Advertisement
E-Paper

করোনা –আতঙ্কে দাঁতের চিকিৎসায় দেরি করছেন? বিপদ বাড়ছে না তো?

করোনা-আতঙ্কের মধ্যেও দাঁতকে অবহেলা নয়। কী ভাবে করাবেন চিকিৎসা?

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২০ ১৮:৫৫
কোভিডের ভয়ে দাঁতকে অবহেলা নয়। ফাইল চিত্র।

কোভিডের ভয়ে দাঁতকে অবহেলা নয়। ফাইল চিত্র।

কোভিডের আতঙ্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মুখ ও দাঁতের বড় সমস্যাতেও টুকটাক ওষুধ, মাউথওয়াশ, গরম সেঁক, লবঙ্গ তেল ইত্যাদির সাহায্যে দিন কাটাচ্ছেন মানুষ। কারণ একটাই, মারক এই ভাইরাস ঢোকে নাক-মুখ দিয়ে, আর সেই মুখের ভিতরেই যন্ত্রপাতি দিয়ে খোঁচাখুঁচি হবে, ডাক্তার-নার্স ঝুঁকে থাকবেন মুখের উপর, চিকিৎসা করাতে এসে শেষপর্যন্ত যদি ভাইরাস ঢুকে যায়! এই আশঙ্কা কি একেবারে অমূলক? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

ওরাল ও ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জেন শিবালিক মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “ডাক্তার-নার্স, সবাই আজকাল কাজের সময় দুটো করে মাস্ক ও ফেসশিল্ড পরেন। কারণ চিকিৎসা চলাকালীন রোগীর মুখে জল স্প্রে করতে হয়। সেই জল লালার সঙ্গে মিশে অ্যারোসল তৈরি করে হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে রোগীর যদি করোনা সংক্রমণ থাকে ডাক্তার-নার্সের বিপদ, কিন্তু উল্টোটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’’

তিনি বলছেন,‘‘যন্ত্রপাতিও ভালভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয়। কাজেই কোভিডের ভয় নেই। কিন্তু যে রোগ চেপে রাখছেন, তা থেকে বিপদ হতে পারে।কাজেই চেম্বারে না আসতে পারলে ডাক্তারের সঙ্গে ফোনে কথা বলুন। কীভাবে চলতে হবে, তিনি বলে দেবেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর কখন অপেক্ষা করা যাবে আর কখন যাবে না, তা-ও জানিয়ে দেবেন।”

আরও পড়ুন: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে জল, এই সব উপাদান পানীয়তে মিশিয়ে করোনাকে দূরে রাখুন

ফোনেই সমাধান

• অসহ্য দাঁতব্যথায় খান প্যারাসিটামল ৬৫০। ক্লোরহেক্সিডিন মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করুন দিনে দু’বার।

• রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট করার পর দাঁতে যে ক্রাউন বসানো হয়, তা ঢিলে হয়ে গেলে খুলে ফেলার চেষ্টা করুন। নাহলে গলায় গিয়ে বিপত্তি বাঁধাতে পারে। ডাক্তার দেখানোর আগে পর্যন্ত ওই দাঁতে খাবার চেবাবেন না।

• নকল দাঁত ঢিলে হয়ে গেলে খুলে ক্লোরহেক্সিডিন মাউথওয়াশে ডুবিয়ে রাখুন। খোঁচা লেগে গাল কাটলে সাবধান। এ রকম ক্ষত থেকেই পরে ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়ে।

• যাঁরা উঁচু-নিচু দাঁত ঠিক করার জন্য ব্র্যাকেট বা ব্রেসেস পরেন, বেশ কিছুদিন ফলোআপ না হলে তাঁদেরও গাল-মাড়ি কাটে। তখন মেডিক্যাল ওয়্যাক্স লাগিয়ে অবস্থা সামলাতে হয়।

• মুখে ঘা হলে বিড়ি-সিগারেট-গুটখা-মৌড়ি-সুপুরি, সব বন্ধ করুন। ঝাল, তেলমশলাও বাদ দিন। তামাকের নেশা থাকলে ঘায়ের চিকিৎসা করান ভাল করে।

• মুখের ভিতরের পুরনো কোনও সেলাইয়ে ব্যথা হলে ক্লোরহেক্সিডিন মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করুন দিনে দু’বার। অ্যান্টিসেপটিক মলম লাগান ডাক্তারের পরামর্শমতো।

• মাড়ি ফুলে গেলেও ক্লোরহেক্সিডিন মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করুন দিনে দু’বার।

“এই সব নিয়মে সমস্যা কমলেও পরে সময়মতো ডাক্তার দেখিয়ে নিন। নাহলে বিপদ হতে পারে।” জানালেন শিবালিক মুখোপাধ্যায়।

ব্রাশ করার পদ্ধতির উপরেও দাঁতের যত্ন নেওয়া নির্ভর করে। ছবি: শাটারস্টক।

দেরির বিপদ

• দাঁতের ক্ষয়ে সংক্রমণের ব্যথা মাউথ ওয়াশ ও ওষুধে কমে গেলেও চিকিৎসা করান। নাহলে পরে সেই দাঁত তুলে ফেলতে হবে। ক্ষতি হবে দু-পাশের দাঁতেও।

• আক্কেল দাঁতের ব্যথায় অযথা কষ্ট না পেয়ে সময়মতো তুলে ফেলা ভাল।

• রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট হয়েছে যে দাঁতে, তাতে ব্যথা হলে ভাল করে চিকিৎসা করান। নাহলে পরে দাঁত তুলে ফেলতে হতে পারে। সংক্রমণ ছড়ালেও বিপদ।

• মুখে ঘা হলে অনেকে দিনের পর দিন ভিটামিন খান। আর চিকিৎসার অভাবে রোগ ক্যান্সারের দিকে চলে যায় কখনও। বিশেষ করে যাঁদের তামাক বা অন্য কিছু চেবানোর অভ্যাস আছে।

• দাঁতের খোঁচায় মুখে ঘা হলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে দাঁতটা ঘষিয়ে নিন। না হলে বড় বিপদের আশঙ্কা আছে।

• মাড়ি ফুলে ব্যথা হওয়া ভাল লক্ষণ নয়। ব্যথা কমে গেলেও রোগের কারণ খুঁজে চিকিৎসা করতে হবে।

আরও পড়ুন: দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ কমিয়ে দেয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, এ সব খাবারে টেনশন সরিয়ে সুস্থ থাকুন

এমারজেন্সি সমস্যা

কিছু সমস্যা আছে যেখানে একটুও দেরি করা বাঞ্ছনীয় নয়। যেমন—

• দাঁত থেকে সমানে রক্ত পড়লে রক্ত বন্ধ করার ওষুধ খেয়ে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান। চেম্বার খোলা না পেলে হাসপাতালের এমারজেন্সিতে যেতে হতে পারে।

• নীচের পাটির দাঁতের সংক্রমণের রেশে সেই দিকের গলা ফুলতে শুরু করলে প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়তে পারে। দ্রুত ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জেনের শরণাপন্ন হন।

• মুখে আঘাত লেগে দাঁত ভাঙলে ভাঙা দাঁতটা নিজের থুতু বা ঠান্ডা দুধে ডুবিয়ে ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জেনের কাছে যান। যত দ্রুত যাবেন, তত বেশি সম্ভাবনা যে দাঁত আবার যথাস্থানে বসে যাবে।

• চোয়াল, নাক, চোখের নীচের হাড় ভাঙলে খুব তাড়াতাড়ি অপারেশন করে না নিলে ভাঙা হাড় বাঁকা হয়ে জুড়তে পারে। আবার না-ও জুড়তে পারে। ফলে মুখের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে জীবনের মতো। কখনও ম্যানিঞ্জাইটিস হতে পারে। চোখের নীচের ভাঙা হাড় সময়মতো ঠিক না করলে ডাবল ভিশন হয় অনেক সময়। ফলে সমস্যা হওয়ামাত্র ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জেনের পরামর্শ নিন।

Dental coronavirus Covid-19 Dentist
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy