Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
foods

করোনা রুখতে এ সব খাবার এড়িয়ে চলুন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমলেই বিপদ!

এ সব খেলে শরীরে যে ক্ষতি হয়, তার হাত ধরে চওড়া হয় জীবাণু সংক্রমণের রাস্তা। রোগের জটিলতাও বাড়ে।

খাবার পাতে ভুলেও ভুল নয়। ছবি: শাটারস্টক।

খাবার পাতে ভুলেও ভুল নয়। ছবি: শাটারস্টক।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২০ ১৭:১৭
Share: Save:

করোনাভাইরাস যে ভাবে জাঁকিয়ে বসেছে, সাবধান হয়ে চলা ছাড়া আর কিছু করার নেই এখন। বাইরের সাবধানতার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও চাঙ্গা করে তুলতে হবে। যার অন্যতম রাস্তা ঠিক খাবার খাওয়া এবং বেঠিক খাবার যথাসম্ভব বর্জন করা।

বেঠিক খাবারের মধ্যে আছে নিয়মিত হারে নরম পানীয়, প্যাকেটের ফলের রস, কফি ও অন্যান্য ক্যাফিনসমৃদ্ধ খাবার, মিষ্টি-চকোলে-কেক-পেস্ট্রি, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই-চিকেন উইং তথা অন্যান্য ছাঁকা তেলে/ঘিয়ে ভাজা খাবার, অ্যালকোহল ইত্যাদি খাওয়া। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, নিয়মিত এ সব খেলে শরীরে যে ক্ষতি হয়, তার হাত ধরে চওড়া হয় জীবাণু সংক্রমণের রাস্তা। রোগের জটিলতাও বাড়ে।

নরম ও মিষ্টি পানীয়: পানীয়র আগে ‘ডায়েট’ লেখা থাকলে অনেকে খুব স্বস্তি বোধ করেন। উপাদানের তালিকায় নানা রকম ভিটামিন-মিনারেলের নাম থাকলে তো কথাই নেই। কিন্তু সত্যিই কি সে সব খেলে উপকার হয়?

আরও পড়ুন: আনলক-১ পর্বে করোনা থেকে কী ভাবে দূরে থাকবেন? জানালেন বিশেষজ্ঞরা

হরমোন বিশেষজ্ঞ সতীনাথ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘১০০ শতাংশ ফলের রস লেখা বোতল বা টেট্রাপ্যাকটিকেও ব্রাত্য করে দিন। কারণ গোটা ফল চিবিয়ে খেলে শরীরে সুগার ঢোকে ধীরে ধীরে, সঙ্গে থাকে ছিবড়ে বা ফাইবার। ফলে শরীর সুগারকে খুব ভাল ভাবে সামলে নিতে পারে। নানা উপকারও হয়। কিন্তু ফলের রস খেলে একসঙ্গে অনেকটা সুগার শরীরে চলে আসে বলে স্বাস্থ্যকর উপায়ে তাকে সামলাতে হিমশিম খায় শরীর। বেশির ভাগ সময় পারে না। ফলে যাঁরা নিয়মিত বেশি করে ফলের রস খান, তাঁদের ওজন যেমন বাড়ে, বাড়ে ডায়াবিটিস ও মেটাবলিক সিনড্রোম নামে সমস্যাও। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে ও করোনা সংক্রমণ হলে তার জটিলতার মূলে এই সমস্যাগুলির বড় হাত আছে।”

প্যাকেটের ফলের রসে বিপদ আরও বেশি। কারণ তাতে মেশানো থাকে কৃত্রিম রং, গন্ধ, সংরক্ষক, যার কোনওটাই শরীরের জন্য ভাল নয়। নরম পানীয়র কথা তো আর কিছু বলারই নেই। পুষ্টিহীন কিছু ক্যালোরি শরীরে ঢোকে। তার হাত ধরে হাজারো রোগের রমরমা যেমন হয়, ক্ষতি হয় রোগ প্রতিরোধ শক্তিরও।

অতএব, প্যাকেটজাত সব রকম পানীয় বর্জন করুন। ফলের রস খেতে ইচ্ছে হলে মাঝেমধ্যে ছোট এক গ্লাস খান। আরও ভাল হয় যদি রসের বদলে স্মুদি খেতে পারেন।

কফি ও ক্যাফিনসমৃদ্ধ খাদ্য ও পানীয়: সকালে যাঁদের কফি না খেলে ঘুম কাটে না, তাঁরা অবশ্যই খাবেন। দুপুরে কাজের মাঝে আর এক কাপ চলতে পারে। তার পর আর নয়। চিনি বা সুগার-ফ্রি মিশিয়ে তো নয়ই। কারণ দুটিই ক্ষতিকর। তা ছাড়া অতিরিক্ত কফি বা ক্যাফিনসমৃদ্ধ খাদ্য বা পানীয় খেলে শরীরে কর্টিজোল হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তছনছ করে দিতে যার বিরাট ভূমিকা। বিকেলের পর খেলে রাতের ঘুম বরবাদ হয় অনেকের। তাতেও ভেঙে পড়ে প্রতিরোধ ক্ষমতা। অতএব বেশি কফি চলবে না, চলবে না কোলা পানীয়ও। চা ও চকোলেটের উপযোগিতা থাকলেও, বেশি খেতে শুরু করলে ক্যাফিনের কারণে শেষপর্যন্ত ক্ষতিই হয়।

আরও পড়ুন: ফের অবস্থান বদলে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারে মান্যতা দিল ‘হু’

মিষ্টি-চিনি-কেক-পেস্ট্রি: দিনে একটা মিষ্টি না খেলে অনেকের মন ভরে না। চা-কফিতে চিনি খান অনেকেই। কেক-পেস্ট্রি বা চকোলেট-টফি খাওয়া কারও কাছে নেশার মতো। কিন্তু সমস্যা হল, চিনির কোনও গুণ নেই। ময়দা-ঘি-মাখনের সঙ্গে যুক্ত হলে তা আরও নির্গুণ হয়, ক্ষতিও হয় বেশি। প্রদাহের প্রবণতা বেড়ে যায়। পাল্লা দিয়ে কমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। বেশি মিষ্টি খেলে ওজন বাড়ে। বাড়ে ডায়াবিটিস বা মেটাবলিক সিনড্রোমের আশঙ্কা। এগুলিও কোভিডের জন্য সমান তালে ক্ষতিকর।

অতএব, চিনি বর্জন করুন। তবে তার বদলে কৃত্রিম চিনি খাবেন না, কারণ তা আরও ক্ষতিকর। চিনি-ময়দা-ঘি/মাখনে বানানো খাবার যত কম খাবেন তত ভাল। না খেলে আরও ভাল। তার বদলে খান ফ্রুট স্যালাড, খেজুর। অল্প কিশমিশও খেতে পারেন।

চপ-কাটলেট-ভাজাভুজি: বিকেলে মুড়ি যেমন খাচ্ছেন, খান। তেলেভাজাটা কেবল বাদ দিন। রেস্তোরাঁ খুলছে বলে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই-চিকেন উইং বা ফ্রায়েড চিকেন অর্ডার করে বসবেন না। ঘরেও ভাজাভুজি খাওয়া কমান। কারণ ডুবো তেলে ভাজা খাবারে প্রচুর নুন থাকে। নুনের ধর্ম হল শরীরে জল ধরে রাখা ও উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা থাকলে তা বাড়িয়ে দেওয়া। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে দুইয়েরই বড় ভূমিকা আছে।

ভূমিকা আছে ট্রান্স ফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটের, এ সব খাবারে যা প্রচুর থাকে। অন্ত্রে যে সব উপকারি জীবাণু আছে, তাদের ভারসাম্য নষ্ট করে এরা। তার হাত ধরে কমে প্রতিরোধ ক্ষমতা। ক্ষতি আছে আরও। নিয়মিত ভাজা খেলে ওজন বাড়ে। বাড়তে পারে কোলেস্টেরল, ডায়াবিটিস ও হৃদরোগের আশঙ্কা। কোভিডের জটিলতার মূলে এদের বড় হাত আছে।

অ্যালকোহল: এর বেলাতেও তাই। একেবারে বাদ দিতে পারলেই ভাল। বাড়াবাড়ি করলেই কোভিডের যত কো-মর্বিডিটি আছে, ওবেসিটি, ডায়াবিটিস, হৃদরোগ, সবের আশঙ্কা বাড়ে। কমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। মাঝেমধ্যে বেশি খেলেও নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগের আশঙ্কা বাড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE