Advertisement
E-Paper

হাঁটাহাঁটি তো করেন, কিন্তু ট্রেডমিলে না কি পার্কে? কোনটা উপকারী?

কোনটা বেসি ঘাম ঝরায়? শরীরের পক্ষে কোনটা বেশি উপযোগী জানেন?

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৮:১৮
কোথায় হাঁটেন আর কী ভাবে— তার উপরেই নির্ভর করে শরীরের মজবুতি। ছবি: শাটারস্টক।

কোথায় হাঁটেন আর কী ভাবে— তার উপরেই নির্ভর করে শরীরের মজবুতি। ছবি: শাটারস্টক।

ভাল জুতো পরে ঘাস–মাটির উপর দিয়ে হাঁটা সব চেয়ে ভাল, তাতে কোনও সন্দেহ নেই৷ কিন্তু মাটি আপনি পাবেন কোথায়? সেই তো পার্কের ধার ঘেষে বাঁধানো রাস্তা ধরে হাঁটতে হবে৷ তার চেয়ে কুশনিং করা ট্রেডমিলে হাঁটা ভাল, হাঁটু–কোমরের পক্ষে তো বিশেষ করে৷

অবশ্য পার্কে হাঁটার আরও কিছু সুবিধা আছে৷ প্রথমত প্রাকৃতিক পরিবেশে অনেকের সঙ্গে হাঁটলে যে মানসিক আরাম পাওয়া যায়, ঘরে বা জিমে তা পাওয়া যায় না৷ ভোরের রোদ শরীরে লেগে তৈরি হয় ভিটামিন ডি, যার অভাব আজ ঘরে ঘরে৷ তা ছাড়া ট্রেডমিলের সমতল পাটাতনে এক ভাবে হেঁটে গেলে শরীরের যে যে পেশীর ওয়ার্কআউট হয়, মাঠে হাঁটলে এখানে উঁচু ওখানে নিচু, এখানে-ওখানে এবড়োখেবড়ো— তার সুবাদে পা ও কোমরের পেশীর বেশি উপকার হয়।

যদি গাড়ি–ঘোড়ার প্রবল দূষণ শুরু হয়ে যাওয়ার আগে পৌঁছে যেতে পারেন তবে পার্কে হাঁটার বিকল্প নেই৷ তবে শীতের সকালে বাতাসে দূষিত কণার পরিমাণ বেশি থাকে বলে নাকে রুমাল বা মাস্ক বেঁধে যেতে পারলে ভাল৷ বর্ষাকালে আবার ছাতা নিয়ে বা বর্ষাতি পরে হাঁটি। তখন লক্ষ রাখবেন, পা যেন স্লিপ না করে।

আরও পড়ুন: পছন্দের মানুষটি আদৌ আপনার উপযুক্ত তো? বুঝে নিন এ সব উপায়ে

শরীর-সাস্থ্য নিয়ে এ সব তথ্য আগে জানতেন?

তবে আদতে এত কিছু আমরা করি না৷ শীতের ভোরে লেপ–কম্বলের মায়া ছেড়ে খোলা জায়গায় যাই না, বিশেষ করে ঠান্ডার ধাত থাকলে৷ আকাশে মেঘ ঘনিয়ে এলে বেরোনোর নামে গায়ে জ্বর আসে৷ লেটনাইট হলেও এক ব্যাপার৷ ফলে নিয়মিত হাঁটা হয়ে ওঠে না৷ আর এ দিকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘ব্রিস্ক ওয়াকিং করে হার্ট ভাল রাখতে গেলে সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন হাঁটতে হয়৷ ৬–৭ দিন হাঁটতে পারলে আরও ভাল৷ ওজন–প্রেশার–সুগার বশে রেখে ফিটনেস, মানসিক প্রফুল্লতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চাইলে নিয়মিত নির্দিষ্ট গতিতে হাঁটতে হয়, কম করে ২০–৩০ মিনিট৷ বয়সজনিত ক্ষয়–ক্ষতি কমানো, ব্রেনের কার্যকারিতা বাড়ানো, হাড়–পেশীর সক্ষমতা বাড়ানোরও এক নিয়ম৷’ তা হলে উপায়?

শুভ্রবাবুর মতে, টুকটাক বাজার-দোকান করা বা বাস ধরা, ট্রেন ধরতে যাওয়ার হাঁটাতে কিছু ক্যালোরি খরচ হয় ঠিকই, কতটুকু হাঁটছেন, কী গতিতে হাঁটছেন তার উপর নির্ভর করে ফিটনেসও বাড়ে। তবে হার্ট ও ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে যে ধরনের ব্যায়াম করা দরকার, তা হয় না৷ কারণ যে গতিতে হাঁটলে ঠান্ডার মধ্যেও অল্প ঘাম হয় ও অল্প হাঁপ ধরে, পাশের মানুষের সঙ্গে হাঁপিয়ে হলেও দু’-একটা শব্দ বলা যায়, সেই গতিতে টানা ২০–৩০ মিনিট নিয়মিত হাঁটলে তবে হার্ট ও ফুসফুস মজবুত হয়৷ বাজার করতে করতে কি বাড়ির ছাদে কি এ ভাবে হাঁটা যায়?

আরও পড়ুন: ঘরের ভিতরের দূষিত বায়ু থেকে বাড়ে সংক্রমণ, সুস্থ থাকতে মেনে চলুন এ সব উপায়

তা হলে কি ট্রেডমিল

‘কিন্তু ট্রেডমিলে হাঁটা যে ভাল নয়, শুনেছি হাঁটু–কোমরের ক্ষতি হয়?’

‘নিয়ম মেনে হাঁটলে কিচ্ছু হয় না৷’ জানালেন অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম সাহা৷ আসলে ট্রেডমিলে মোটা এক বেল্টের নিচে থাকে সচল কাঠের বোর্ড৷ এটা শক অ্যাবসর্ভার হিসেবে কাজ করে৷ অর্থাৎ হাঁটু–কোমরের উপর থেকে চাপ কমিয়ে দেয়৷ কাজেই কংক্রিটের মেঝেতে হাঁটলে যত চাপ পড়ে, এতে তার চেয়ে চাপ কম পড়ে৷ পাটাতন চলমান থাকায়ও কিছু সুবিধা হয়৷

তবে এখানে একটা বিষয় ভাবার আছে। আপনি যখন এক পা সামনে এগিয়ে দেন, পরের কদমে তো সেই পায়ের পিছনে যাওয়ার কথা, কিন্তু পাটাতন যেহেতু নিজে থেকে পিছনে যাচ্ছে, আপনাকে আর কষ্ট করে পা পিছোতে হয় না, পাটাতনই তাকে নিয়ে যায় জায়গামতো৷ ফলে হাঁটু–কোমরে চাপ যেমন কম পড়ে, ক্যালোরি খরচও কিন্তু কম হয়৷ কাজেই পার্কে হাঁটা সব সময়ই বেশি ভাল৷

ট্রেডমিলে হাঁটার পূর্ব শর্ত

বয়স ত্রিশ পেরোলে ডাক্তার দেখিয়ে হার্ট, ফুসফুস, রক্তচাপ, হাঁটু, কোমর, পায়ের পাতার গঠন, ফিটনেস, সব ঠিক আছে কি না দেখে, কী ভাবে শুরু করবেন, কী ভাবে ধাপে ধাপে বাড়াবেন, সে সব বুঝে তবে ট্রেডমিল কিনুন বা জিমে নাম লেখান৷ কারণ ট্রেডমিলে আপনাকে পাটাতনের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাঁটতে হবে৷ না বুঝে–শুনে হাঁটতে বা দৌড়াতে শুরু করলে বা আচমকা গতি বাড়িয়ে দিলে সমস্যা হতে পারে৷ হৃদরোগ বা খুব বেশি রক্তচাপ থাকলে বিপদ ঘটে যেতে পারে যখন–তখন৷’ জানালেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ শংকর অমরনাথ৷ হাঁটু–কোমরের উপর অনাবশ্যক চাপ এড়াতে চওড়া পাটাতনের, ভাল কুশনিং আছে এমন ট্রেডমিল কিনুন৷ সময়ের সঙ্গে ট্রেডমিলের কুশনিং খারাপ হতে থাকে৷ কাজেই জিমে যোগ দেওয়ার আগে দেখে নিন তাদের ট্রেডমিলের যথাযথ দেখভাল হয় কি না৷ ফ্ল্যাট ফুট বা হাই আর্চ ফুট থাকলে ডাক্তার দেখিয়ে সমস্যার সমাধান করে, সেই অনুযায়ী জুতো পরে তবে হাঁটা শুরু করুন৷ ব্যালেন্স কম থাকলে ব্যালেন্স বাড়ানোর ব্যায়াম করুন৷ নাহলে চলমান সমতলের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে পড়ে যেতে পারেন৷ কোমর ব্যথা এড়াতে পেট ও কোমরের পেশী সবল করার ব্যায়াম করুন৷ যাকে বলে কোর স্টেবিলিটি ট্রেনিং৷ জোর কদমের মানে এক এক জনের কাছে এক এক রকম৷ ৪–৪.৫ কিমি/ঘণ্টায় হাঁটতে কেউ হাঁপিয়ে যান, কেউ ৫.৫–৬ কিমি/ঘণ্টার নিচে হাঁটেন না৷ লক্ষ্যমাত্রা স্থির করুন নিজের শরীর বুঝে৷ ডাক্তার বা ট্রেনারের পরামর্শ মেনে৷ পিঠ–কোমর সোজা রেখে হাঁটুন৷ স্বাভাবিক হাঁটার সময় হাত যেভাবে দু–পাশে দোল খায়, তেমনভাবেই দোল খাওয়ান, ট্রেডমিলের হাতল ধরে রাখবেন না৷ এতে ক্যালোরি খরচ যেমন কমে যায়, স্বাভাবিক হাঁটার ছন্দ ব্যহত হয় বলে হাঁটু–কোমরেও চাপ বেশি পড়ে৷ যাঁদের হাঁটু বা কোমর ব্যথা আছে, তাঁরাও যদি ডাক্তারের পরামর্শমতো কিছু নিয়ম মেনে হাঁটতে শুরু করেন, ব্যথার প্রকোপ কমবে৷

আরও পড়ুন: চুল পাতলা হয়ে টাক পড়ে যাচ্ছে? তা হলে এ সব কারণকে আর অবহেলা নয়

চাই সঠিক জুতো

ভাল জুতো শক অ্যাবসর্ভার হিসেবে কাজ করে৷ অর্থাৎ হাঁটু–কোমরের উপর বেশি চাপ পড়তে দেয় না৷ কাজেই জুতোর ব্যাপারে কোনও কার্পণ্য নয়৷ কেনার আগে কয়েকটি জিনিস ভাল করে দেখে নিন৷ যেমন–

কুশনিং ও আর্চ সাপোর্ট ঠিকঠাক আছে কি না৷ জুতোর সামনের অংশ বা টো–বক্স মাপসই কি না৷ আধ ইঞ্চির বেশি হিল থাকলে সে জুতো কিনবেন না৷ জুতো যেন পায়ে ভালভাবে ফিট করে৷ জুতো ছিঁড়ে বা ফেটে গেলে বদলে ফেলুন৷ দৌড়োনোর জুতো বদলাতে হয় ফি বছর বা ৮০০ কিলোমিটারের মতো চলার পর৷ বুঝতে অসুবিধা হলে ভাল কোম্পানির ওয়াকিং শু কিনুন৷ দৌড়োতে চাইলে দরকার হবে রানিং শু৷

Health Tips Fitness Tips Walking Tips
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy