ট এবং মহিলাদের জন্য শাড়ি-ব্লাউজ কিংবা সালওয়ার-কামিজ কেনা হবে, তার রং, গুণমান আগে থেকেই বাছাই করে নেওয়া হবে। এ জন্য একটি বিশেষ কমিটি তৈরি করা হয়েছে। শুধু হাসপাতালের প্রতিনিধিই নন, ওই কমিটিতে থাকছেন রোগী, তাঁদের বাড়ির লোক, যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করে তাদের সদস্যরা। নিজেদের পোশাকের রং, ডিজাইন ঠিক করে দিচ্ছেন তাঁরাই। স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, এত বছর যে ভুল হয়েছে, তা সংশোধন করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।

কলকাতার পাভলভ, লুম্বিনী পার্ক, ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি এবং বহরমপুর ও পুরুলিয়া
মানসিক হাসপাতালের প্রায় হাজারখানেক রোগীর জন্য পুজোর পোশাক কেনা হয় প্রতি বারই। এই পোশাক সরবরাহ করে মূলত তন্তুজ। প্রত্যেক রোগী বা রোগিণী পিছু গত বছর পর্যন্ত বরাদ্দ ছিল ৬০০ টাকা। এ বার তা বেড়ে হয়েছে ৭০০ টাকা।

এই নতুন ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছেন পাভলভের সুপার গণেশ প্রসাদ, লুম্বিনী পার্ক হাসপাতালের সুপার তপন টিকাদার-সহ সকলেই। তাঁদের বক্তব্য, নতুন ব্যবস্থায় যদি মানসিক রোগীদের মুখে হাসি ফোটানো যায় তা হলে সেটাই হবে সবথেকে বড় পাওয়া। মনোরোগীদের জন্য কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে রত্নাবলী রায় বলেন, ‘‘সরকারি কোনও প্রকল্পে মানসিক রোগীর মতামত নিয়ে কাজ হচ্ছে, এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।’’

Committee mental patient Puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy