—ফাইল চিত্র।
হাতের কাছে রাখা জলের বোতলকে কেউ ভাবতে শুরু করছেন মোবাইল! যা যা কিনে বাড়ি এসেছিলেন, কিছু ক্ষণ পরে ফের বাজারে গিয়ে সেগুলিরই বরাত দিচ্ছেন কেউ। কেউ আবার গান শুনতে শুনতে হঠাৎ কেঁদে ফেলছেন, বাড়ির ঠিকানা বা দুপুরে কী খেয়েছেন মনেই করতে পারছেন না। কেউ আবার আসল খবর না জেনেই হাসপাতালে শুয়ে বাড়ির লোককে ফোন করে বলছেন,‘‘আমার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। ডাক্তাবাবুরা বলেছেন!’’শুধু ফুসফুস বা হৃদ্যন্ত্র নয়, গত কয়েক মাসে রোগীর মস্তিষ্কেও এমনই দাপট দেখাচ্ছে করোনাভাইরাস। চিকিৎসকেরা যাকে বলছেন কোভিড এনকেফ্যালোপ্যাথি। যার জেরে আক্রান্ত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই নিজের পরিচিতি বা পারিপার্শ্বিক প্রায় ভুলতে বসছেন রোগী। সর্বক্ষণ থাকছে ঝিমুনি ভাব। অনেক ক্ষেত্রে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর মস্তিষ্কেও প্রভাব ফেলছে এই কোভিড এনকেফ্যালোপ্যাথি। যা থেকে রক্ষা পাননি স্বয়ং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও। শিল্পীর মৃত্যুর পরে তাঁর মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কোভিড এনকেফ্যালোপ্যাথিই আরও জটিল করে তুলেছিল বর্ষীয়ান অভিনেতার শারীরিক অবস্থা।
এসএসকেএম হাসপাতালের শাখা, বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেসের চিকিৎসক বিমানকান্তি রায় জানাচ্ছেন, এনকেফ্যালন-এর অর্থ মস্তিষ্ক। আর প্যাথজ় অর্থাৎ অসুখ। যার অর্থ, মস্তিষ্কের অসুখ এনকেফ্যালোপ্যাথি। তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন কারণে এটা হতে পারে। ধরা যাক, টিউমারের জন্য কারও মস্তিষ্কের প্রেসার বেড়ে গেল, সেখানে চোট লাগল বা স্ট্রোক হল। মস্তিষ্কের যে কোনও ধরনের গঠনগত বদলকেই এ ক্ষেত্রে ধরা যেতে পারে। ভাইরাল ইনফেকশন মস্তিষ্কে পৌঁছলেও এমন হতে পারে।’’ বিমানবাবু আরও বলেন, ‘‘কিছু রোগের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সদ্য তৈরি হওয়া সেই অ্যান্টিবডি বহু ক্ষেত্রে রোগীর কোষগুলিকে অপরিচিত ভাবতে শুরু করে। করোনার ক্ষেত্রেও শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সেই অ্যান্টিবডি মস্তিষ্কের কোষকে অপরিচিত মনে করে আঘাত করতে শুরু করলেই হয় মুশকিল। এক হতে পারে, কোভিড সরাসরি মস্তিষ্কে আঘাত করছে। অথবা অ্যান্টিবডি মস্তিষ্কে আঘাত করে এনকেফ্যালোপ্যাথি তৈরি করছে।’’
বক্ষরোগ চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগীও বলেন, ‘‘মাত্র চার দিনের জ্বরে ভোগা রোগীর ক্ষেত্রেও দেখছি, সদ্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েই কোভিড এনকেফ্যালোপ্যাথির লক্ষণ। সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ কয়েক দিন হাসপাতালে কাটিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু দিন দুয়েক পরেই দেখা গেল, তিনি অসংলগ্ন আচরণ করছেন। সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে নামতে হবে, তা-ও বুঝতে পারছিলেন না। প্রাথমিক পর্যায়ে হলেও তাঁর মধ্যেও একই লক্ষণ।’’ চিকিৎসক কুণাল সরকারের বক্তব্য, ‘‘কোভিডের মূল নজর ছিল ফুসফুসে। এখন দেখছি, সরাসরি মস্তিষ্কেও তা আঘাত করছে। সেরে ওঠা বহু লোক মানসিক নানা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ছেন।’’
আরও পড়ুন: টিকা প্রস্তুতি: মোদী-মমতা মুখোমুখি কাল, ক্ষোভ জানাতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী
তা হলে উপায়? বিমানকান্তিবাবু জোর দিচ্ছেন যথাযথ পরীক্ষার উপরে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যে যে কারণে এনকেফ্যালোপ্যাথি হওয়া সম্ভব, সেগুলি সব পরীক্ষা করে তবেই কোনও লক্ষণকে কোভিড এনকেফ্যালোপ্যাথি বলা উচিত। যে হেতু এর কোনও বিধিবদ্ধ চিকিৎসা এখনও নেই, তাই কোভিড এনকেফ্যালোপ্যাথির নামে পুরোটা ছেড়ে দিলে রোগীর সার্বিক চিকিৎসা না-ও হতে পারে।’’ অনির্বাণবাবুও বলেন, ‘‘বয়স্কদের উপরে এর প্রভাব সব চেয়ে বেশি পড়ছে। সরাসরি কিছুই নেই, প্লাজ়মা ফেরেসিস বা রক্তরস বদল জাতীয় চিকিৎসাগুলিই এই ক্ষেত্রে সম্বল।’’
আরও পড়ুন: অ্যান্টিবডি-থেরাপিতে অনুমোদন আমেরিকার
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের পরামর্শ, ‘‘স্নায়ুর প্রতিও করোনাভাইরাস সমান আকৃষ্ট হচ্ছে। চিকিৎসা যা চলার তো চলবেই, এই পরিস্থিতে কেয়ারগিভারের গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁরা যেন পাশে থাকেন, সেটা নিশ্চিত করতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy